সেঁজুতি । শান্তিনিকেতন, ১২ জানুয়ারি, ১৯৪০


 

শেষদৃষ্টি (sheshdrishti)


আজি এ আঁখির শেষদৃষ্টির দিনে

ফাগুনবেলার ফুলের খেলার

               দানগুলি লব চিনে।

দেখা দিয়েছিল মুখর প্রহরে

               দিনের দুয়ার খুলি,

তাদের আভায় আজি মিলে যায়

রাঙা গোধূলির শেষতুলিকায়

ক্ষণিকের রূপ-রচনলীলায়

               সন্ধ্যার রঙগুলি।

যে অতিথিদেহে ভোরবেলাকার

               রূপ নিল ভৈরবী,

অস্তরবির দেহলিদুয়ারে

বাঁশিতে আজিকে আঁকিল উহারে

মুলতানরাগে সুরের প্রতিমা

               গেরুয়া রঙের ছবি।

খনে খনে যত মর্মভেদিনী

               বেদনা পেয়েছে মন

নিয়ে সে দুঃখ ধীর আনন্দে

বিষাদকরুণ শিল্পছন্দে

অগোচর কবি করেছে রচনা

               মাধুরী চিরন্তন।

একদা জীবনে সুখের  শিহর

               নিখিল করেছে প্রিয়।

মরণপরশে আজি কুণ্ঠিত

অন্তরালে সে অবগুণ্ঠিত,

অদেখা আলোকে তাকে দেখা যায়

               কী অনির্বচনীয়।

যা গিয়েছে তার অধরারূপের

               অলখ পরশখানি

যা রয়েছে তারি তারে বাঁধে সুর,

দিক্‌সীমানার পারের সুদূর

কালের অতীত ভাষার অতীত

               শুনায় দৈববাণী।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •