বুয়েনোস এয়ারিস,  ২২ নভেম্বর, ১৯২৪


 

বিপাশা (bipasha)


মায়ামৃগী, নাই বা তুমি

          পড়লে প্রেমের ফাঁদে।

ফাগুন-রাতে চোরা মেঘে

          নাই হরিল চাঁদে।

বাঁধন-কাটা ভাব্‌না তোমার

          হাওয়ায় পাখা মেলে,

দেহমনে চঞ্চলতার

          নিত্য যে ঢেউ খেলে।

ঝরনা-ধারার মতো সদাই

          মুক্ত তোমার গতি,

নাই বা নিলে তটের শরণ

          তায় বা কিসের ক্ষতি।

শরৎপ্রাতের মেঘ যে তুমি

          শুভ্র আলোয় ধোওয়া,

একটুখানি অরুণ-আভার

          সোনার-হাসি-ছোঁওয়া।

শূন্য পথে মনোরথে

          ফেরো আকাশ-পার,

বুকের মাঝে নাই বহিলে

          অশ্রুজলের ভার।

এমনি করেই যাও খেলে যাও

          অকারণের খেলা,

ছুটির স্রোতে যাক-না ভেসে

          হালকা খুশির ভেলা।

পথে চাওয়ার ক্লান্তি কেন

          নামবে আঁখির পাতে,

কাছের সোহাগ ছাড়বে কেন

          দূরের দুরাশাতে।

তোমার পায়ের নূপুরখানি

          বাজাক নিত্যকাল

অশোকবনের চিকন পাতার

          চমক-আলোর তাল।

রাতের গায়ে পুলক দিয়ে

          জোনাক যেমন জ্বলে

তেমনি তোমার খেয়ালগুলি

          উড়ুক স্বপন-তলে।

যারা তোমার সঙ্গ-কাঙাল

          বাইরে বেড়ায় ঘুরে--

ভিড় যেন না করে তোমার

          মনের অন্তঃপুরে।

সরোবরের পদ্ম তুমি,

          আপন চারি দিকে

মেলে রেখো তরল জলের

          সরল বিঘ্নটিকে।

গন্ধ তোমার হোক-না সবার,

          মনে রেখো তবু

বৃন্ত যেন চুরির ছুরি

          নাগাল না পায় কভু।

আমার কথা শুধাও যদি--

          চাবার তরেই চাই,

পাবার তরে চিত্তে আমার

          ভাব্‌ না কিছুই নাই।

তোমার পানে নিবিড় টানের

          বেদন-ভরা সুখ

মনকে আমার রাখে যেন

          নিয়ত উৎসুক।

চাই না তোমায় ধরতে আমি

          মোর বাসনায় ঢেকে,

আকাশ থেকেই গান গেয়ে যাও--

          নয় খাঁচাটার থেকে।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •