১০ আশ্বিন, ১৩৩৫


 

প্রচ্ছন্না (prochchhonna)


বিদেশে ওই সৌধশিখর-'পরে

ক্ষণকালের তরে

পথ হতে যে দেখেছিলেম, ওগো আধেক-দেখা

মনে হল তুমি অসীম একা

দাঁড়িয়েছিলে যেন আমার একটি বিজন খনে

আর কিছু নাই সেথায় ত্রিভুবনে।

সামনে তোমার মুক্ত আকাশ, অরণ্যতল নীচে,

ক্ষণে ক্ষণে ঝাউয়ের শাখা প্রলাপ মর্মরিছে।

                                      মুখ দেখা না যায়,

                             পিঠের 'পরে বেণীটি লুটায়।

          থামের পাশে হেলান-দেওয়া ঈষৎ দেখি আধখানি ওই দেহ,

                             অসম্পূর্ণ কয়টি রেখায় কী যেন সন্দেহ।

                   বন্দিনী কি ভোগের কারাগারে,

          ভাবনা তোমার উড়ে চলে দূর দিগন্তপারে?

            সোনার বরন শস্যখেতে, কোন্‌-সে নদীতীরে

                   পূজারীদের চলার পথে, উচ্চচূড়া দেবতামন্দিরে

                             তোমার চিরপরিচিত প্রভাত-আলোখানি,

                   তারি স্মৃতি চক্ষে তোমার জল কি দিল আনি।

                                      কিম্বা তুমি রাজেন্দ্রসোহাগী,

                   সেই বহুবল্লভের প্রেমে দ্বিধার দুঃখ হৃদয়ে রয় জাগি,

প্রশ্ন কি তাই শুধাও নক্ষত্রেরে

সপ্তঋষির কাছে তোমার প্রণামখানি সেরে।

              হয়তো বৃথাই সাজ,

তৃপ্তিবিহীন চিত্ততলে তৃষ্ণা-অনল দহন করে আজও;

          তাই কি শূন্য আকাশ-পানে চাও,

              উপেক্ষিত যৌবনেরি ধিক্কার জানাও?

                   কিম্বা আছ চেয়ে

        আসবে সে কোন্‌ দুঃসাহসী গোপন পন্থা বেয়ে,

                   বক্ষ তোমার দোলে,

              রক্ত নাচে ত্রাসের উতরোলে।

     স্তব্ধ আছে তরুশ্রেণী মরণছায়া ঢাকা,

          শূন্যে ওড়ে অদৃশ্য কোন্‌ পাখা।

আমি পথিক যাব-যে কোন্‌ দূরে;

          তুমি রাজার পুরে

             মাঝে মাঝে কাজের অবসরে

          বাহির হয়ে আসবে হোথায় ওই অলিন্দ-'পরে,

        দেখবে চেয়ে অকারণে স্তব্ধ নেত্রপাতে

                        গোধূলিবেলাতে

             বনের সবুজ তরঙ্গ পারায়ে

     নদীর প্রান্তরেখায় যে পথ গিয়েছে হারায়ে।

              তোমার ইচ্ছা চলবে কল্পনাতে

          সুদূর পথে আভাসরূপী সেই অজানার সাথে

             পান্থ যে জন নিত্য চলে যায়।

              আমি পথিক হায়,

     পিছন-পানে এই বিদেশের সুদূর সৌধশিরে

              ইচ্ছা আমার পাঠাই ফিরে ফিরে

   ছায়ায়-ঢাকা আধেক-দেখা তোমার বাতায়নে,

যে মুখ তোমার লুকিয়ে ছিল সে মুখ আঁকি মনে।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •