শ্যামলী। শান্তিনিকেতন, ৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৮


 

  প্রশ্ন (proshno)


চতুর্দিকে বহ্নিবাষ্প শূন্যাকাশে ধায় বহুদূরে,

     কেন্দ্রে তার তারাপুঞ্জ মহাকাল-চক্ররথে ঘুরে।

          কত বেগ, কত তাপ, কত ভার, কত আয়তন,

                   সূক্ষ্ম অঙ্কে করেছে গণন

          পণ্ডিতেরা লক্ষ কোটি ক্রোশ দূর হতে

                        দুর্লক্ষ্য আলোতে।

               আপনার পানে চাই,

          লেশমাত্র পরিচয় নাই।

     এ কি কোনো দৃশ্যাতীত জ্যোতি।

কোন্‌ অজানারে ঘিরি এই অজানার নিত্য গতি।

     বহুযুগে বহুদূরে স্মৃতি আর বিস্মৃতি-বিস্তার,

               যেন বাষ্পপরিবেশ তার

     ইতিহাসে পিণ্ড বাঁধে রূপে রূপান্তরে।

"আমি' উঠে ঘনাইয়া কেন্দ্র-মাঝে অসংখ্য বৎসরে।

সুখদুঃখ ভালোমন্দ রাগদ্বেষ ভক্তি সখ্য স্নেহ

          এই নিয়ে গড়া তার সত্তাদেহ;

     এরা সব উপাদান ধাক্কা পায়, হয় আবর্তিত,

                   পুঞ্জিত, নর্তিত।

          এরা সত্য কী যে

               বুঝি নাই নিজে।

          বলি তারে মায়া--

যাই বলি শব্দ সেটা, অব্যক্ত অর্থের উপচ্ছায়া।

               তার পরে ভাবি,

এ অজ্ঞেয় সৃষ্টি "আমি' অজ্ঞেয় অদৃশ্যে যাবে নাবি।

     অসীম রহস্য নিয়ে মুহূর্তের নিরর্থকতায়

          লুপ্ত হবে নানারঙা জলবিম্বপ্রায়,

     অসমাপ্ত রেখে যাবে তার শেষকথা

                   আত্মার বারতা।

     তখনো সুদূরে ঐ নক্ষত্রের দূত

ছুটাবে অসংখ্য তার দীপ্ত পরমাণুর বিদ্যুৎ

                   অপার আকাশ-মাঝে,

                        কিছুই জানি না কোন্‌ কাজে।

বাজিতে থাকিবে শূন্যে প্রশ্নের সুতীব্র আর্তস্বর,

                   ধ্বনিবে না কোনোই উত্তর।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •