শন্তিনিকেতেন, ১৯ ভাদ্র, ১৩৪২


 

  ঋতু-অবসান (ritu obosan)


   একদা বসন্তে মোর বনশাখে যবে

                 মুকুলে পল্লবে

            উদ্‌বারিত আনন্দের আমন্ত্রণ

  গন্ধে বর্ণে দিল ব্যাপি ফাল্গুনের পবন গগন,

            সেদিন এসেছে যারা বীথিকায়--

                 কেহ এল কুণ্ঠিত দ্বিধায়;

  চটুল চরণ কারো তৃণে তৃণে বাঁকিয়া বাঁকিয়া

            নির্দয় দলনচিহ্ন গিয়েছে আঁকিয়া

  অসংকোচ নূপুরঝংকারে,

            কটাক্ষের খরধারে

                 উচ্চহাস্য করেছে শাণিত;

            কেহ বা করেছে ম্লান অমানিত

  অকারণ সংশয়েতে আপনারে

            অবগুণ্ঠনের অন্ধকারে;

       কেহ তারা নিয়েছিল তুলি

গোপনে ছায়ায় ফিরি তরুতলে ঝরা ফুলগুলি;

            কেহ ছিন্ন করি

                        তুলেছিল মাধবীমঞ্জরী,

                   কিছু তার পথে পথে ফেলেছে ছড়ায়ে,

                        কিছু তার বেণীতে জড়ায়ে

  অন্যমনে গেছে চলে গুন্‌গুন্‌ গানে।

  আজি এ ঋতুর অবসানে

            ছায়াঘন বীথি মোর নিস্তব্ধ নির্জন;

                     মৌমাছির মধু-আহরণ

                          হল সারা;

                     সমীরণ গন্ধহারা

            তৃণে তৃণে ফেলিছে নিশ্বাস।

  পাতার আড়াল ভরি একে একে পেতেছে প্রকাশ

            অচঞ্চল ফলগুচ্ছ যত,

                 শাখা অবনত।

                     নিয়ে সাজি

                কোথা তারা গেল আজি--

            গোধূলি ছায়াতে হল লীন

                 যারা এসেছিল একদিন

                    কলরবে কান্না ও হাসিতে

                     দিতে আর নিতে।

  আজি লয়ে মোর দানভার

       ভরিয়াছি নিভৃত অন্তর আপনার--

            অপ্রগল্‌ভ গূঢ় সার্থকতা

                 নাহি জানে কথা।

       নিশীথ যেমন স্তব্ধ নিষুপ্ত ভুবনে

                 আপনার মনে

            আপনার তারাগুলি

  কোন্‌ বিরাটের পায়ে ধরিয়াছে তুলি

       নাহি জানে আপনি সে--

  সুদূর প্রভাত-পানে চাহিয়া রয়েছে নির্নিমেষে।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •