৭ বৈশাখ, ১৩১৩


 

বৈশাখে (boishakhe)


   তপ্ত হাওয়া দিয়েছে আজ

              আমলাগাছের কচি পাতায়,

   কোথা থেকে ক্ষণে ক্ষণে

              নিমের ফুলে গন্ধে মাতায়।

   কেউ কোথা নেই মাঠের 'পরে,

   কেউ কোথা নেই শূন্য ঘরে,

   আজ দুপুরে আকাশতলে

              রিমিঝিমি নূপুর বাজে।

   বারে বারে ঘুরে ঘুরে

   মৌমাছিদের গুঞ্জসুরে

   কার চরণের নৃত্য যেন

              ফিরে আমার বুকের মাঝে।

   রক্তে আমার তালে তালে

              রিমিঝিমি নূপুর বাজে।

 

   ঘন মহুল-শাখার মতো

              নিশ্বসিয়া উঠিছে প্রাণ,

   গায়ে আমার লেগেছে কার

              এলোচুলের সুদূর ঘ্রাণ।

আজি রোদের প্রখর তাপে

   বাঁধের জলে আলো কাঁপে,

   বাতাস বাজে মর্মরিয়া

              সারি-বাঁধা তালের বনে।

   আমার মনের মরীচিকা

   আকাশপারে পড়ল লিখা,

   লক্ষ্যবিহীন দূরের 'পরে

              চেয়ে আছি আপন-মনে।

   অলস ধেনু চরে বেড়ায়

              সারি-বাঁধা তালের বনে।

 

   আজিকার এই তপ্ত দিনে

              কাটল বেলা এমনি করে,

   গ্রামের ধারে ঘাটের পথে

              এল গভীর ছায়া পড়ে।

   সন্ধ্যা এখন পড়ছে হেলে

   শালবনেতে আঁচল মেলে,

   আঁধার-ঢালা দিঘির ঘাটে

              হয়েছে শেষ কলস ভরা।

   মনের কথা কুড়িয়ে নিয়ে

   ভাবি মাঠের মধ্যে গিয়ে--

   সারা দিনের অকাজে আজ

              কেউ কি মোরে দেয় নি ধরা।

   আমার কি মন শূন্য, যখন

              হল বধূর কলস ভরা।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •