নামের খেলা
Stories
প্রথম বয়সেই সে কবিতা লিখতে শুরু করে।
বহু যত্নে খাতায় সোনালি কালির কিনারা টেনে, তারই গায়ে লতা এঁকে, মাঝখানে লাল কালি দিয়ে কবিতাগুলি লিখে রাখত। আর, খুব সমারোহে মলাটের উপর লিখত, শ্রীকেদারনাথ ঘোষ।
আরো দেখুন
সিন্ধুতরঙ্গ
Verses
        পুরী-তীর্থযাত্রী তরণীর নিমজ্জন উপলক্ষে
    দোলে রে প্রলয় দোলে           অকূল সমুদ্র-কোলে,
                      উৎসব ভীষণ।
    শত পক্ষ ঝাপটিয়া                বেড়াইছে দাপটিয়া
                      দুর্দম পবন।
    আকাশ সমুদ্র-সাথে              প্রচণ্ড মিলনে মাতে,
         অখিলের আঁখিপাতে আবরি তিমির।
    বিদ্যুৎ চমকে ত্রাসি,           হা হা করে ফেনরাশি,
         তীক্ষ্ণ শ্বেত রুদ্র হাসি জড়-প্রকৃতির।
    চক্ষুহীন কর্ণহীন                    গেহহীন স্নেহহীন
                      মত্ত দৈত্যগণ
         মরিতে ছুটেছে কোথা, ছিঁড়েছে বন্ধন।
    হারাইয়া চারি ধার                  নীলাম্বুধি অন্ধকার
                      কল্লোলে, ক্রন্দনে,
    রোষে, ত্রাসে, ঊর্ধ্বশ্বাসে,         অট্টরোলে, অট্টহাসে,
                      উন্মাদ গর্জনে,
    ফাটিয়া ফুটিয়া উঠে,             চূর্ণ হয়ে যায় টুটে,
         খুঁজিয়া মরিছে ছুটে আপনার কূল--
    যেন রে পৃথিবী ফেলি         বাসুকী করিছে কেলি
         সহস্রৈক ফণা মেলি, আছাড়ি লাঙ্গুল।
    যেন রে তরল নিশি                 টলমলি দশ দিশি
                      উঠিছে নড়িয়া,
         আপন নিদ্রার জাল ফেলিছে ছিঁড়িয়া।
    নাই সুর, নাই ছন্দ,               অর্থহীন, নিরানন্দ
                      জড়ের নর্তন।
    সহস্র জীবনে বেঁচে               ওই কি উঠিছে নেচে
                      প্রকাণ্ড মরণ?
    জল বাষ্প বজ্র বায়ু               লভিয়াছে অন্ধ আয়ু,
         নূতন জীবনস্নায়ু টানিছে হতাশে,
    দিগ্বিদিক নাহি জানে,            বাধাবিঘ্ন নাহি মানে
         ছুটেছে প্রলয়-পানে আপনারি ত্রাসে;
    হেরো, মাঝখানে তারি            আট শত নরনারী
                      বাহু বাঁধি বুকে,
         প্রাণে আঁকড়িয়া প্রাণ, চাহিয়া সম্মুখে।
    তরণী ধরিয়া ঝাঁকে--         রাক্ষসী ঝটিকা হাঁকে,
                      "দাও, দাও, দাও!"
    সিন্ধু ফেনোচ্ছল ছলে           কোটি ঊর্ধ্বকরে বলে,
                      "দাও, দাও, দাও!"
    বিলম্ব দেখিয়া রোষে           ফেনায়ে ফেনায়ে ফোঁষে,
         নীল মৃত্যু মহাক্রোশে শ্বেত হয়ে উঠে।
    ক্ষুদ্র তরী গুরুভার           সহিতে পারে না আর,
         লৌহবক্ষ ওই তার যায় বুঝি টুটে।
    অধ ঊর্ধ্ব এক হয়ে                  ক্ষুদ্র এ খেলনা লয়ে
                      খেলিবারে চায়।
             দাঁড়াইয়া কর্ণধার তরীর মাথায়।
    নরনারী কম্পমাপ                ডাকিতেছে, ভগবান!
                      হায় ভগবান!
    দয়া করো, দয়া করো!              উঠিছে কাতর স্বর,
                      রাখো রাখো প্রাণ!
    কোথা সেই পুরাতন                  রবি শশী তারাগণ
             কোথা আপনার ধন ধরণীর কোল!
    আজন্মের স্নেহসার             কোথা সেই ঘরদ্বার,
         পিশাচী এ বিমাতার হিংস্র উতরোল!
    যে দিকে ফিরিয়া চাই              পরিচিত কিছু নাই,
                      নাই আপনার--
             সহস্র করাল মুখ সহস্র-আকার।
    ফেটেছে তরণীতল,              সবেগে উঠিছে জল,
                      সিন্ধু মেলে গ্রাস।
    নাই তুমি, ভগবান,             নাই দয়া, নাই প্রাণ--
                      জড়ের বিলাস।
    ভয় দেখে ভয় পায়,             শিশু কাঁদে উভরায়--
             নিদারুণ হায়-হায় থামিল চকিতে।
    নিমেষেই ফুরাইল,                   কখন জীবন ছিল
             কখন জীবন গেল নারিল লখিতে।
    যেন রে একই ঝড়ে                নিবে গেল একত্তরে
                    শত দীপ আলো,
             চকিতে সহস্র গৃহে আনন্দ ফুরালো।
    প্রাণহীন এ মত্ততা              না জানে পরের ব্যাথা,
                    না জানে আপন।
    এর মাঝে কেন রয়                ব্যথাভরা স্নেহময়
                    মানবের মন।
    মা কেন রে এইখানে,           শিশুচায় তার পানে,
          ভাই সে ভায়ের টানে কেন পড়ে বুকে।
    মধুর রবির করে                  কত ভালোবাসা-ভরে
          কতদিন খেলা করে কত সুখে দুখে।
    কেন করে টলমল               দুটি ছোটো অশ্রুজল,
                    সকরুণ আশা।
          দীপশিখাসম কাঁপে ভীত ভালোবাসা।
    এমন জড়ের কোলে           কেমনে নির্ভয়ে দোলে
                    নিখিল মানব।
    সব সুখ সব আশ              কেন নাহি করে গ্রাস
                    মরণ দানব।
    ওই-যে জন্মের তরে              জননী ঝাঁপায়ে পড়ে
          কেন বাঁধে বক্ষ-'পরে সন্তান আপন।
    মরণের মুখে ধায়,        সেথাও দিবে না তায়--
          কাড়িয়া রাখিতে চায় হৃদয়ের ধন।
    আকাশেতে পারাবারে           দাঁড়ায়েছে এক ধারে
                    এক ধারে নারী,
        দুর্বল শিশুটি তার কে লইবে কাড়ি?
    এ বল কোথায় পেলে,          আপন কোলের ছেলে
                    এত ক'রে টানে।
    এ নিষ্ঠুর জহস্রোতে            প্রেম এল কোথা হতে
                    মানবের প্রাণে।
    নৈরাশ্য কভু না জানে,           বিপত্তি কিছু না মানে,
               অপূর্ব অমৃতপাটে অনন্ত নবীন--
    এমন মায়ের প্রাণ                  যে বিশ্বের কোনোখান
             তিলেক পেয়েছে স্থান সে কি মাতৃহীন?
    এ প্রলয়-মাঝখানে                  অবলা জননী-প্রাণে
                    স্নেহ মৃত্যুজয়ী--
         এ স্নেহ জাগায়ে রাখে কোন্‌ স্নেহময়ী?
    পাশাপাশি এক ঠাঁই           দয়া আছে, দয়া নাই--
                    বিষম সংশয়।
    মহাশঙ্কা মহা-আশা                একত্র বেঁধেছে বাসা,
                    এক-সাথে রয়।
    কে বা সত্য, কে বা মিছে,     নিশিদিন আকুলিছে,
         কভু ঊর্ধ্বে কভু নীচে টানিছে হৃদয়।
    জড় দৈত্য শক্তি হানে,       মিনতি নাহিক মানে--
         প্রেম এসে কোলে টানে, দূর করে ভয়।
    এ কি দুই দেবতার                দ্যূতখেলা অনিবার
                    ভাঙাগড়াময়?
          চিরদিন অন্তহীন জয়পরাজয়?
আরো দেখুন
নতুন পুতুল
Stories
এই গুণী কেবল পুতুল তৈরি করত; সে পুতুল রাজবাড়ির মেয়েদের খেলার জন্যে।
বছরে বছরে রাজবাড়ির আঙিনায় পুতুলের মেলা বসে। সেই মেলায় সকল কারিগরই এই গুণীকে প্রধান মান দিয়ে এসেছে।
আরো দেখুন
একটা আষাঢ়ে গল্প
Stories
দূর সমুদ্রের মধ্যে একটা দ্বীপ। সেখানে কেবল তাসের সাহেব, তাসের বিবি, টেক্কা এবং গোলামের বাস। দুরি তিরি হইতে নহলা-দহলা পর্যন্ত আরো অনেক-ঘর গৃহস্থ আছে কিন্তু তাহারা উচ্চজাতীয় নহে।
টেক্কা সাহেব গোলাম এই তিনটেই প্রধান বর্ণ, নহলা-দহলারা অন্ত্যজ-- তাহাদের সহিত এক পঙ্‌ক্তিতে বসিবার যোগ্য নহে।
আরো দেখুন
মেঘ ও রৌদ্র
Stories
পূর্বদিনে বৃষ্টি হইয়া গিয়াছে। আজ ক্ষান্তবর্ষণ প্রাতঃকালে ম্লান রৌদ্র ও খণ্ড মেঘে মিলিয়া পরিপক্কপ্রায় আউশ ধানের ক্ষেত্রের উপর পর্যায়ক্রমে আপন আপন সুদীর্ঘ তুলি বুলাইয়া যাইতেছিল; সুবিস্তৃত শ্যাম চিত্রপট একবার আলোকের স্পর্শে উজ্জ্বল পাণ্ডুবর্ণ ধারণ করিতেছিল আবার পরক্ষণেই ছায়াপ্রলেপে গাঢ় স্নিগ্ধতায় অঙ্কিত হইতেছিল।
যখন সমস্ত আকাশরঙ্গভূমিতে মেঘ এবং রৌদ্র, দুইটি মাত্র অভিনেতা, আপন আপন অংশ অভিনয় করিতেছিল তখন নিম্নে সংসাররঙ্গভূমিতে কত স্থানে কত অভিনয় চলিতেছিল তাহার আর সংখ্যা নাই।
আরো দেখুন
পথ
Verses
আমি পথ, দূরে দূরে দেশে দেশে ফিরে ফিরে শেষে
                      দুয়ার-বাহিরে থামি এসে।
ভিতরেতে গাঁথা চলে নানা সূত্রে রচনার ধারা,
আমি পাই ক্ষণে ক্ষণে তারি ছিন্ন অংশ অর্থহারা,
সেথা হতে লেখে মোর ধূলিপটে দীপরশ্মিরেখা
                      অসম্পূর্ণ লেখা।
জীবনের সৌধমাঝে কত কক্ষ কত না মহলা,
                      তলার উপরে কত তলা।
আজন্মবিধবা তারি এক প্রান্তে রয়েছি একাকী,
সবার নিকটে থেকে তবুও অসীম দূরে থাকি,
লক্ষ্য নহি উপলক্ষ, দেশ নহি আমি যে উদ্দেশ--
                      মোর নাহি শেষ।
উৎসবসভায় যেতে যে পায় আহ্বান-পত্রখানি
                      তাহারে বহন করে আনি।
সে লিপির খণ্ডগুলি মোর বক্ষে উড়ে এসে পড়ে,
ধুলায় করিয়া লুপ্ত তাদের উড়ায়ে দিই ঝড়ে,
আমি মালা গেঁথে চলি শত শত জীর্ণ শতাব্দীর
                      বহু বিস্মৃতির।
কেহ যারে নাহি শোনে, সবাই যাহারে বলে "জানি',
                      আমি সেই পুরাতন বাণী।
বণিকের পণ্যযান হে তুমি রাজার জয়রথ,
আমি চলিবার পথ, সেই আমি ভুলিবার পথ,
তীব্রদুঃখ মহাদম্ভ চিহ্ন মুছে গিয়েছে সবাই--
                      কিছু নাই, নাই।
কভু সুখে কভু দুঃখে নিয়ে চলি; সুদিন দুর্দিন
                      নাহি বুঝি আমি উদাসীন।
বারবার কচি ঘাস কোথা হতে আসে মোর কোলে,
চলে যায়-- সেও যায় যে যায় তাহারে দ'লে দ'লে;
বিচিত্রের প্রয়োজনে অবিচিত্র আমি শূন্যময়--
                      কিছু নাহি রয়।
বসিতে না চাহে কেহ, কাহারো কিছু না সহে দেরি--
                      কারো নই, তাই সকলেরই।
বামে মোর শস্যক্ষেত্র, দক্ষিণে আমার লোকালয়--
প্রাণ সেথা দুই হস্তে বর্তমান আঁকড়িয়া রয়।
আমি সর্ববন্ধহীন নিত্য চলি তারি মধ্যখানে।
                      ভবিষ্যের পানে।
তাই আমি চিররিক্ত, কিছু নাহি থাকে মোর পুঁজি--
                      কিছু নাহি পাই, নাহি খুঁজি।
আমারে ভুলিবে ব'লে যাত্রীদল গান গাহে সুরে--
পারি নে রাখিতে তাহা, সে গান চলিয়া যায় দূরে।
বসন্ত আমার বুকে আসে যবে ধুলায় আকুল
                      নাহি দেয় ফুল।
পৌঁছিয়া ক্ষতির প্রান্তে বিত্তহীন একদিন শেষে
                      শয্যা পাতে মোর পাশে এসে।
পান্থের পাথেয় হতে খসে পড়ে যাহা ভাঙাচোরা
ধূলিরে বঞ্চনা করি কাড়িয়া তুলিয়া লয় ওরা;
আমি রিক্ত, ওরা রিক্ত, মোর 'পরে নাই প্রীতিলেশ--
                      মোরে করে দ্বেষ।
শুধু শিশু বোঝে মোরে, আমারে সে জানে ছুটি ব'লে--
                      ঘর ছেড়ে আসে তাই চলে
নিষেধ বা অনুমতি মোর মাঝে না দেয় পাহারা,
আবশ্যকে নাহি রচে বিবিধের বস্তুময় কারা,
বিধাতার মতো শিশু লীলা দিয়ে শূন্য দেয় ভরে--
                      শিশু বোঝে মোরে।
বিলুপ্তির ধূলি দিয়ে যাহা খুশি সৃষ্টি করে তাই,
                      এই আছে এই তাহা নাই।
ভিত্তিহীন ঘর বেঁধে আনন্দে কাটায়ে দেয় বেলা,
মূল্য যার কিছু নাই তাই দিয়ে মূল্যহীন খেলা,
ভাঙাগড়া দুই নিয়ে নৃত্য তার অখণ্ড উল্লাসে--
                      মোরে ভালোবাসে।
আরো দেখুন
আগমনী
Stories
আয়োজন চলেইছে। তার মাঝে একটুও ফাঁক পাওয়া যায় না যে ভেবে দেখি, কিসের আয়োজন।
তবুও কাজের ভিড়ের মধ্যে মনকে এক-একবার ঠেলা দিয়ে জিজ্ঞাসা করি, 'কেউ আসবে বুঝি?'
আরো দেখুন
সওগাত
Stories
পুজোর পরব কাছে। ভাণ্ডার নানা সামগ্রীতে ভরা। কত বেনারসি কাপড়, কত সোনার অলংকার; আর ভাণ্ড ভ'রে ক্ষীর দই, পাত্র ভ'রে মিষ্টান্ন।
মা সওগাত পাঠাচ্ছেন।
আরো দেখুন
তোতাকাহিনী
Stories
এক-যে ছিল পাখি। সে ছিল মূর্খ। সে গান গাহিত, শাস্ত্র পড়িত না। লাফাইত, উড়িত, জানিত না কায়দাকানুন কাকে বলে।
রাজা বলিলেন, 'এমন পাখি তো কাজে লাগে না, অথচ বনের ফল খাইয়া রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়।'
আরো দেখুন