৬ আষাঢ়, ১৩৩৯


 

ধাবমান (dhaboman)


"যেয়ো না, যেয়ো না' বলি কারে ডাকে ব্যর্থ এ ক্রন্দন।

           কোথা সে বন্ধন

      অসীম যা করিবে সীমারে।

সংসার যাবারই বন্যা, তীব্রবেগে চলে পরপারে

এ পারের সব-কিছু রাশি রাশি নিঃশেষে ভাসায়ে,

           কাঁদায়ে হাসায়ে।

অস্থির সত্তার রূপ ফুটে আর টুটে;

"নয় নয়' এই বাণী ফেনাইয়া মুখরিয়া উঠে

      মহাকাল সমুদ্রের পরে।

           সেই স্বরে

রুদ্রের ডম্বরুধ্বনি বাজে

           অসীম অম্বর-মাঝে ট্ট

      "নয় নয় নয়'।

ওরে মন, ছাড়ো লোভ, ছাড়ো শোক, ছাড়ো ভয়।

সৃষ্টি নদী, ধারা তারি নিরন্ত প্রলয়।

যাবে সব যাবে চলে তবু ভালোবাসি--

চমকে বিনাশ-মাঝে অস্তিত্বের হাসি

           আনন্দের বেগে।

      মরণের বীণাতারে উঠে জেগে

           জীবনের গান;

      নিরন্তর ধাবমান

           চঞ্চল মাধুরী।

      ক্ষণে ক্ষণে উঠে স্ফুরি

           শাশ্বতের দীপশিখা

উজ্জ্বলিয়া মুহূর্তের মরীচিকা

অতল কান্নার স্রোত মাতার করুণ স্নেহ বয়,

      প্রিয়ের হৃদয়বিনিময়।

বিলোপের রঙ্গভূমে বীরের বিপুল বীর্যমদ

   ধরণীর সৌন্দর্যসম্পদ।

           অসীমের দান

ক্ষণিকের করপুটে,তার পরিমাণ

      সময়ের মাপে নহে।

কাল ব্যাপি রহে নাই রহে

      তবু সে মহান;

যতক্ষণ আছে তারে মূল্য দাও পণ করি প্রাণ।

      ধায় যবে বিদায়ের রথ

জয়ধ্বনি করি তারে ছেড়ে দাও পথ

      আপনারে ভুলি।

           যতটুকু ধূলি

      আজ তুমি করি অধিকার

তার মাঝে কী রহে না, তুচ্ছ সে বিচার।

           বিরাটের মাঝে

এক রূপে নাই হয়ে অন্য রূপে তাহাই বিরাজে।

      ছেড়ে এসো আপনার অন্ধকূপ,

মুক্তাকাশে দেখো চেয়ে প্রলয়ের আনন্দস্বরূপ।

      ওরে শোকাতুর, শেষে

শোকের বুদ্‌বুদ্‌ তোর অশোক-সমুদ্রে যাবে ভেসে?

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •