সিদ্ধি
Stories
স্বর্গের অধিকারে মানুষ বাধা পাবে না, এই তার পণ। তাই, কঠিন সন্ধানে অমর হবার মন্ত্র সে শিখে নিয়েছে। এখন একলা বনের মধ্যে সেই মন্ত্র সে সাধনা করে।
বনের ধারে ছিল এক কাঠকুড়নি মেয়ে। সে মাঝে মাঝে আঁচলে ক'রে তার জন্যে ফল নিয়ে আসে, আর পাতার পাত্রে আনে ঝরনার জল।
আরো দেখুন
বিজ্ঞানী
Stories
দাদামশায়, নীলমণিবাবুকে তোমার এত কেন ভালো লাগে আমি তো বুঝতে পারি নে।
এই প্রশ্নটা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্ত প্রশ্ন, এর ঠিক উত্তর ক'জন লোকে দিতে পারে।
আরো দেখুন
অবাধ
Verses
     সরে যা, ছেড়ে দে পথ,
দুর্ভর সংশয়ে ভারী তোর মন পাথরের পারা।
      হালকা প্রাণের ধারা
           দিকে দিকে ওই ছুটে চলে
           কলকোলাহলে
                 দুরন্ত আনন্দভরে।
           ওরাই যে লঘু করে
                 অতীতের পুরাতন বোঝা।
                       ওরাই তো করে দেয় সোজা
সংসারের বক্র ভঙ্গি চঞ্চল সংঘাতে।
      ওদের চরণপাতে
জটিল জালের গ্রন্থি যত
      হয় অপগত।
           মলিনতা দেয় মেজে,
      শ্রান্তি দূর করে ওরা ক্লান্তিহীন তেজে।
      ওরা সব মেঘের মতন
প্রভাতকিরণপায়ী, -- সিন্ধুর তরঙ্গ অগনন,
      ওরা যেন দিশাহারা হাওয়ার উৎসাহ,
           মাটির হৃদয়জয়ী নিরন্তর তরুর প্রবাহ;
           প্রাচীনরজনীপ্রান্তে ওরা সবে প্রথম আলোক।
                 ওরা শিশু, বালিকা বালক,
                 ওরা নারী তারুণ্যে উচ্ছল।
                       ওরা যে নির্ভীক বীরদল
                 যৌবনের দুঃসাহসে বিপদের দুর্গ হানে,
                       সম্পদেরে উদ্ধারিয়া আনে।
           পায়ের শৃঙ্খল ওরা চলে ঝংকারিয়া
                 অন্তরে প্রবল মুক্তি নিয়া।
           আগামী কালের লাগি নাই চিন্তা, নাই মনে ভয়,
                 আগামী কালেরে করে জয়।
           চলেছে চলেছে ওরা চারি দিক হতে
                       আঁধারে আলোতে,
                            সম্মুখের পানে
                                অজ্ঞাতের টানে।
                            তুই সরে যা রে
           ওরে ভীরু, ভারাতুর সংশয়ের ভারে।
আরো দেখুন
বাদশার মুখখানা
Verses
বাদশার মুখখানা
     গুরুতর গম্ভীর,
       মহিষীর হাসি নাহি ঘুচে;
কহিলা বাদশা-বীর,--
     'যতগুলো দম্ভীর
       দম্ভ মুছিব চেঁচে-পুঁছে।'
উঁচু মাথা হল হেঁট,
খালি হল ভরা পেট,
     শপাশপ্‌ পিঠে পড়ে বেত।
কভু ফাঁসি কভু জেল,
কভু শূল কভু শেল,
     কভু ক্রোক দেয় ভরা খেত।
মহিষী বলেন তবে,--
'দম্ভ যদি না র'বে
     কী দেখে হাসিব তবে, প্রভু।'
বাদশা শুনিয়া কহে,--
'কিছুই যদি না রহে
     হসনীয় আমি র'ব তবু।'
আরো দেখুন
অলি বার বার ফিরে যায়
Songs
অলি বার বার ফিরে যায়,
অলি বার বার ফিরে আসে।
তবে তো ফুল বিকাশে।
কলি ফুটিতে চাহে ফোটে না, মরে লাজে মরে ত্রাসে।
ভুলি মান অপমান, দাও মন প্রাণ, নিশি দিন রহ পাশে।
ওগো আশা ছেড়ে তবু আশা রেখে দাও,
হৃদয়-রতন আশে।
ফিরে এস ফিরে এস, বন মোদিত ফুলবাসে।
আজি বিরহ-রজনী ফুল্ল কুসুম শিশির-সলিলে ভাসে।
আরো দেখুন
ছুটি
Stories
বালকদিগের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় চট করিয়া একটা নূতন ভাবোদয় হইল, নদীর ধারে একটা প্রকাণ্ড শালকাষ্ঠ মাস্তুলে রূপান্তরিত হইবার প্রতীক্ষায় পড়িয়া ছিল; স্থির হইল, সেটা সকলে মিলিয়া গড়াইয়া লইয়া যাইবে।
যে-ব্যক্তির কাঠ, আবশ্যককালে তাহার যে কতখানি বিস্ময় বিরক্তি এবং অসুবিধা বোধ হইবে, তাহাই উপলব্ধি করিয়া বালকেরা এ প্রস্তাবে সম্পূর্ণ অনুমোদন করিল।
আরো দেখুন
পরীর পরিচয়
Stories
রাজপুত্রের বয়স কুড়ি পার হয়ে যায়, দেশবিদেশ থেকে বিবাহের সম্বন্ধ আসে।
ঘটক বললে, 'বাহ্লীকরাজের মেয়ে রূপসী বটে, যেন সাদা গোলাপের পুষ্পবৃষ্টি।'
আরো দেখুন
জীবিত ও মৃত
Stories
রানীহাটের জমিদার শারদাশংকরবাবুদের বাড়ির বিধবা বধূটির পিতৃকুলে কেহ ছিল না; সকলেই একে একে মারা গিয়াছে। পতিকুলেও ঠিক আপনার বলিতে কেহ নাই, পতিও নাই পুত্রও নাই। একটি ভাশুরপো, শারদাশংকরের ছোটো ছেলেটি, সেই তাহার চক্ষের মণি। সে জন্মিবার পর তাহার মাতার বহুকাল ধরিয়া শক্ত পীড়া হইয়াছিল, সেইজন্য এই বিধবা কাকি কাদম্বিনীই তাহাকে মানুষ করিয়াছে। পরের ছেলে মানুষ করিলে তাহার প্রতি প্রাণের টান আরো যেন বেশি হয়, কারণ তাহার উপরে অধিকার থাকে না; তাহার উপরে কোনো সামাজিক দাবি নাই, কেবল স্নেহের দাবি-- কিন্তু কেবলমাত্র স্নেহ সমাজের সমক্ষে আপনার দাবি কোনো দলিল অনুসারে সপ্রমাণ করিতে পারে না এবং চাহেও না, কেবল অনিশ্চিত প্রাণের ধনটিকে দ্বিগুণ ব্যাকুলতার সহিত ভালোবাসে।
বিধবার সমস্ত রুদ্ধ প্রীতি এই ছেলেটির প্রতি সিঞ্চন করিয়া একদিন শ্রাবণের রাত্রে কাদম্বিনীর অকস্মাৎ মৃত্যু হইল। হঠাৎ কী কারণে তাহার হৃৎস্পন্দন স্তব্ধ হইয়া গেল-- সময় জগতের আর-সর্বত্রই চলিতে লাগিল, কেবল সেই স্নেহকাতর ক্ষুদ্র কোমল বক্ষটির ভিতর সময়ের ঘড়ির কল চিরকালের মতো বন্ধ হইয়া গেল।
আরো দেখুন
আগমনী
Stories
আয়োজন চলেইছে। তার মাঝে একটুও ফাঁক পাওয়া যায় না যে ভেবে দেখি, কিসের আয়োজন।
তবুও কাজের ভিড়ের মধ্যে মনকে এক-একবার ঠেলা দিয়ে জিজ্ঞাসা করি, 'কেউ আসবে বুঝি?'
আরো দেখুন
দিদি
Stories
পল্লীবাসিনী কোনো-এক হতভাগিনীর অন্যায়কারী অত্যাচারী স্বামীর দুষ্কৃতিসকল সবিস্তারে বর্ণনপূর্বক প্রতিবেশিনী তারা অত্যন্ত সংক্ষেপে নিজের রায় প্রকাশ করিয়া কহিল, 'এমন স্বামীর মুখে আগুন।'
শুনিয়া জয়গোপালবাবুর স্ত্রী শশী অত্যন্ত পীড়া অনুভব করিলেন-- স্বামীজাতির মুখে চুরটের আগুন ছাড়া অন্য কোনো প্রকার আগুন কোনো অবস্থাতেই কামনা করা স্ত্রীজাতিকে শোভা পায় না।
আরো দেখুন
রাজটিকা
Stories
নবেন্দুশেখরের সহিত অরুণলেখার যখন বিবাহ হইল, তখন হোমধূমের অন্তরাল হইতে ভগবান প্রজাপতি ঈষৎ একটু হাস্য করিলেন। হায়, প্রজাপতির পক্ষে যাহা খেলা আমাদের পক্ষে তাহা সকল সময়ে কৌতুকের নহে।
নবেন্দুশেখরের পিতা পূর্ণেন্দুশেখর ইংরাজরাজ-সরকারে বিখ্যাত। তিনি এই ভবসমুদ্রে কেবলমাত্র দ্রুতবেগে সেলাম-চালনা দ্বারা রায়বাহাদুর পদবীর উৎতুঙ্গ মরুকূলে উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন; আরো দুর্গমতর সম্মানপথের পাথেয় তাঁহার ছিল, কিন্তু পঞ্চান্ন বৎসর বয়ঃক্রমকালে অনতিদূরবর্তী রাজখেতাবের কুহেলিকাচ্ছন্ন গিরিচূড়ার প্রতি করুণ লোলুপ দৃষ্টি স্থিরনিবদ্ধ করিয়া এই রাজানুগৃহীত ব্যাক্তি অকস্মাৎ খেতাববর্জিত লোকে গমন করিলেন এবং তাঁহার বহু-সেলাম-শিথিল গ্রীবাগ্রন্থি শ্মশানশয্যায় বিশ্রাম লাভ করিল।
আরো দেখুন