২৫ শ্রাবণ, ১৩৩৯


 

পুকুর-ধারে (pukur dhar)


           দোতলার জানলা থেকে চোখে পড়ে

               পুকুরের একটি কোণা।

                   ভাদ্রমাসে কানায় কানায় জল।

           জলে গাছের গভীর ছায়া টল্‌টল্‌ করছে

                   সবুজ রেশমের আভায়।

           তীরে তীরে কলমি শাক আর হেলঞ্চ।

        ঢালু পাড়িতে সুপারি গাছ ক'টা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।

এ ধারের ডাঙায় করবী, সাদা রঙন, একটি শিউলি;

        দুটি অযত্নের রজনীগন্ধায় ফুল ধরেছে গরিবের মতো।

বাঁখারি-বাঁধা মেহেদির বেড়া,

        তার ও পারে কলা পেয়ারা নারকেলের বাগান;

আরো দূরে গাছপালার মধ্যে একটা কোঠাবাড়ির ছাদ,

           উপর থেকে শাড়ি ঝুলছে।

মাথায় ভিজে চাদর জড়ানো গা-খোলা মোটা মানুষটি

        ছিপ ফেলে বসে আছে বাঁধা ঘাটের পৈঁঠাতে,

               ঘণ্টার পর ঘণ্টা যায় কেটে।

 

বেলা পড়ে এল।

        বৃষ্টি-ধোওয়া আকাশ,

বিকেলের প্রৌঢ় আলোয় বৈরাগ্যের ম্লানতা।

    ধীরে ধীরে হাওয়া দিয়েছে,

        টলমল করছে পুকুরের জল,

           ঝিল্‌মিল্‌ করছে বাতাবি লেবুর পাতা।

 

চেয়ে দেখি আর মনে হয়

        এ যেন আর কোনো-একটা দিনের আবছায়া;

           আধুনিকের বেড়ার ফাঁক দিয়ে

               দূর কালের কার একটি ছবি নিয়ে এল মনে।

স্পর্শ তার করুণ, স্নিগ্ধ তার কণ্ঠ,

        মুগ্ধ সরল তার কালো চোখের দৃষ্টি।

তার সাদা শাড়ির রাঙা চওড়া পাড়

        দুটি পা ঘিরে ঢেকে পড়েছে;

           সে আঙিনাতে আসন বিছিয়ে দেয়,

        সে আঁচল দিয়ে ধুলো দেয় মুছিয়ে;

    সে আম-কাঁঠালের ছায়ায় ছায়ায় জল তুলে আনে,

           তখন দোয়েল ডাকে শজনের ডালে,

    ফিঙে লেজ দুলিয়ে বেড়ায় খেজুরের ঝোপে।

        যখন তার কাছে বিদায় নিয়ে চলে আসি

    সে ভালো করে কিছুই বলতে পারে না;

কপাট অল্প একটু ফাঁক করে পথের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,

               চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •