একটি দিন
Stories
মনে পড়ছে সেই দুপুরবেলাটি। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টিধারা ক্লান্ত হয়ে আসে, আবার দমকা হাওয়া তাকে মাতিয়ে তোলে।
ঘরে অন্ধকার, কাজে মন যায় না। যন্ত্রটা হাতে নিয়ে বর্ষার গানে মল্লারের সুর লাগালেম।
আরো দেখুন
চিত্রকর
Stories
ময়মনসিংহ ইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে আমাদের গোবিন্দ এল কলকাতায়। বিধবা মায়ের অল্প কিছু সম্বল ছিল। কিন্তু, সব-চেয়ে তার বড়ো সম্বল ছিল নিজের অবিচলিত সংকল্পের মধ্যে। সে ঠিক করেছিল, 'পয়সা' করবই, সমস্ত জীবন উৎসর্গ করে দিয়ে।' সর্বদাই তার ভাষায় ধনকে সে উল্লেখ করত 'পয়সা' বলে। অর্থাৎ, তার মনে খুব একটা দর্শন স্পর্শন ঘ্রাণের যোগ্য প্রত্যক্ষ পদার্থ ছিল; তার মধ্যে বড়ো নামের মোহ ছিল না; অত্যন্ত সাধারণ পয়সা, হাটে হাটে হাতে হাতে ঘুরে ঘুরে ক্ষয়ে যাওয়া, মলিন হয়ে যাওয়া পয়সা, তাম্রগন্ধী পয়সা, কুবেরের আদিম স্বরূপ, যা রুপোয় সোনায় কাগজে দলিলে নানা মূর্তি পরিগ্রহ করে মানুষের মনকে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।
নানা বাঁকা পথের ভিতর দিয়ে নানা পঙ্কে আবিল হতে হতে আজ গোবিন্দ তার পয়সাপ্রবাহিণীর প্রশস্তধারার পাকা বাঁধানো ঘাটে এসে পৌঁচেছে। গানিব্যাগ্‌ওয়ালা বড়োসাহেব ম্যাক্‌ডুগালের বড়োবাবুর আসনে তার ধ্রুব প্রতিষ্ঠা। সবাই তাকে নাম দিয়েছিল ম্যাক্‌দুলাল।
আরো দেখুন
মেঘ ও রৌদ্র
Stories
পূর্বদিনে বৃষ্টি হইয়া গিয়াছে। আজ ক্ষান্তবর্ষণ প্রাতঃকালে ম্লান রৌদ্র ও খণ্ড মেঘে মিলিয়া পরিপক্কপ্রায় আউশ ধানের ক্ষেত্রের উপর পর্যায়ক্রমে আপন আপন সুদীর্ঘ তুলি বুলাইয়া যাইতেছিল; সুবিস্তৃত শ্যাম চিত্রপট একবার আলোকের স্পর্শে উজ্জ্বল পাণ্ডুবর্ণ ধারণ করিতেছিল আবার পরক্ষণেই ছায়াপ্রলেপে গাঢ় স্নিগ্ধতায় অঙ্কিত হইতেছিল।
যখন সমস্ত আকাশরঙ্গভূমিতে মেঘ এবং রৌদ্র, দুইটি মাত্র অভিনেতা, আপন আপন অংশ অভিনয় করিতেছিল তখন নিম্নে সংসাররঙ্গভূমিতে কত স্থানে কত অভিনয় চলিতেছিল তাহার আর সংখ্যা নাই।
আরো দেখুন
শেষ পুরস্কার
Stories
সেদিন আই.এ. এবং ম্যাট্রিক ক্লাসের পুরস্কারবিতরণের উৎসব। বিমলা ব'লে এক ছাত্রী ছিল, সুন্দরী ব'লে তার খ্যাতি। তারই হাতে পুরস্কারের ভার। চার দিকে তার ভিড় জমেছে আর তার মনে অহংকার জমে উঠেছে খুব প্রচুর পরিমাণে। একটি মুখচোরা ভালোমানুষ ছেলে কোণে দাঁড়িয়ে ছিল। সাহস করে একটু কাছে এল যেই, দেখা গেল তার পায়ে হয়েছে ঘা, ময়লা কাপড়ের ব্যাণ্ডেজ জড়ানো। তাকে দেখে বিমলা নাক তুলে বললে, 'ও এখানে কেন বাপু, ওর যাওয়া উচিত হাসপাতালে।'
ছেলেটি মন-মরা হয়ে আস্তে আস্তে চলে গেল। বাড়িতে গিয়ে তার স্কুলঘরের কোণে বসে কাঁদছে, জলখাবারের থালা হাতে তার দিদি এসে বললে, 'ও কী হচ্ছে জগদীশ, কাঁদছিস কেন।'
আরো দেখুন
দাঁড়াও, কোথা চলো
Songs
      দাঁড়াও, কোথা চলো, তোমরা কে বলো বলো।
    আমরা আহিরিনী, সারা হল বিকিকিনি--
              দূর গাঁয়ে চলি ধেয়ে আমরা বিদেশী মেয়ে।
           ঘাটে বসে হোথা ও কে।
          সাথী মোদের ও যে নেয়ে--
      যেতে হবে দূর পারে,
            এনেছি তাই ডেকে তারে।
নিয়ে যাবে তরী বেয়ে
সাথী মোদের ও যে নেয়ে--
ওগো প্রহরী,বাধা দিয়ো না, বাধা দিয়ো না,
      মিনতি করি,
            ওগো প্রহরী।
আরো দেখুন
রাজপুত্তুর
Stories
রাজপুত্তুর চলেছে নিজের রাজ্য ছেড়ে, সাত রাজার রাজ্য পেরিয়ে, যে দেশে কোনো রাজার রাজ্য নেই সেই দেশে।
সে হল যে কালের কথা সে কালের আরম্ভও নেই, শেষও নেই।
আরো দেখুন
চণ্ডী
Stories
দিদি, তুমি বোধ হয় ও পাড়ার চণ্ডীবাবুকে জান?
জানি নে! তিনি যে ডাকসাইটে নিন্দুক।
আরো দেখুন
প্রত্যাগত
Verses
দূরে গিয়েছিলে চলি; বসন্তের আনন্দভাণ্ডার
তখনো হয় নি নিঃস্ব; আমার বরণপুষ্পহার
তখনো অম্লান ছিল ললাটে তোমার। হে অধীর,
কোন্‌ অলিখিত লিপি দক্ষিণের উদ্‌ভ্রান্ত সমীর
এনেছিল চিত্তে তব। তুমি গেলে বাঁশি লয়ে হাতে,
ফিরে দেখ নাই চেয়ে আমি বসে আপন বীণাতে
বাঁধিতেছিলাম সুর গুঞ্জরিয়া বসন্তপঞ্চমে,
আমার অঙ্গনতলে আলো আর ছায়ার সংগমে
কম্পমান আম্রতরু করেছিল চাঞ্চল্য বিস্তার
সৌরভবিহ্বল শুক্লরাতে। সেই কুঞ্জগৃহদ্বার
এতকাল মুক্ত ছিল। প্রতিদিন মোর দেহলিতে
আঁকিয়াছি আলিপনা। প্রতিসন্ধ্যা বরণডালিতে
গন্ধতৈলে জ্বালায়েছি দীপ। আজি কতকাল পরে
যাত্রা তব হল অবসান। হেথা ফিরিবার তরে
হেথা হতে গিয়েছিলে। হে পথিক, ছিল এ লিখন--
আমারে আড়াল করে আমারে করিবে অন্বেষণ;
সুদূরের পথ দিয়ে নিকটেরে লাভ করিবারে
আহ্বান লভিয়াছিলে সখা। আমার প্রাঙ্গণদ্বারে
যে পথ করিলে শুরু সে পথের এখানেই শেষ।
হে বন্ধু, কোরো না লজ্জা, মোর মনে নাই ক্ষোভলেশ,
নাই অভিমানতাপ। করিব না ভর্ৎসনা তোমায়;
গভীর বিচ্ছেদ আজি ভরিয়াছি অসীম ক্ষমায়।
আমি আজি নবতর বধূ, আজি শুভদৃষ্টি তব
বিরহগুণ্ঠনতলে দেখে যেন মোরে অভিনব
অপূর্ব আনন্দরূপে, আজি যেন সকল সন্ধান
প্রভাতে নক্ষত্রসম শুভ্রতায় লভে অবসান।
আজি বাজিবে না বাঁশি, জ্বলিবে না প্রদীপের মালা,
পরিব না রক্তাম্বর; আজিকার উৎসব নিরালা
সর্ব-আভরণহীন। আকাশেতে প্রতিপদ-চাঁদ
কৃষ্ণপক্ষ পার হয়ে পূর্ণতার প্রথম প্রসাদ
লভিয়াছে। দিক্‌প্রান্তে তারি ওই ক্ষীণ নম্র কলা
নীরবে বলুক আজি আমাদের সব কথা বলা।
আরো দেখুন
বিদায়
Verses
অকূল সাগর-মাঝে চলেছে ভাসিয়া
জীবনতরণী। ধীরে লাগিছে আসিয়া
তোমার বাতাস, বহি আনি কোন্‌ দূর
পরিচিত তীর হতে কত সুমধুর
পুষ্পগন্ধ, কত সুখস্মৃতি, কত ব্যথা,
আশাহীন কত সাধ, ভাষাহীন কথা।
সম্মুখেতে তোমারি নয়ন জেগে আছে
আসন্ন আঁধার-মাঝে অস্তাচল-কাছে
স্থির ধ্রুবতারাসম; সেই অনিমেষ
আকর্ষণে চলেছি কোথায়, কোন্‌ দেশ
কোন্‌ নিরুদ্দেশ-মাঝে! এমনি করিয়া
চিহ্নহীন পথহীন অকূল ধরিয়া
দূর হতে দূরে ভেসে যাব-- অবশেষে
দাঁড়াইব দিবসের সর্বপ্রান্তদেশে
এক মুহূর্তের তরে; সারাদিন ভেসে
মেঘখণ্ড যথা, রজনীর তীরে এসে
দাঁড়ায় থমকি। ওগো, বারেক তখন
জীবনের খেলা রেখে করুণ নয়ন
পাঠায়ো পশ্চিম-পানে, দাঁড়ায়ো একাকী
ওই দূর তীরদেশে অনিমেষ আঁখি।
মুহূর্তে আঁধার নামি দিবে সব ঢাকি
বিদায়ের পথ; তোমার অজ্ঞাত দেশে
আমি চলে যাব; তুমি ফিরে যেয়ো হেসে
সংসারের খেলাঘরে, তোমার নবীন
দিবালোকে। অবশেষে যবে একদিন--
বহুদিন পরে-- তোমার জগৎ-মাঝে
সন্ধ্যা দেখা দিবে, দীর্ঘ জীবনের কাজে
প্রমোদের কোলাহলে শ্রান্ত হবে প্রাণ,
মিলায়ে আসিবে ধীরে স্বপন-সমান
চিররৌদ্রদগ্ধ এই কঠিন সংসার,
সেইদিন এইখানে আসিয়ো আবার;
এই তটপ্রান্তে বসে শ্রান্ত দু'নয়ানে
চেয়ে দেখো ওই অস্ত-অচলের পানে
সন্ধ্যার তিমিরে, যেথা সাগরের কোলে
আকাশ মিশায়ে গেছে। দেখিবে তা হলে
আমার সে বিদায়ের শেষ চেয়ে-দেখা
এইখানে রেখে গেছে জ্যোতির্ময় রেখা।
সে অমর অশ্রুবিন্দু সন্ধ্যাতারকার
বিষণ্ণ আকার ধরি উদিবে তোমার
নিদ্রাতুর আঁখি-'পরে; সারা রাত্রি ধরে
তোমার সে জনহীন বিশ্রাম-শিয়রে
একাকী জাগিয়া রবে। হয়তো স্বপনে
ধীরে ধীরে এনে দেবে তোমার স্মরণে
জীবনের প্রভাতের দু-একটি কথা।
এক ধারে সাগরের চিরচঞ্চলতা
তুলিবে অস্ফুট ধ্বনি, রহস্য অপার;
অন্য ধারে ঘুমাইবে সমস্ত সংসার।
আরো দেখুন
সদর ও অন্দর
Stories
বিপিনকিশোর ধনীগৃহে জন্মিয়াছিলেন, সেইজন্যে ধন যে পরিমাণে ব্যয় করিতে জানিতেন তাহার অর্ধেক পরিমাণেও উপার্জন করিতে শেখেন নাই। সুতরাং যে গৃহে জন্ম সে গৃহে দীর্ঘকাল বাস করা ঘটিল না।
সুন্দর সুকুমারমূর্তি তরুণ যুবক, গানবাজনায় সিদ্ধহস্ত, কাজকর্মে নিরতিশয় অপটু; সংসারের পক্ষে সম্পূর্ণ অনাবশ্যক। জীবনযাত্রার পক্ষে জগন্নাথদেবের রথের মতো অচল; যেরূপ বিপুল আয়োজনে চলিতে পারেন সেরূপ আয়োজন সম্প্রতি বিপিনকিশোরের আয়ত্তাতীত।
আরো দেখুন