সান্ত্বনা
Verses
সকালের আলো এই বাদলবাতাসে
                 মেঘে রুদ্ধ হয়ে আসে
           ভাঙা কণ্ঠে কথার মতন।
                    মোর মন
           এ অস্ফুট প্রভাতের মতো
      কী কথা বলিতে চায়, থাকে বাক্যহত।
              মানুষের জীবনের মজ্জায় মজ্জায়
      যে-দুঃখ নিহিত আছে অপমানে শঙ্কায় লজ্জায়,
                কোনো কালে যার অস্ত নাই,
                      আজি তাই
      নির্যাতন করে মোরে। আপনার দুর্গমের মাঝে
           সান্ত্বনার চির-উৎস কোথায় বিরাজে,
      যে উৎসের গূঢ় ধারা বিশ্বচিত্ত-অন্তঃস্তরে
                 উন্মুক্ত পথের তরে
                       নিত্য ফিরে যুঝে
               আমি তারে মরি খুঁজে।
                       আপন বাণীতে
               কী পুণ্যে বা পারিব আনিতে
      সেই সুগম্ভীর শান্তি, নৈরাশ্যের তীব্র বেদনারে
           স্তব্ধ যা করিতে পারে।
                 হায় রে ব্যথিত,
      নিখিল-আত্মার কেন্দ্রে বাজে অকথিত
      আরোগ্যের মহামন্ত্র, যার গুণে
                 সৃজনের হোমের আগুনে
      নিজেরে আহুতি দিয়া নিত্য সে নবীন হয়ে উঠে, --
      প্রাণেরে ভরিয়া তুলে নিত্যই মৃত্যুর করপুটে।
           সেই মন্ত্র শান্ত মৌনতলে
      শুনা যায় আত্মহারা তপস্যার বলে।
           মাঝে-মাঝে পরম বৈরাগী
      সে-মন্ত্র চেয়েছে দিতে সর্বজন লাগি।
              কে পারে তা করিতে বহন,
           মুক্ত হয়ে কে পারে তা করিতে গ্রহণ।
              গতিহীন আর্ত অক্ষমের তরে
      কোন্‌ করুণার স্বর্গে মন মোর দয়া ভিক্ষা করে
                     ঊর্ধ্বে বাহু তুলি।
      কে বন্ধু রয়েছ কোথা, দাও দাও খুলি
                       পাষাণকারার দ্বার --
           যেথায় পুঞ্জিত হল নিষ্ঠুরের অত্যাচার,
                    বঞ্চনা লোভীর,
                 যেথায় গভীর
      মর্মে উঠে বিষাইয়া সত্যের বিকার
                 আমিত্ববিমুগ্ধ মন যে দুর্বহ ভার
      আপনার আসক্তিতে জমায়েছে আপনার 'পরে,
      নির্মম বর্জনশক্তি দাও তার অন্তরে অন্তরে।
                 আমার বাণীতে দাও সেই সুধা
      যাহাতে মিটিতে পারে আত্মার গভীরতম ক্ষুধা।
           হেনকালে সহসা আসিল কানে
      কোন্‌ দূর তরুশাখে শ্রান্তিহীন গানে
                       অদৃশ্য কে পাখি
           বার বার উঠিতেছে ডাকি।
      কহিলাম তারে, "ওগো, তোমার কণ্ঠেতে আছে আলো,
                       অবসাদ-আঁধার ঘুচাল।
                     তোমার সহজ এই প্রাণের প্রোল্লাস
                       সহজেই পেতেছে প্রকাশ।
         আদিম আনন্দ যাহা এ বিশ্বের মাঝে,
           যে আনন্দ অন্তিমে বিরাজে,
           যে পরম আনন্দলহরী
      যত দুঃখ যত সুখ নিয়েছে আপনা-মাঝে হরি,
          আমারে দেখালে পথ তুমি তারি পানে
                 এই তব অকারণ গানে।'
আরো দেখুন
পরীর পরিচয়
Stories
রাজপুত্রের বয়স কুড়ি পার হয়ে যায়, দেশবিদেশ থেকে বিবাহের সম্বন্ধ আসে।
ঘটক বললে, 'বাহ্লীকরাজের মেয়ে রূপসী বটে, যেন সাদা গোলাপের পুষ্পবৃষ্টি।'
আরো দেখুন
ঘরে বাইরে
Novels
মা গো, আজ মনে পড়ছে তোমার সেই সিঁথের সিঁদুর, চওড়া সেই লাল-পেড়ে শাড়ি, সেই তোমার দুটি চোখ-- শান্ত, স্নিগ্ধ, গভীর। সে যে দেখেছি আমার চিত্তাকাশে ভোরবেলাকার অরুণরাগরেখার মতো। আমার জীবনের দিন যে সেই সোনার পাথেয় নিয়ে যাত্রা করে বেরিয়েছিল। তার পরে? পথে কালো মেঘ কি ডাকাতের মতো ছুটে এল? সেই আমার আলোর সম্বল কি এক কণাও রাখল না? কিন্তু জীবনের ব্রাহ্মমুহূর্তে সেই-যে উষাসতীর দান, দুর্যোগে সে ঢাকা পড়ে, তবু সে কি নষ্ট হবার?
আমাদের দেশে তাকেই বলে সুন্দর যার বর্ণ গৌর। কিন্তু যে আকাশ আলো দেয় সে যে নীল। আমার মায়ের বর্ণ ছিল শামলা, তাঁর দীপ্তি ছিল পুণ্যের। তাঁর রূপ রূপের গর্বকে লজ্জা দিত।
এসো পাপ, এসো সুন্দরী!
তব চুম্বন-অগ্নি-মদিরা রক্তে ফিরুক সঞ্চরি।
অকল্যাণের বাজুক শঙ্খ,
ললাটে, লেপিয়া দাও কলঙ্ক,
নির্লাজ কালো কলুষপঙ্ক
    বুকে দাও প্রলয়ংকরী!
      রাই আমার    চলে যেতে ঢলে পড়ে।
               অগাধ জলের মকর যেমন,
                         ও তার    চিটে চিনি জ্ঞান নেই!
ভরা বাদর, মাহ ভাদর,
শূন্য মন্দির মোর!
ভরা বাদর, মাহ ভাদর,
শূন্য মন্দির মোর!
ভরা বাদর, মাহ ভাদর,
শূন্য মন্দির মোর!
ভরা বাদর, মাহ ভাদর,
শূন্য মন্দির মোর!
বিদ্যাপতি কহে কৈসে গোয়াঁয়বি
হরি বিনে দিনরাতিয়া?
আমার নিকড়িয়া রসের রসিক কানন ঘুরে ঘুরে
      নিকড়িয়া বাঁশের বাঁশি বাজায় মোহন সুরে।
আমার ঘর বলে, তুই কোথায় যাবি,
বাইরে গিয়ে সব খোয়াবি--
আমার প্রাণ বলে, তোর যা আছে সব
যাক-না উড়ে পুড়ে।
ওগো,যায় যদি তো যাক-না চুকে,
সব হারাব হাসিমুখে,
আমি এই চলেছি মরণসুধা
নিতে পরান পূরে।
ওগো, আপন যারা কাছে টানে
এ রস তারা কেই বা জানে,
আমার বাঁকা পথের বাঁকা সে যে
ডাক দিয়েছে দূরে।
এবার বাঁকার টানে সোজার বোঝা
পড়ুক ভেঙে-চুরে।
যখন দেখা দাও নি, রাধা, তখন বেজেছিল বাঁশি।
এখন চোখে চোখে চেয়ে সুর যে আমার গেল ভাসি।
তখন নানা তানের ছলে
ডাক ফিরেছে জলে স্থলে,
এখন আমার সকল কাঁদা রাধার রূপে উঠল হাসি।
বঁধুর লাগি কেশে আমি পরব এমন ফুল
স্বর্গে মর্তে তিন ভুবনে নাইকো যাহার মূল।
বাঁশির ধ্বনি হাওয়ায় ভাসে,
সবার কানে বাজবে না সে--
দেখ্‌ লো চেয়ে যমুনা ওই ছাপিয়ে গেল কূল।
She should never have looked at me,
If she meant I should not love her!
There are plenty... men you call such,
I suppose... she may discover
All her soul to, if she pleases,
And yet leave much as she found them:
But I'm not so, and she knew it
When she fixed me, glancing round them.
আমায় ভালো বাসবে না সে এই যদি তার ছিল জানা,
তবে কি তার উচিত ছিল আমার-পানে দৃষ্টি হানা?
তেমন-তেমন অনেক মানুষ আছে তো এই ধরাধামে
(যদিচ ভাই, আমি তাদের গণি নেকো মানুষ নামে)--
যাদের কাছে সে যদি তার খুলে দিত প্রাণের ঢাকা,
তবু তারা রইত খাড়া যেমন ছিল তেমনি ফাঁকা।
আমি তো নই তাদের মতন সে কথা সে জানত মনে
যখন মোরে বাঁধল ধ'রে বিদ্ধ ক'রে নয়নকোণে।
মধুঋতু নিত্য হয়ে রইল তোমার মধুর দেশে।
যাওয়া-আসার কান্নাহাসি হাওয়ায় সেথা বেড়ায় ভেসে।
যার যে জনা সেই শুধু যায়, ফুল ফোটা তো ফুরোয় না হায়--
ঝরবে যে ফুল সেই কেবলি ঝরে পড়ে বেলাশেষে।
যখন আমি ছিলেম কাছে তখন কত দিয়েছি গান;
এখন আমার দূরে যাওয়া, এরও কি গো নাই কোনো দান?
পুষ্পবনের ছায়ায় ঢেকে এই আশা তাই গেলেম রেখে--
আগুন-ভরা ফাগুনকে তোর কাঁদায় যেন আষাঢ় এসে॥
আরো দেখুন
একটা আষাঢ়ে গল্প
Stories
দূর সমুদ্রের মধ্যে একটা দ্বীপ। সেখানে কেবল তাসের সাহেব, তাসের বিবি, টেক্কা এবং গোলামের বাস। দুরি তিরি হইতে নহলা-দহলা পর্যন্ত আরো অনেক-ঘর গৃহস্থ আছে কিন্তু তাহারা উচ্চজাতীয় নহে।
টেক্কা সাহেব গোলাম এই তিনটেই প্রধান বর্ণ, নহলা-দহলারা অন্ত্যজ-- তাহাদের সহিত এক পঙ্‌ক্তিতে বসিবার যোগ্য নহে।
আরো দেখুন
নিশীথে
Stories
'ডাক্তার! ডাক্তার!'
জ্বালাতন করিল! এই অর্ধেক রাত্রে--
আরো দেখুন
পুরুষের বিদ্যা করেছিনু শিক্ষা
Songs
       পুরুষের বিদ্যা করেছিনু শিক্ষা
                         লভি নাই মনোহরণের দীক্ষা--
                                        কুসুমধনু,
                          অপমানে লাঞ্ছিত তরুণ তনু।
                               অর্জুন ব্রহ্মচারী
                          মোর মুখে হেরিল না নারী,
                               ফিরাইল, গেল ফিরে।
                                    দয়া করো অভাগীরে--
                               শুধু এক বরষের জন্যে
                                    পুষ্পলাবণ্যে
                               মোর দেহ পাক্‌ তব স্বর্গের মূল্য
                                    মর্তে অতুল্য॥
আরো দেখুন
নীরবে আছ কেন
Songs
নীরবে আছ কেন বাহিরদুয়ারে--
আঁধার লাগে চোখে, দেখি না তুহারে ॥
          সময় হল জানি, নিকটে লবে টানি,
                   আমার তরীখানি ভাসাবে জুয়ারে ॥
সফল হোক প্রাণ এ শুভলগনে,
সকল তারা তাই গাহুক গগনে।
          করো গো সচকিত আলোকে পুলকিত
                   স্বপননিমীলিত হৃদয়গুহারে ॥
আরো দেখুন
একটি দিন
Stories
মনে পড়ছে সেই দুপুরবেলাটি। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টিধারা ক্লান্ত হয়ে আসে, আবার দমকা হাওয়া তাকে মাতিয়ে তোলে।
ঘরে অন্ধকার, কাজে মন যায় না। যন্ত্রটা হাতে নিয়ে বর্ষার গানে মল্লারের সুর লাগালেম।
আরো দেখুন
শাস্তি
Stories
দুখিরাম রুই এবং ছিদাম রুই দুই ভাই সকালে যখন দা হাতে লইয়া জন খাটিতে বাহির হইল তখন তাহাদের দুই স্ত্রীর মধ্যে বকাবকি চেঁচামেচি চলিতেছে। কিন্তু প্রকৃতির অন্যান্য নানাবিধ নিত্য কলরবের ন্যায় এই কলহ-কোলাহলও পাড়াসুদ্ধ লোকের অভ্যাস হইয়া গেছে। তীব্র কণ্ঠস্বর শুনিবামাত্র লোকে পরস্পরকে বলে--'ওই রে বাধিয়া গিয়াছে,' অর্থাৎ যেমনটি আশা করা যায় ঠিক তেমনিটি ঘটিয়াছে, আজও স্বভাবের নিয়মের কোনোরূপ ব্যত্যয় হয় নাই। প্রভাতে পূর্বদিকে সূর্য উঠিলে যেমন কেহ তাহার কারণ জিজ্ঞাসা করে না, তেমনি এই কুরিদের বাড়িতে দুই জায়ের মধ্যে যখন একটা হৈ-হৈ পড়িয়া যায় তখন তাহার কারণ জিজ্ঞাসা করে না, তেমনি এই কুরিদের বাড়িতে দুই জায়ের মধ্যে যখন একটা হৈ-হৈ পড়িয়া যায় তখন তাহার কারণ নির্ণয়ের জন্য কাহারও কোনোরূপ কৌতূহলের উদ্রেক হয় না।
অবশ্য এই কোন্দল আন্দোলন প্রতিবেশীদের অপেক্ষা দুই স্বামীকে বেশি স্পর্শ করিত সন্দেহ নাই, কিন্তু সেটা তাহারা কোনোরূপ অসুবিধার মধ্যে গণ্য করিত না। তাহারা দুই ভাই যেন দীর্ঘ সংসারপথ একটা এক্কাগাড়িতে করিয়া চলিয়াছে, দুই দিকের দুই স্প্রিংবিহীন চাকার অবিশ্রাম ছড়ছড় খড়খড় শব্দটাকে জীবনরথযাত্রার একটা বিধিবিহিত নিয়মের মধ্যেই ধরিয়া লইয়াছে।
আরো দেখুন