98
Verses
মাঝে মাঝে কভু যবে অবসাদ আসি
অন্তরের আলোক পলকে ফেলে গ্রাসি,
মন্দপদে যবে শ্রান্তি আসে তিল তিল
তোমার পূজার বৃন্ত করে সে শিথিল
ম্রিয়মাণ-- তখনো না যেন করি ভয়,
তখনো অটল আশা যেন জেগে রয়
তোমা-পানে।
          তোমা-'পরে করিয়া নির্ভর
সে শ্রান্তির রাত্রে যেন সকল অন্তর
নির্ভয়ে অর্পণ করি পথধূলিতলে
নিদ্রারে আহ্বান করি। প্রাণপণ বলে
ক্লান্ত চিত্তে নাহি তুলি ক্ষীণ কলরব
তোমার পূজার অতি দরিদ্র উৎসব।
রাত্রি এনে দাও তুমি দিবসের চোখে,
আবার জাগাতে তারে নবীন আলোকে।
আরো দেখুন
৭৯
Verses
৭৯
হিতৈষীর স্বার্থহীন অত্যাচার যত
ধরণীরে সব চেয়ে করেছে বিক্ষত॥    
আরো দেখুন
প্রথম শোক
Stories
বনের ছায়াতে যে পথটি ছিল সে আজ ঘাসে ঢাকা।
সেই নির্জনে হঠাৎ পিছন থেকে কে বলে উঠল, 'আমাকে চিনতে পার না?'
আরো দেখুন
সওগাত
Stories
পুজোর পরব কাছে। ভাণ্ডার নানা সামগ্রীতে ভরা। কত বেনারসি কাপড়, কত সোনার অলংকার; আর ভাণ্ড ভ'রে ক্ষীর দই, পাত্র ভ'রে মিষ্টান্ন।
মা সওগাত পাঠাচ্ছেন।
আরো দেখুন
74
Verses
এ নদীর কলধ্বনি যেথায় বাজে না
মাতৃকলকণ্ঠসম, যেথায় সাজে না
কোমলা উর্বরা ভূমি নবনবোৎসবে
নবীন-বরন বস্ত্রে যৌবনগৌরবে
বসন্তে শরতে বরষায়, রুদ্ধাকাশ
দিবস-রাত্রিরে যেথা করে না প্রকাশ
পূর্ণপ্রস্ফুটিতরূপে, যেথা মাতৃভাষা
চিত্ত-অন্তঃপুরে নাহি করে যাওয়া-আসা
কল্যাণী হৃদয়লক্ষ্মী, যেথা নিশিদিন
কল্পনা ফিরিয়া আসে পরিচয়হীন
পরগৃহদ্বার হতে পথের মাঝারে--
সেখানেও যাই যদি, মন যেন পারে
সহজে টানিয়া নিতে অন্তহীন স্রোতে
তব সদানন্দধারা সর্ব ঠাঁই হতে।
আরো দেখুন
বোষ্টমী
Stories
আমি লিখিয়া থাকি অথচ লোকরঞ্জন আমার কলমের ধর্ম নয়, এইজন্য লোকেও আমাকে সদাসর্বদা যে রঙে রঞ্জিত করিয়া থাকে তাহাতে কালির ভাগই বেশি। আমার সম্বন্ধে অনেক কথাই শুনিতে হয়; কপালক্রমে সেগুলি হিতকথা নয়, মনোয়ারী তো নহেই।
শরীরে যেখানটায় ঘা পড়িতে থাকে সে জায়গাটা যত তুচ্ছই হোক সমস্ত দেহটাকে বেদনার জোরে সেই ছাড়াইয়া যায়। সে লোক গালি খাইয়া মানুষ হয়, সে আপনার স্বভাবকে যেন ঠেলিয়া একঝোঁকা হইয়া পড়ে। আপনার চারি দিককে ছাড়াইয়া আপনাকেই কেবল তাহার মনে পড়ে-- সেটা আরামও নয়, কল্যাণও নয়। আপনাকে ভোলাটাই তো স্বস্তি।
আরো দেখুন
প্রেমের অভিষেক
Verses
তুমি মোরে করেছ সম্রাট। তুমি মোরে
পরায়েছ গৌরবমুকুট। পুষ্পডোরে
সাজায়েছ কণ্ঠ মোর; তব রাজটিকা
দীপিছে ললাটমাঝে মহিমার শিখা
অহর্নিশি। আমার সকল দৈন্য-লাজ
আমার ক্ষুদ্রতা যত ঢাকিয়াছ আজ
তব রাজ-আস্তরণে। হৃদিশয্যাতল
শুভ্র দুগ্ধফেননিভ কোমল শীতল
তারি মাঝে বসায়েছ, সমস্ত জগৎ
বাহিরে দাঁড়ায়ে আছে, নাহি পায় পথ
সে অন্তর-অন্তঃপুরে। নিভৃত সভায়
আমারে চৌদিকে ঘিরি সদা গান গায়
বিশ্বের কবিরা মিলি; অমরবীণায়
উঠিয়াছে কী ঝংকার। নিত্য শুনা যায়
দূর-দূরান্তর হতে দেশবিদেশের
ভাষা, যুগ-যুগান্তের কথা, দিবসের
নিশীথের গান, মিলনের বিরহের
গাথা, তৃপ্তিহীন শ্রান্তিহীন আগ্রহের
উৎকণ্ঠিত তান।
         প্রেমের অমরাবতী--
প্রদোষ-আলোকে যেথা দময়ন্তী সতী
বিচরে নলের সনে দীর্ঘনিশ্বসিত
অরণ্যের বিষাদমর্মরে; বিকশিত
পুষ্পবীথিতলে শকুন্তলা আছে বসি,
করপদ্মতললীন ম্লান মুখশশী,
ধ্যানরতা; পুরূরবা ফিরে অহরহ
বনে বনে, গীতস্বরে দুঃসহ বিরহ
বিস্তারিয়া বিশ্বমাঝে; মহারণ্যে যেথা
বীণা হস্তে লয়ে তপস্বিনী মহাশ্বেতা
মহেশমন্দিরতলে বসি একাকিনী
অন্তরবেদনা দিয়ে গড়িছে রাগিণী
সান্ত্বনাসিঞ্চিত; গিরিতটে শিলাতলে
কানে কানে প্রেমবার্তা কহিবার ছলে
সুভদ্রার লজ্জারুণ কুসুমকপোল
চুম্বিছে ফাল্গুনি; ভিখারি শিবের কোল
সদা আগলিয়া আছে প্রিয়া পার্বতীরে
অনন্তব্যগ্রতাপাশে; সুখদুঃখনীরে
বহে অশ্রুমন্দাকিনী, মিনতির স্বরে
কুসুমিত বনানীরে ম্লানমুখী করে
করুণায়; বাঁশরির ব্যথাপূর্ণ তান
কুঞ্জে কুঞ্জে তরুচ্ছায়ে করিছে সন্ধান
হৃদয়সাথিরে; হাত ধরে মোরে তুমি
লয়ে গেছ সৌন্দর্যের সে নন্দনভূমি
অমৃত-আলয়ে। সেথা আমি জ্যোতিষ্মান
অক্ষয়যৌবনময় দেবতাসমান,
সেথা মোর লাবণ্যের নাহি পরিসীমা,
সেথা মোরে অর্পিয়াছে আপন মহিমা
নিখিল প্রণয়ী; সেথা মোর সভাসদ
রবিচন্দ্রতারা, পরি নব পরিচ্ছদ
শুনায় আমারে তারা নব নব গান
নব অর্থভরা-- চিরসুহৃদ্‌মান
সর্বচরাচর।
        হেথা আমি কেহ নহি,
সহস্রের মাঝে একজন-- সদা বহি
সংসারের ক্ষুদ্র ভার, কত অনুগ্রহ
কত অবহেলা সহিতেছি অহরহ।
সেই শতসহস্রের পরিচয়হীন
প্রবাহ হইতে, এই তুচ্ছ কর্মাধীন
মোরে তুমি লয়েছ তুলিয়া, নাহি জানি
কী কারণে। অয়ি মহীয়সী মহারানী,
তুমি মোরে করিয়াছ মহীয়ান। আজি
এই-যে আমারে ঠেলি চলে জনরাজি
না তাকায়ে মোর মুখে, তাহারা কি জানে--
নিশিদিন তোমার সোহাগ-সুধাপানে
অঙ্গ মোর হয়েছে অমর। তাহারা কি
পায় দেখিবারে-- নিত্য মোরে আছে ঢাকি
মন তব অভিনব লাবণ্যরসনে।
তব স্পর্শ, তব প্রেম রেখেছি যতনে,
তব সুধাকণ্ঠবাণী, তোমার চুম্বন,
তোমার আঁখির দৃষ্টি, সর্ব দেহমন
পূর্ণ করি-- রেখেছে যেমন সুধাকর
দেবতার গুপ্ত সুধা যুগযুগান্তর
আপনারে সুধাপাত্র করি, বিধাতার
পুণ্য অগ্নি জ্বালায়ে রেখেছে অনিবার
সবিতা যেমন সযতনে, কমলার
চরণকিরণে যথা পরিয়াছে হার
সুনির্মল গগনের অনন্ত ললাট।
হে মহিমাময়ী, মোরে করেছ সম্রাট।
আরো দেখুন
জয়পরাজয়
Stories
রাজকন্যার নাম অপরাজিতা। উদয়নারায়ণের সভাকবি শেখর তাঁহাকে কখনো চক্ষেও দেখেন নাই। কিন্তু যেদিন কোনো নূতন কাব্য রচনা করিয়া সভাতলে বসিয়া রাজাকে শুনাইতেন, সেদিন কণ্ঠস্বর ঠিক এতটা উচ্চ করিয়া পড়িতেন যাহাতে তাহা সেই সমুচ্চ গৃহের উপরিতলের বাতায়নবর্তিনী অদৃশ্য শ্রোত্রীগণের কর্ণপথে প্রবেশ করিতে পারে। যেন তিনি কোনো-এক অগম্য নক্ষত্রলোকের উদ্দেশে আপনার সংগীতোচ্ছ্বাস প্রেরণ করিতেন যেখানে জ্যোতিষ্ক-মণ্ডলীর মধ্যে তাঁহার জীবনের একটি অপরিচিত শুভগ্রহ অদৃশ্য মহিমায় বিরাজ করিতেছেন।
কখনো ছায়ার মতন দেখিতে পাইতেন, কখনো নূপুরশিঞ্জনের মতন শুনা যাইত; বসিয়া বসিয়া মনে মনে ভাবিতেন, সে কেমন দুইখানি চরণ যাহাতে সেই সোনার নূপুর বাঁধা থাকিয়া তালে তালে গান গাহিতেছে। সেই দুইখানি রক্তিম শুভ্র কোমল চরণতল প্রতি পদক্ষেপে কী সৌভাগ্য কী অনুগ্রহ কী করুণার মতো করিয়া পৃথিবীকে স্পর্শ করে। মনের মধ্যে সেই চরণদুটি প্রতিষ্ঠা করিয়া কবি অবসরকালে সেইখানে আসিয়া লুটাইয়া পড়িত এবং সেই নূপুরশিঞ্জনের সুরে আপনার গান বাঁধিত।
আরো দেখুন
যদি আসে তবে
Songs
যদি আসে তবে কেন যেতে চায়।
দেখা দিয়ে তবে কেন গো লুকায়॥
     চেয়ে থাকে ফুল হৃদয় আকুল--
          বায়ু বলে এসে 'ভেসে যাই'।
          ধরে রাখো, ধরে রাখো--
     সুখপাখি ফাঁকি দিয়ে উড়ে যায়॥
পথিকের বেশে সুখনিশি এসে
বলে হেসে হেসে 'মিশে যাই'।
     জেগে থাকো, সখী, জেগে থাকো--
     বরষের সাধ নিমেষে মিলায়॥
আরো দেখুন