দেখে যা, দেখে
Songs
     দেখে যা, দেখে যা দেখে যা লো তোরা   সাধের কাননে মোর
আমার   সাধের কুসুম উঠেছে ফুটিয়া,   মলয় বহিছে সুরভি লুটিয়া রে--
হেথায়   জোছনা ফুটে,   তটিনী ছুটে,   প্রমোদে কানন ভোর॥
     আয় আয় সখী, আয় লো হেথা,   দুজনে কহিব মনের কথা।
                   তুলিব কুসুম দুজনে মিলি রে--
     সুখে   গাঁথিব মালা,   গণিব তারা,   করিব রজনী ভোর॥
     এ কাননে বসি গাহিব গান,   সুখের স্বপনে কাটাব প্রাণ,
                   খেলিব দুজনে মনের খেলা রে--
     প্রাণে   রহিবে মিশি   দিবসনিশি   আধো-আধো ঘুমঘোর॥
আরো দেখুন
গিন্নি
Stories
ছাত্রবৃত্তি ক্লাসের দুই-তিন শ্রেণী নীচে আমাদের পণ্ডিত ছিলেন শিবনাথ। তাঁহার গোঁফদাড়ি কামানো, চুল ছাঁটা এবং টিকিটি হ্রস্ব। তাঁহাকে দেখিলেই বালকদের অন্তরাত্মা শুকাইয়া যাইত।
প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়, যাহাদের হুল আছে তাহাদের দাঁত নাই। আমাদের পণ্ডিতমহাশয়ের দুই একত্রে ছিল। এ দিকে কিল চড় চাপড় চারাগাছের বাগানের উপর শিলাবৃষ্টির মতো অজস্র বর্ষিত হইত, ও দিকে তীব্র বাক্যজ্বালায় প্রাণ বাহির হইয়া যাইত।
আরো দেখুন
স্বপ্নে দেখি নৌকো আমার
Verses
স্বপ্নে দেখি নৌকো আমার
          নদীর ঘাটে বাঁধা;
নদী কিম্বা আকাশ সেটা
          লাগল মনে ধাঁধাঁ।
               এমন সময় হঠাৎ দেখি,
            দিক্‌সীমানায় গেছে ঠেকি
          একটুখানি ভেসে-ওঠা
                    ত্রয়োদশীর চাঁদা।
          'নৌকোতে তোর পার করে দে'
               এই ব'লে তার কাঁদা।
          আমি বলি, 'ভাবনা কী তায়,
     আকাশপারে নেব মিতায়--
কিন্তু আমি ঘুমিয়ে আছি
        এই যে বিষম বাধা,
দেখছ আমার চতুর্দিকটা
        স্বপ্নজালে ফাঁদা।'
আরো দেখুন
ভক্তি ও অতিভক্তি
Verses
ভক্তি আসে রিক্তহস্ত প্রসন্নবদন--
অতিভক্তি বলে, দেখি কী পাইলে ধন।
ভক্তি কয়, মনে পাই, না পারি দেখাতে।--
অতিভক্তি কয়, আমি পাই হাতে হাতে।
আরো দেখুন
83
Verses
তুমি যে  এসেছ মোর ভবনে
            রব উঠেছে ভুবনে।
নহিলে    ফুলে কিসের রঙ লেগেছে,
            গগনে কোন্‌ গান জেগেছে,
            কোন্‌ পরিমল পবনে?
দিয়ে      দুঃখ-সুখের বেদনা
            আমায় তোমার সাধনা।
আমার    ব্যথায় ব্যথায় পা ফেলিয়া
            এলে তোমার সুর মেলিয়া,
            এলে আমার জীবনে।
আরো দেখুন
জীবিত ও মৃত
Stories
রানীহাটের জমিদার শারদাশংকরবাবুদের বাড়ির বিধবা বধূটির পিতৃকুলে কেহ ছিল না; সকলেই একে একে মারা গিয়াছে। পতিকুলেও ঠিক আপনার বলিতে কেহ নাই, পতিও নাই পুত্রও নাই। একটি ভাশুরপো, শারদাশংকরের ছোটো ছেলেটি, সেই তাহার চক্ষের মণি। সে জন্মিবার পর তাহার মাতার বহুকাল ধরিয়া শক্ত পীড়া হইয়াছিল, সেইজন্য এই বিধবা কাকি কাদম্বিনীই তাহাকে মানুষ করিয়াছে। পরের ছেলে মানুষ করিলে তাহার প্রতি প্রাণের টান আরো যেন বেশি হয়, কারণ তাহার উপরে অধিকার থাকে না; তাহার উপরে কোনো সামাজিক দাবি নাই, কেবল স্নেহের দাবি-- কিন্তু কেবলমাত্র স্নেহ সমাজের সমক্ষে আপনার দাবি কোনো দলিল অনুসারে সপ্রমাণ করিতে পারে না এবং চাহেও না, কেবল অনিশ্চিত প্রাণের ধনটিকে দ্বিগুণ ব্যাকুলতার সহিত ভালোবাসে।
বিধবার সমস্ত রুদ্ধ প্রীতি এই ছেলেটির প্রতি সিঞ্চন করিয়া একদিন শ্রাবণের রাত্রে কাদম্বিনীর অকস্মাৎ মৃত্যু হইল। হঠাৎ কী কারণে তাহার হৃৎস্পন্দন স্তব্ধ হইয়া গেল-- সময় জগতের আর-সর্বত্রই চলিতে লাগিল, কেবল সেই স্নেহকাতর ক্ষুদ্র কোমল বক্ষটির ভিতর সময়ের ঘড়ির কল চিরকালের মতো বন্ধ হইয়া গেল।
আরো দেখুন
82
Verses
তব প্রেমে ধন্য তুমি করেছ আমারে
প্রিয়তম। তবু শুধু মাধুর্য-মাঝারে
চাহি না নিমগ্ন করে রাখিতে হৃদয়।
আপনি যেথায় ধরা দিলে, স্নেহময়,
বিচিত্র সৌন্দর্যডোরে কত স্নেহে প্রেমে,
কত রূপে--সেথা আমি রহিব না থেমে
তোমার প্রণয়-অভিমানে। চিত্তে মোর
জড়ায়ে বাঁধিব নাকো সন্তোষের ডোর।
আমার অতীত তুমি যেথা, সেইখানে
অন্তরাত্মা ধায় নিত্য অনন্তের টানে
সকল বন্ধন-মাঝে-- যেথায় উদার
অন্তহীন শক্তি আর মুক্তির বিস্তার।
তোমার মাধুর্য যেন বেঁধে নাহি রাখে,
তব ঐশ্বর্যের পানে টানে সে আমাকে।
আরো দেখুন
দিদি
Stories
পল্লীবাসিনী কোনো-এক হতভাগিনীর অন্যায়কারী অত্যাচারী স্বামীর দুষ্কৃতিসকল সবিস্তারে বর্ণনপূর্বক প্রতিবেশিনী তারা অত্যন্ত সংক্ষেপে নিজের রায় প্রকাশ করিয়া কহিল, 'এমন স্বামীর মুখে আগুন।'
শুনিয়া জয়গোপালবাবুর স্ত্রী শশী অত্যন্ত পীড়া অনুভব করিলেন-- স্বামীজাতির মুখে চুরটের আগুন ছাড়া অন্য কোনো প্রকার আগুন কোনো অবস্থাতেই কামনা করা স্ত্রীজাতিকে শোভা পায় না।
আরো দেখুন
তে হি নো দিবসাঃ
Verses
এই অজানা সাগরজলে বিকেলবেলার আলো
          লাগল আমার ভালো।
কেউ দেখে কেউ নাই-বা দেখে, রাখবে না কেউ মনে,
এমনতরো ফেলাছড়ার হিসাব কি কেউ গোনে।
এই দেখে মোর ভরল বুকের কোণ;
কোথা থেকে নামল রে সেই খেপা দিনের মন,
            যেদিন অকারণ
হঠাৎ হাওয়ায় যৌবনেরি ঢেউ
ছল্‌ছলিয়ে উঠত প্রাণে জানত না তা কেউ।
          লাগত আমায় আপন গানের নেশা
অনাগত ফাগুন দিনের বেদন দিয়ে মেশা।
সে গান যারা শুনত তারা আড়াল থেকে এসে
        আড়ালেতে লুকিয়ে যেত হেসে।
        হয়তো তাদের দেবার ছিল কিছু,
আভাসে কেউ জানায় নি তা নয়ন করে নিচু।
হয়তো তাদের সারাদিনের মাঝে
পড়ত বাধা একবেলাকার কাজে।
চমক-লাগা নিমেষগুলি সেই
হয়তো বা কার মনে আছে, হয়তো মনে নেই।
জ্যোৎস্নারাতে একলা ছাদের 'পরে
           উদার অনাদরে
কাটত প্রহর লক্ষ্যবিহীন প্রাণে,
           মূল্যবিহীন গানে।
মোর জীবনে বিশ্বজনের অজানা সেই দিন,
বাজত তাহার বুকের মাঝে খামখেয়ালী বীন,--
যেমনতরো এই সাগরে নিত্য সোনায় নীলে
রূপ হারানো রাধাশ্যামের দোলন দোঁহায় মিলে,
যেমনতরো ছুটির দিনে এমনি বিকেলবেলা
দেওয়া নেওয়ার নাই কোনো দায়, শুধু হওয়ার খেলা,
অজানাতে ভাসিয়ে দেওয়া আলোছায়ার ভেলা।
আরো দেখুন
অহো কী দুঃসহ স্পর্ধা
Songs
 অহো, কী দুঃসহ স্পর্ধা !
             অর্জুনে যে করে অশ্রদ্ধা
         সে  কোনখানে পাবে তার আশ্রয় !
      অর্জুন! তুমি অর্জুন !
    হাহা হাহা হাহা হাহা, বালকের দল,
                      মা'র কোলে যাও চলে, নাই ভয়।
                                      অহো কী অদ্ভুত কৌতুক!
            অর্জুন!    তুমি! অর্জুন!
                      ফিরে এসো, ফিরে এসো,
                        ক্ষমা দিয়ে কোরো না অসম্মান,
                                  যুদ্ধে করো আহ্বান!
বীর-হাতে মৃত্যুর গৌরব
                                  করি যেন অনুভব--
                                    অর্জুন!   তুমি অর্জুন!
আরো দেখুন
প্রাণমন
Stories
আমার জানলার সামনে রাঙা মাটির রাস্তা।
ওখান দিয়ে বোঝাই নিয়ে গোরুর গাড়ি চলে; সাঁওতাল মেয়ে খড়ের আঁটি মাথায় করে হাটে যায়, সন্ধ্যাবেলায় কলহাস্যে ঘরে ফেরে।
আরো দেখুন