শান্তিনিকেতন, ৯ শ্রাবণ, ১৩৪১


 

উদাসীন (udasin)


তোমারে ডাকিনু যবে কুঞ্জবনে

                   তখনো আমের বনে গন্ধ ছিল।

জানি না কী লাগি ছিলে অন্যমনে,

          তোমার দুয়ার কেন বন্ধ ছিল।

                   একদিন শাখাভরি এল ফলগুচ্ছ,

                   ভরা অঞ্জলি মোর করি গেলে তুচ্ছ,

                             পূর্ণতা-পানে আঁখি অন্ধ ছিল।

বৈশাখে অকরুণ দারুণ ঝড়ে

সোনার বরন ফল খসিয়া পড়ে।

          কহিনু, "ধুলায় লোটে মোর যত অর্ঘ্য,

          তব করতলে যেন পায় তার স্বর্গ।'

                   হায় রে, তখনো মনে দ্বন্দ্ব ছিল।

তোমার সন্ধ্যা ছিল প্রদীপহীনা,

আঁধারে দুয়ারে তব বাজানু বীণা।

                   তারার আলোক-সাথে মিলি মোর চিত্ত

                   ঝংকৃত তারে তারে করেছিল নৃত্য,

                             তোমার হৃদয় নিস্পন্দ ছিল।

          

তন্দ্রাবিহীন নীড়ে ব্যাকুল পাখি

হারায়ে কাহারে বৃথা মরিল ডাকি।        

          প্রহর অতীত হল, কেটে গেল লগ্ন,

          একা ঘরে তুমি ঔদাস্যে নিমগ্ন,

                   তখনো দিগঞ্চলে চন্দ্র ছিল।

কে বোঝে কাহার মন! অবোধ হিয়া

দিতে চেয়েছিল বাণী নিঃশেষিয়া।

          আশা ছিল, কিছু বুঝি আছে অতিরিক্ত

          অতীতের স্মৃতিখানি অশ্রুতে সিক্ত--

                   বুঝিবা নূপুরে কিছু ছন্দ ছিল।

উষার চরণতলে মলিন শশী

রজনীর হার হতে পড়িল খসি।

          বীণার বিলাপ কিছু দিয়েছে কি সঙ্গ,

          নিদ্রার তটতলে তুলেছে তরঙ্গ,

                   স্বপ্নেও কিছু কি আনন্দ ছিল।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •