শ্যামলী, শান্তিনিকেতন, পৌষ, ১৩৪৫


 

ভূমিকা (bhumika)


ধূমকেতু মাঝে মাঝে হাসির ঝাঁটায়

দ্যুলোক ঝাঁটিয়ে নিয়ে কৌতুক পাঠায়

        বিস্মিত সূর্যের সভা ত্বরিতে পারায়ে--

        পরিহাসচ্ছটা ফেলে সুদূরে হারায়ে,

                 সৌর বিদূষক পায় ছুটি।

আমার জীবনকক্ষে জানি না কী হেতু,

মাঝে মাঝে এসে পড়ে খ্যাপা ধূমকেতু--

        তুচ্ছ প্রলাপের পুচ্ছ শূন্যে দেয় মেলি,

        ক্ষণতরে কৌতুকের ছেলেখেলা খেলি

                 নেড়ে দেয় গম্ভীরের ঝুঁটি।

এ জগৎ মাঝে মাঝে কোন্‌ অবকাশে

কখনো বা মৃদুস্মিত কভু উচ্চহাসে

        হেসে ওঠে, দেখা যায় আলোকে ঝলকে--

        তারা কেহ ধ্রুব নয়, পলকে পলকে

                 চিহ্ন তার নিয়ে যায় মুছে।

তিমির-আসনে যবে ধ্যানমগ্ন রাতি

উল্কাবরিষনকর্তা করে মাতামাতি--

        দুই হাতে মুঠা মুঠা কৌতুকের কণা

        ছড়ায় হরির লুঠ, নাহি যায় গনা,

                 প্রহর-কয়েক যায় ঘুচে।

অনেক অদ্ভুত আছে এ বিশ্বসৃষ্টিতে,

বিধাতার স্নেহ তাহে সহাস্য দৃষ্টিতে।

        তেমনি হালকা হাসি দেবতার দানে

        রয়েছে খচিত হয়ে আমার সম্মানে--

                 মূল্য তার মনে মনে জানি।

এত বুড়ো কোনোকালে হব নাকো আমি

হাসি-তামাশারে যবে কব ছ্যাব্‌লামি।

        এ নিয়ে প্রবীণ যদি করে রাগারাগি

        বিধাতার সাথে তারে করি ভাগাভাগি

        হাসিতে হাসিতে লব মানি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •