কর্তার ভূত
Stories
বুড়ো কর্তার মরণকালে দেশসুদ্ধ সবাই বলে উঠল, 'তুমি গেলে আমাদের কী দশা হবে।'
শুনে তারও মনে দুঃখ হল। ভাবলে, 'আমি গেলে এদের ঠাণ্ডা রাখবে কে।'
আরো দেখুন
খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন
Stories
রাইচরণ যখন বাবুদের বাড়ি প্রথম চাকরি করিতে আসে তখন তাহার বয়স বারো। যশোহর জিলায় বাড়ি, লম্বা চুল, বড়ো বড়ো চোখ, শ্যামচিক্কণ ছিপ্‌ছিপে বালক। জাতিতে কায়স্থ। তাহার প্রভুরাও কায়স্থ। বাবুদের এক-বৎসর-বয়স্ক একটি শিশুর রক্ষণ ও পালন-কার্যে সহায়তা করা তাহার প্রধান কর্তব্য ছিল।
সেই শিশুটি কালক্রমে রাইচরণের কক্ষ ছাড়িয়া স্কুলে, স্কুল ছাড়িয়া কলেজে, অবশেষে কলেজ ছাড়িয়া মুন্‌সেফিতে প্রবেশ করিয়াছে। রাইচরণ এখনো তাঁহার ভৃত্য।
আরো দেখুন
174
Verses
YOUR SMILE, my love, like the smell of a strange flower,
is simple and inexplicable.
আরো দেখুন
শিবাজি-উৎসব
Verses
     কোন্‌ দূর শতাব্দের কোন্‌-এক অখ্যাত দিবসে
                  নাহি জানি আজি
     মারাঠার কোন্‌ শৈলে অরণ্যের অন্ধকারে ব'সে,
                  হে রাজা শিবাজি,
     তব ভাল উদ্ভাসিয়া এ ভাবনা তড়িৎপ্রভাবৎ
                  এসেছিল নামি--
     "একধর্মরাজ্যপাশে খণ্ড ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ভারত
                  বেঁধে দিব আমি।'
     সেদিন এ বঙ্গদেশ উচ্চকিত জাগে নি স্বপনে,
                  পায় নি সংবাদ--
     বাহিরে আসে নি ছুটে, উঠে নাই তাহার প্রাঙ্গণে
                  শুভ শঙ্খনাদ--
     শান্তমুখে বিছাইয়া আপনার কোমলনির্মল
                  শ্যামল উত্তরী
     তন্দ্রাতুর সন্ধ্যাকালে শত পল্লিসন্তানের দল
                  ছিল বক্ষে করি।
     তার পরে একদিন মারাঠার প্রান্তর হইতে
                  তব বজ্রশিখা
     আঁকি দিল দিগ্‌দিগন্তে যুগান্তের বিদ্যুদ্‌বহ্নিতে
                  মহামন্ত্রলিখা।
     মোগল-উষ্ণীষশীর্ষ প্রস্ফুরিল প্রলয়প্রদোষে
                  পক্কপত্র যথা--
     সেদিনও শোনে নি বঙ্গ মারাঠার সে বজ্রনির্ঘোষে
                  কী ছিল বারতা।
     তার পরে শূন্য হল ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ নিবিড় নিশীথে
                  দিল্লিরাজশালা--
     একে একে কক্ষে কক্ষে অন্ধকারে লাগিল মিশিতে
                  দীপালোকমালা।
     শবলুব্ধ গৃধ্রদের ঊর্ধ্বস্বর বীভৎস চীৎকারে
                  মোগলমহিমা
     রচিল শ্মশানশয্যা--মুষ্টিমেয় ভস্মরেখাকারে
                  হল তার সীমা।
     সেদিন এ বঙ্গপ্রান্তে পণ্যবিপণীর এক ধারে
                  নিঃশব্দচরণ
     আনিল বণিকলক্ষ্মী সুরঙ্গপথের অন্ধকারে
                  রাজসিংহাসন।
     বঙ্গ তারে আপনার গঙ্গোদকে অভিষিক্ত করি
                  নিল চুপে চুপে--
     বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল পোহালে শর্বরী
                  রাজদণ্ডরূপে।
     সেদিন কোথায় তুমি হে ভাবুক, হে বীর মারাঠি,
                  কোথা তব নাম!
     গৈরিক পতাকা তব কোথায় ধুলায় হল মাটি--
                  তুচ্ছ পরিণাম!
     বিদেশীর ইতিবৃত্ত দস্যু বলি করে পরিহাস
                  অট্টহাস্যরবে--
     তব পুণ্য চেষ্টা যত তস্করের নিষ্ফল প্রয়াস,
                  এই জানে সবে।
    অয়ি ইতিবৃত্তকথা, ক্ষান্ত করো মুখর ভাষণ।
                  ওগো মিথ্যাময়ী,
    তোমার লিখন-'পরে বিধাতার অব্যর্থ লিখন
                  হবে আজি জয়ী।
    যাহা মরিবার নহে তাহারে কেমনে চাপা দিবে
                  তব ব্যঙ্গবাণী?
    যে তপস্যা সত্য তারে কেহ বাধা দিবে না ত্রিদিবে
                  নিশ্চয় সে জানি।
    হে রাজতপস্বী বীর, তোমার সে উদার ভাবনা
                  বিধির ভাণ্ডারে
    সঞ্চিত হইয়া গেছে, কাল কভু তার এক কণা
                  পারে হরিবারে?
    তোমার সে প্রাণোৎসর্গ, স্বদেশলক্ষ্মীর পূজাঘরে
                  সে সত্যসাধন,
    কে জানিত, হয়ে গেছে চিরযুগযুগান্তর-তরে
                  ভারতের ধন।
    অখ্যাত অজ্ঞাত রহি দীর্ঘকাল, হে রাজবৈরাগী,
                  গিরিদরীতলে
    বর্ষার নির্ঝর যথা শৈল বিদারিয়া উঠে জাগি
                  পরিপূর্ণ বলে,
    সেইমত বাহিরিলে-- বিশ্বলোক ভাবিল বিস্ময়ে,
                  যাহার পতাকা
    অম্বর আচ্ছন্ন করে, এতকাল এত ক্ষুদ্র হয়ে
                  কোথা ছিল ঢাকা।
    সেইমত ভাবিতেছি আমি কবি এ পূর্ব-ভারতে,
                  কী অপূর্ব হেরি,
    বঙ্গের অঙ্গনদ্বারে কেমনে ধ্বনিল কোথা হতে
                  তব জয়ভেরী।
    তিন শত বৎসরের গাঢ়তম তমিস্রা বিদারি
                  প্রতাপ তোমার
    এ প্রাচীদিগন্তে আজি নবতর কী রশ্মি প্রসারি
                  উদিল আবার।
    মরে না, মরে না কভু সত্য যাহা শত শতাব্দীর
                  বিস্মৃতির তলে--
    নাহি মরে উপেক্ষায়, অপমানে না হয় অস্থির,
                  আঘাতে না টলে।
    যারে ভেবেছিল সবে কোন্‌কালে হয়েছে নিঃশেষ
                  কর্মপরপারে,
    এল সেই সত্য তব পূজ্য অতিথির ধরি বেশ
                  ভারতের দ্বারে।
    আজও তার সেই মন্ত্র-- সেই তার উদার নয়ান
                  ভবিষ্যের পানে
    একদৃষ্টে চেয়ে আছে, সেথায় সে কী দৃশ্য মহান্‌
                  হেরিছে কে জানে।
    অশরীর হে তাপস, শুধু তব তপোমূর্তি লয়ে
                  আসিয়াছ আজ--
    তবু তব পুরাতন সেই শক্তি আনিয়াছ বয়ে,
                  সেই তব কাজ।
    আজি তব নাহি ধ্বজা, নাই সৈন্য রণ-অশ্বদল
                  অস্ত্র খরতর--
    আজি আর নাহি বাজে আকশেরে করিয়া পাগল
                  "হর হর হর'।
    শুধু তব নাম আজি পিতৃলোক হতে এল নামি,
                  করিল আহ্বান--
    মুহূর্তে হৃদয়াসনে তোমারেই বরিল, হে স্বামী,
                  বাঙালির প্রাণ।
    এ কথা ভাবে নি কেহ এ তিন-শতাব্দ-কাল ধরি--
                  জানে নি স্বপনে--
    তোমার মহৎ নাম বঙ্গ-মারাঠারে এক করি
                  দিবে বিনা রণে।
    তোমার তপস্যাতেজ দীর্ঘকাল করি অন্তর্ধান
                  আজি অকস্মাৎ
    মৃত্যুহীন বাণী-রূপে আনি দিবে নূতন পরান
                  নূতন প্রভাত।
    মারাঠার প্রান্ত হতে একদিন তুমি ধর্মরাজ,
                  ডেকেছিলে যবে
    রাজা ব'লে জানি নাই, মানি নাই, পাই নাই লাজ
                  সে ভৈরব রবে।
    তোমার কৃপাণদীপ্তি একদিন যবে চমকিলা
                  বঙ্গের আকাশে
    সে ঘোর দুর্যোগদিনে না বুঝিনু রুদ্র সেই লীলা,
                  লুকানু তরাসে।
    মৃত্যুসিংহাসনে আজি বসিয়াছ অমরমুরতি--
                  সমুন্নত ভালে
    যে রাজকিরীট শোভে লুকাবে না তার দিব্যজ্যোতি
                  কভু কোনোকালে।
    তোমারে চিনেছি আজি, চিনেছি চিনেছি হে রাজন্‌,
                  তুমি মহারাজ।
    তব রাজকর লয়ে আট কোটি বঙ্গের নন্দন
                  দাঁড়াইবে আজ।
    সেদিন শুনি নি কথা-- আজ মোরা তোমার আদেশ
                  শির পাতি লব।
    কণ্ঠে কণ্ঠে বক্ষে বক্ষে ভারতে মিলিবে সর্বদেশ
                  ধ্যানমন্ত্রে তব।
    ধ্বজা করি উড়াইব বৈরাগীর উত্তরী বসন--
                  দরিদ্রের বল।
    "একধর্মরাজ্য হবে এ ভারতে' এ মহাবচন
                  করিব সম্বল।
     মারাঠির সাথে আজি, হে বাঙালি, এক কন্ঠে বলো
                  "জয়তু শিবাজি'।
     মারাঠির সাথে আজি, হে বাঙালি, এক সঙ্গে চলো
                  মহোৎসবে সাজি।
     আজি এক সভাতলে ভারতের পশ্চিম-পূরব
                  দক্ষিণে ও বামে
     একত্রে করুক ভোগ একসাথে একটি গৌরব
                  এক পুণ্য নামে।
আরো দেখুন
33
Verses
আলো তার পদচিহ্ন
      আকাশে না রাখে--
চলে যেতে জানে, তাই
      চিরদিন থাকে।
আরো দেখুন
ছুটি
Stories
বালকদিগের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় চট করিয়া একটা নূতন ভাবোদয় হইল, নদীর ধারে একটা প্রকাণ্ড শালকাষ্ঠ মাস্তুলে রূপান্তরিত হইবার প্রতীক্ষায় পড়িয়া ছিল; স্থির হইল, সেটা সকলে মিলিয়া গড়াইয়া লইয়া যাইবে।
যে-ব্যক্তির কাঠ, আবশ্যককালে তাহার যে কতখানি বিস্ময় বিরক্তি এবং অসুবিধা বোধ হইবে, তাহাই উপলব্ধি করিয়া বালকেরা এ প্রস্তাবে সম্পূর্ণ অনুমোদন করিল।
আরো দেখুন
উৎসর্গ
Stories
শেষ পারানির খেয়ায় তুমি
    দিনশেষের নেয়ে
আরো দেখুন
মঙ্গল-গীত
Verses
শ্রীমতী ইন্দিরা প্রাণাধিকাসু। নাসিক।
এত বড়ো এ ধরণী মহাসিন্ধু-ঘেরা,
        দুলিতেছে আকাশ সাগরে--
দিন-দুই হেথা রহি মোরা মানবেরা
        শুধু কি মা যাব খেলা করে।
তাই কি ধাইছে গঙ্গা ছাড়ি হিমগিরি,
        অরণ্য বহিছে ফুল ফল--
শত কোটি রবি তারা আমাদের ঘিরি
        গণিতেছে প্রতি দণ্ড পল!
শুধু কি মা হাসি-খেলা প্রতি দিন রাত,
        দিবসের প্রত্যেক প্রহর!
প্রভাতের পরে আসি নূতন প্রভাত
        লিখিছে কি একই অক্ষর!
কানাকানি হাসাহাসি কোণেতে গুটায়ে
        অলস নয়ন নিমীলন,
দণ্ড-দুই ধরণীর ধূলিতে লুটায়ে
        ধূলি হয়ে ধূলিতে শয়ন!
নাই কি মা মানবের গভীর ভাবনা,
        হৃদয়ের সীমাহীন আশা।
জেগে নাই অন্তরেতে অনন্ত চেতনা,
        জীবনের অনন্ত পিপাসা!
হৃদয়েতে শুষ্ক কি মা, উৎস করুণার,
        শুনি না কি দুখীর ক্রন্দন!
জগৎ শুধু কি মা গো তোমার আমার
        ঘুমাবার কুসুম-আসন!
শুনো না কাহারা ওই করে কানাকানি
        অতি তুচ্ছ ছোটো ছোটো কথা।
পরের হৃদয় লয়ে করে টানাটানি,
        শকুনির মতো নির্মমতা।
শুনো না করিছে কারা কথা-কাটাকাটি
        মাতিয়া জ্ঞানের অভিমানে,
রসনায় রসনায় ঘোর লাঠালাঠি,
        আপনার বুদ্ধিরে বাখানে।
তুমি এসো দূরে এসো, পবিত্র নিভৃতে,
        ক্ষুদ্র অভিমান যাও ভুলি।
সযতনে ঝেড়ে ফেলো বসন হইতে
        প্রতি নিমেষের যত ধূলি!
নিমেষের ক্ষুদ্র কথা ক্ষুদ্র রেণুজাল
        আচ্ছন্ন করিছে মানবেরে,
উদার অনন্ত তাই হতেছে আড়াল
        তিল তিল ক্ষুদ্রতার ঘেরে।
আছে মা, তোমার মুখে স্বর্গের কিরণ,
        হৃদয়েতে উষার আভাস,
খুঁজিছে সরল পথ ব্যাকুল নয়ন--
        চারি দিকে মর্ত্যের প্রবাস।
আপনার ছায়া ফেলি আমরা সকলে
        পথ তোর অন্ধকারে ঢাকি--
ক্ষুদ্র কথা, ক্ষুদ্র কাজে, ক্ষুদ্র শত ছলে,
        কেন তোরে ভুলাইয়া রাখি।
কেন মা, তোমারে কেহ চাহে না জানাতে
        মানবের উচ্চ কুলশীল--
অনন্ত জগৎব্যাপী ঈশ্বরের সাথে
        তোমার যে সুগভীর মিল।
কেন কেহ দেখায় না-চারি দিকে তব
        ঈশ্বরের বাহুর বিস্তার!
ঘেরি তোরে, ভোগসুখ ঢালি নব নব
        গৃহ বলি রচে কারাগার।
অনন্তের মাঝখানে দাঁড়াও মা আসি,
        চেয়ে দেখো আকাশের পানে--
পড়ুক বিমল বিভা, পূর্ণরূপরাশি
        স্বর্গমুখী কমল নয়ানে।
আনন্দে ফুটিয়া ওঠো শুভ্র সূর্যোদয়ে
        প্রভাতের কুসুমের মতো,
দাঁড়াও সায়াহ্ন-মাঝে পবিত্র হৃদয়ে
        মাথাখানি করিয়া আনত।
শোনো শোনো উঠিতেছে সুগম্ভীর বাণী,
        ধ্বনিতেছে আকাশ পাতাল!
বিশ্ব-চরাচর গাহে কাহারে বাখানি
        আদিহীন অন্তহীন কাল!
যাত্রী সবে ছুটিয়াছে শূন্যপথ দিয়া,
        উঠেছে সংগীতকোলাহল,
ওই নিখিলের সাথে কণ্ঠ মিলাইয়া
        মা, আমরা যাত্রা করি চল্‌।
যাত্রা করি বৃথা যত অহংকার হতে,
        যাত্রা করি ছাড়ি হিংসা দ্বেষ,
যাত্রা করি স্বর্গময়ী করুণার পথে,
        শিরে ধরি সত্যের আদেশ।
যাত্রা করি মানবের হৃদয়ের মাঝে
        প্রাণে লয়ে প্রেমের আলোক,
আয় মা গো, যাত্রা করি জগতের কাজে
        তুচ্ছ করি নিজ দুঃখ শোক।
জেনো মা, এ সুখে-দুঃখে আকুল সংসারে
        মেটে না সকল তুচ্ছ আশ--
তা বলিয়া অভিমানে অনন্ত তাঁহারে
        কোরো না, কোরো না অবিশ্বাস।
সুখ ব'লে যাহা চাই সুখ তাহা নয়,
        কী যে চাই জানি না আপনি--
আঁধারে জ্বলিছে ওই, ওরে কোরো ভয়,
        ভুজঙ্গের মাথার ও মণি।
ক্ষুদ্র সুখ ভেঙে যায়, না সহে নিশ্বাস,
        ভাঙে বালুকার খেলাঘর--
ভেঙে গিয়ে বলে দেয়, এ নহে আবাস,
        জীবনের এ নহে নির্ভর।
সকলে শিশুর মতো কত আবদার
        আনিছে তাঁহার সন্নিধান--
পূর্ণ যদি নাহি হল, অমনি তাহার
        ঈশ্বরে করিছে অপমান!
কিছুই চাব না মা গো আপনার তরে,
        পেয়েছে যা শুধিব সে ঋণ--
পেয়েছি যে প্রেমসুধা হৃদয়-ভিতরে,
        ঢালিয়া তা দিব নিশিদিন।
সুখ শুধু পাওয়া যায় সুখ না চাহিলে,
        প্রেম দিলে প্রেমে পুরে প্রাণ,
নিশিদিন আপনার ক্রন্দন গাহিলে
        ক্রন্দনের নাহি অবসান।
মধুপাত্রে-হতপ্রাণ পিপীলির মতো
        ভোগসুখে জীর্ণ হয়ে থাকা,
ঝুলে থাকা বাদুড়ের মতো শির নত
        আঁকড়িয়া সংসারের শাখা,
জগতের হিসাবেতে শূন্য হয়ে হায়
        আপনারে আপনি ভক্ষণ,
ফুলে উঠে ফেটে যাওয়া জলবিম্বপ্রায়--
        এই কি রে সুখের লক্ষণ।
এই অহিফেন-সুখ কে চায় ইহাকে!
        মানবত্ব এ নয় এ নয়।
রাহুর মতন সুখ গ্রাস করে রাখে
        মানবের মানব হৃদয়।
মানবেরে বল দেয় সহস্র বিপদ,
        প্রাণ দেয় সহস্র ভাবনা,
দারিদ্র৻ে খুঁজিয়া পাই মনের সম্পদ,
        শোকে পাই অনন্ত সান্ত্বনা।
চিরদিবসের সুখ রয়েছে গোপন
        আপনার আত্মার মাঝার।
চারি দিকে সুখ খুঁজে শ্রান্ত প্রাণ মন,
        হেথা আছে, কোথা নেই আর।
বাহিরের সুখ সে, সুখের মরীচিকা--
        বাহিরেতে নিয়ে যায় ছ'লে,
যখন মিলায়ে যায় মায়া-কুহেলিকা
        কেন কাঁদি সুখ নেই ব'লে।
দাঁড়াও সে অন্তরের শান্তিনিকেতনে
        চিরজ্যোতি চিরছায়াময়--
ঝড়হীন রৌদ্রহীন নিভৃত সদনে
        জীবনের অনন্ত আলয়।
পুণ্যজ্যোতি মুখে লয়ে পুণ্য হাসিখানি,
        অন্নপূর্ণা জননী-সমান,
মহাসুখে সুখ দুঃখ কিছু নাহি মানি
        কর সবে সুখ শান্তি দান।
মা, আমার এই জেনো হৃদয়ের সাধ
        তুমি হও লক্ষ্ণীর প্রতিমা--
মানবেরে জ্যোতি দাও, করো আশীর্বাদ,
        অকলঙ্ক-মূর্তি মধুরিমা।
কাছে থেকে এত কথা বলা নাহি হয়,
        হেসে খেলে দিন যায় কেটে,
দূরে ভয় হয় পাছে না পাই সময়,
        বলিবার সাধ নাহি মেটে।
কত কথা বলিবারে চাহি প্রাণপণে
        কিছুতে মা  বলিতে না পারি,
স্নেহমুখখানি তোর পড়ে মোর মনে,
        নয়নে উথলে অশ্রুবারি।
সুন্দর মুখেতে তোর মগ্ন আছে ঘুমে
        একখানি পবিত্র জীবন।
ফলুক সুন্দর ফল সুন্দর কুসুমে
        আশীর্বাদ করো মা, গ্রহণ।
শ্রীমতী ইন্দিরা প্রাণাধিকাসু। নাসিক।
চারি দিকে তর্ক উঠে সাঙ্গ নাহি হয়,
        কথায় কথায় বাড়ে কথা।
সংশয়ের উপরেতে চাপিছে সংশয়
        কেবলি বাড়িছে ব্যাকুলতা।
ফেনার উপরে ফেনা, ঢেউ 'পরে ঢেউ--
        গরজনে বধির শ্রবণ,
তীর কোন্‌ দিকে আছে নাহি জানে কেউ,
        হা হা করে আকুল পবন।
এই কল্লোলের মাঝে নিয়ে এস কেহ
        পরিপূর্ণ একটি জীবন,
নীরবে মিটিয়া যাবে সকল সন্দেহ,
        থেমে যাবে সহস্র বচন।
তোমার চরণে আসি মাগিবে মরণ
        লক্ষ্যহারা শত শত মত,
যে দিকে ফিরাবে তুমি দুখানি নয়ন
        সে দিকে হেরিবে সবে পথ।
অন্ধকার নাহি যায় বিবাদ করিলে
        মানে না বাহুর আক্রমণ।
একটি আলোকশিখা সমুখে ধরিলে
        নীরবে করে সে পলায়ন।
এস মা, উষার আলো, অকলঙ্ক প্রাণ,
        দাঁড়াও এ সংসার-আঁধারে।
জাগাও জাগ্রত হৃদে আনন্দের গান,
        কূল দাও নিদ্রার পাথারে।
চারি দিকে নৃশংসতা করে হানাহানি,
        মানবের পাষাণ পরান।
শাণিত ছুরির মতো বিঁধাইয়া বাণী,
        হৃদয়ের রক্ত করে পান।
তৃষিত কাতর প্রাণী মাগিতেছে জল,
        উল্কাধারা করিছে বর্ষণ--
শ্যামল আশার ক্ষেত্র করিয়া বিফল
        স্বার্থ দিয়ে করিছে কর্ষণ।
শুধু এসে একবার দাঁড়াও কাতরে
        মেলি দুটি সকরুণ চোখ,
পড়ুক দু-ফোঁটা অশ্রু জগতের 'পরে
        যেন দুটি বাল্মীকীর শ্লোক।
ব্যথিত করুক স্নান তোমার নয়নে,
        করুণার অমৃত নির্ঝরে,
তোমারে কাতর হেরি, মানবের মনে
        দয়া হবে মানবের 'পরে।
সমুদয় মানবের সৌন্দর্যে ডুবিয়া
        হও তুমি অক্ষয় সুন্দর।
ক্ষুদ্র রূপ কোথা যায় বাতাসে উবিয়া
        দুই-চারি পলকের পর।
তোমার সৌন্দর্যে হোক মানব সুন্দর,
        প্রেমে তব বিশ্ব হোক আলো।
তোমারে হেরিয়া যেন মুগুধ-অন্তর
        মানুষে মানুষে বাসে ভালো।
শ্রীমতী ইন্দিরা প্রাণাধিকাসু। নাসিক।
আমার এ গান মা গো, শুধু কি নিমেষে
মিলাইবে হৃদয়ের কাছাকাছি এসে?
          আমার প্রাণের কথা
          নিদ্রাহীন আকুলতা
শুধু নিশ্বাসের মতো যাবে কি মা ভেসে!
এ গান তোমারে সদা ঘিরে যেন রাখে,
সত্যের পথের 'পরে নাম ধরে ডাকে।
          সংসারের সুখে দুখে
          চেয়ে থাকে তোর মুখে,
চির আশীর্বাদ-সম কাছে কাছে থাকে।
বিজনে সঙ্গীর মতো করে যেন বাস,
অনুক্ষণ শোনে তোর হৃদয়ের আশ।
          পড়িয়া সংসার ঘোরে
          কাঁদিয়া হেরিলে তোরে
ভাগ করে নেয় যেন দুখের নিশ্বাস।
সংসারের প্রলোভন যবে আসি হানে
মধুমাখা বিষবাণী দুর্বল পরানে,
          এ গান আপন সুরে
          মন তোর রাখে পুরে,
ইষ্টমন্ত্র-সম সদা বাজে তোর কানে।
আমার এ গান যেন সুদীর্ঘ জীবন
তোমার বসন হয়, তোমার ভূষণ।
          পৃথিবীর ধূলিজাল
          করে দেয় অন্তরাল,
তোমারে করিয়া রাখে সুন্দর শোভন।
আমার এ গান যেন নাহি মানে মানা,
উদার বাতাস হয়ে এলাইয়া ডানা
          সৌরভের মতো তোরে
          নিয়ে যায় চুরি করে--
খুঁজিয়া দেখাতে যায় স্বর্গের সীমানা।
এ গান যেন রে হয় তোর ধ্রুবতারা,
অন্ধকারে অনিমিষে নিশি করে সারা।
          তোমার মুখের 'পরে
          জেগে থাকে স্নেহভরে
অকূলে নয়ন মেলি দেখায় কিনারা।
আমার এ গান যেন পশি তোর কানে
মিলায়ে মিশায়ে যায় অমস্ত পরানে।
          তপ্ত শোণিতের মতো
          বহে শিরে অবিরত,
আনন্দে নাচিয়া উঠে মহত্ত্বের গানে।
এ গান বাঁচিয়া থাকে যেন তোর মাঝে,
আঁখিতারা হয়ে তোর আঁখিতে বিরাজে।
          এ যেন রে করে দান
          সতত নূতন প্রাণ,
এ যেন জীবন পায় জীবনের কাজে।
যদি যাই, মৃত্যু যদি নিয়ে যায় ডাকি,
এই গানে রেখে যাব মোর স্নেহ-আঁখি।
          যবে হায় সব গান
          হয়ে যাবে অবসান,
এ গানের মাঝে আমি যেন বেঁচে থাকি।
আরো দেখুন
আগমনী
Stories
আয়োজন চলেইছে। তার মাঝে একটুও ফাঁক পাওয়া যায় না যে ভেবে দেখি, কিসের আয়োজন।
তবুও কাজের ভিড়ের মধ্যে মনকে এক-একবার ঠেলা দিয়ে জিজ্ঞাসা করি, 'কেউ আসবে বুঝি?'
আরো দেখুন
সংযোজন
Verses
          হম সখি দারিদ নারী!
জনম অবধি হম পীরিতি করনু
          মোচনু লোচন-বারি।
রূপ নাহি মম, কছুই নাহি গুণ
          দুখিনী আহির জাতি,
নাহি জানি কছু বিলাস-ভঙ্গিম
          যৌবন গরবে মাতি।
অবলা রমণী, ক্ষুদ্র হৃদয় ভরি
          পীরিত করনে জানি;
এক নিমিখ পল, নিরখি শ্যাম জনি
          সোই বহুত করি মানি।
কুঞ্জ পথে যব নিরখি সজনি হম,
শ্যামক চরণক চীনা,
শত শত বেরি ধূলি চুম্বি সখি,
          রতন পাই জনু দীনা।
নুঠুর বিধাতা, এ দুখ-জনমে
          মাঙব কি তুয়া পাশ!
জনম অভাগী, উপেখিতা হম,
          বহুত নাহি করি আশ,--
দূর থাকি হম রূপ হেরইব,
          দূরে শুনইব বাঁশি।
দূর দূর রহি সুখে নিরীখিব
          শ্যামক মোহন হাসি।
শ্যাম-প্রেয়সি রাধা! সখিলো!
          থাক' সুখে চিরদিন!
তুয়া সুখে হম রোয়ব না সখি
          অভাগিনী গুণ হীন।
অপন দুখে সখি, হম রোয়ব লো,
          নিভৃতে মুছইব বারি।
কোহি ন জানব, কোন বিষাদে
          তন-মন দহে হমারি।
ভানু সিংহ ভনয়ে, শুন কালা
          দুখিনী অবলা বালা--
উপেখার অতি তিখীনি বাণে
          না দিহ না দিহ জ্বালা।
আরো দেখুন
একটি দিন
Stories
মনে পড়ছে সেই দুপুরবেলাটি। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টিধারা ক্লান্ত হয়ে আসে, আবার দমকা হাওয়া তাকে মাতিয়ে তোলে।
ঘরে অন্ধকার, কাজে মন যায় না। যন্ত্রটা হাতে নিয়ে বর্ষার গানে মল্লারের সুর লাগালেম।
আরো দেখুন