ছন্দের মাত্রা - ১
Essays
বহুকাল পূর্বে একটি গান রচনা করেছিলেম। "সবুজপত্রে' সেটি উদ্ধৃত হয়েছিল।
তাছাড়া এই ছন্দে পরবর্তী কালে দুই-একটি শ্লোক লিখেছিলুম। যথা--
আঁধার রজনী পোহালো,
জগৎ পুরিল পুলকে,
বিমল প্রভাতকিরণে
মিলিল দ্যুলোক ভূলোকে।
গোড়াতেই ঢাক বাজনা,
কাজ করা তার কাজ না।
শকতিহীনের দাপনি
আপনারে মারে আপনি।
আসন । দিলে । অনাহূতে,
ভাষণ । দিলে । বীণাতানে,
বুঝি গো। তুমি । মেঘদূতে ।
পাঠায়ে । ছিলে । মোর পানে।
বাদল রাতি এল যবে
বসিয়াছিনু একা একা,
গভীর গুরু গুরু রবে
কী ছবি মনে দিল দেখা।
পথের কথা পুবে হাওয়া
কহিল মোরে থেকে থেকে;
উদাস হয়ে চলে যাওয়া,
খ্যাপামি সেই রোধিবে কে।
আমার তুমি অচেনা যে
সে কথা নাহি মানে হিয়া,
তোমারে কবে মনোমাঝে
জেনেছি আমি না জানিয়া।
ফুলের ডালি কোলে দিনু,
বসিয়াছিলে একাকিনী,
তখনি ডেকে বলেছিনু,
তোমারে চিনি, ওগো চিনি॥
বলেছিনু । বসিতে । কাছে,
দেবে কিছু । ছিল না । আশা,
দেব ব'লে । যেজন । যাচে
বুঝিলে না । তাহারো । ভাষা।
শুকতারা চাঁদের সাথি
বলে, "প্রভু, বেসেছি ভালো,
নিয়ে যেয়ো আমার বাতি
যেথা যাবে তোমার আলো।"
ফুল বলে, "দখিনাহাওয়া,
বাঁধিব না বাহুর ডোরে,
ক্ষণতরে তোমারে পাওয়া
চিরতরে দেওয়া যে মোরে।"
বিজুলি । কোথা হতে এলে,
তোমারে । কে রাখিবে বেঁধে।
মেঘের । বুক চিরি গেলে
অভাগা । মরে কেঁদে কেঁদে।
আগুনে গাঁথা মণিহারে
ক্ষণেক সাজায়েছে যারে,
প্রভাতে মরে হাহাকারে
বিফল রজনীর খেদে।
মোর বনে । ওগো গরবী,
এলে যদি । পথ ভুলিয়া,
তবে মোর । রাঙা করবী
নিজ হাতে । নিয়ো তুলিয়া।
জলে ভরা । নয়নপাতে
বাজিতেছে । মেঘরাগিণী,
কী লাগিয়া । বিজনরাতে
উড়ে হিয়া, । হে বিবাগিনী।
ম্লানমুখে । মিলালো হাসি,
গলে দোলে । নবমালিকা।
ধরাতলে । কী ভুলে আসি
সুর ভোলে । সুরবালিকা।
বারে বারে । যায় চলি । য়া,
ভাসায় ন । য়ননীরে । সে,
বিরহের । ছলে ছলি । য়া
মিলনের । লাগি ফিরে । সে।
যায় নয়নের আড়া লে,
আসে হৃদয়ের মাঝে গো।
বাঁশিটিরে পায়ে মাড়া লে
বুকে তার সুর বাজে গো।
ফুলমালা গেল শুকা য়ে,
দীপ নিবে গেল বাতা সে,
মোর ব্যথাখানি লুকা য়ে
মনে তার রহে গাঁথা সে।
যাবার বেলায় দুয়া রে
তালা ভেঙে নেয় ছিনি য়ে,
ফিরিবার পথ উহা রে
ভাঙা দ্বার দেয় চিনি য়ে॥
আলো এল যে । দ্বারে তব,
ওগো মাধবী । বনছায়া।
দোঁহে মিলিয়া । নবনব
তৃণে বিছায়ে । গাঁথ মায়া।
চাঁপা, তোমার আঙিনাতে
ফেরে বাতাস কাছে কাছে;
আজি ফাগুনে একসাথে
দোলা লাগিয়ো নাচে নাচে॥
বধূ, তোমার দেহলিতে
বর আসিছে দেখিছ কি।
আজি তাহার বাঁশরিতে
হিয়া মিলায়ে দিয়ো, সখি।
সেতারের তারে । ধানশী
মিড়ে মিড়ে উঠে । বাজিয়া।
গোধূলির রাগে । মানসী
সুরে যেন এল । সাজিয়া।
তৃতীয়ার চাঁদ । বাঁকা সে,
আপনারে দেখে । ফাঁকা সে।
তারাদের পানে । তাকিয়ে
কার নাম যায় । ডাকিয়ে,
সাথি নাহি পায় । আকাশে।
চামেলির ঘনছায়া বিতানে
বনবীণা বেজে ওঠে কী তানে।
স্বপনে মগন সেথা মালিনী
কুসুমমালায় গাঁথা শিথানে॥
মিলনসুলগনে । কেন বল্,
নয়ন করে তোর । ছল্ছল্।
বিদায়দিনে যবে । ফাটে বুক,
সেদিনো দেখেছি তো । হাসিমুখ।
গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
হে বীর, জীবন দিয়ে মরণের জিনিলে,
নিজেরে নিঃস্ব করি বিশ্বেরে কিনিলে।
নদীতীরে দুই । কূলে কূলে ।
কাশবন দুলি । ছে ।
পূর্ণিমা তারি । ফুলে ফুলে ।
আপনারে ভুলি । ছে ।
ঘন মেঘভার গগনতলে,
বনে বনে ছায়া তারি,
একাকিনী বসি নয়নজলে
কোন্ বিরহিণী নারী।
বিচলিত কেন মাধবীশাখা,
মঞ্জরি কাঁপে থরথর।
কোন্ কথা তার পাতায় ঢাকা
চুপিচুপি করে মরমর।
যক্ষ সে কোনো জনা আছিল আনমনা, সেবার অপরাধে প্রভুশাপে
হয়েছে বিলয়গত মহিমা ছিল যত, বরষকাল যাপে দুখতাপে।
নির্জন রামগিরি শিখরে মরে ফিরি একাকী দূরবাসী প্রিয়াহারা
যেথায় শীতল ছায় ঝরনা বহি যায় সীতার স্নানপূত জলধারা।
মাস পরে কাটে মাস, প্রবাসে করে বাস প্রেয়সীবিচ্ছেদে বিমলিন;
কনকবলয়-খসা বাহুর ক্ষীণ দশা, বিরহদুখে হল বলহীন।
একদা আষাঢ় মাসে প্রথম দিন আসে, যক্ষ নিরখিল গিরি'পর
ঘনঘোরে মেঘ এসে লেগেছে সানুদেশে, দন্ত হানে যেন করিবর।
আরো দেখুন