বিহারীলাল
Essays
বর্তমান নববর্ষের প্রারম্ভেই কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর পরলোকপ্রাপ্তি হইয়াছে।
বঙ্গের সারস্বতকুঞ্জে মৃত্যু ব্যাধের ন্যায় প্রবেশ করিয়াছে। তাহার নিষ্ঠুর শর-সন্ধানে অল্পকালের মধ্যে অনেকগুলি কণ্ঠ নীরব হইয়া গেল।
"সর্বদাই হু হু করে মন,
বিশ্ব যেন মরুর মতন।
চারি দিকে ঝালাফালা।
উঃ কী জ্বলন্ত জ্বালা,
অগ্নিকুণ্ডে পতঙ্গপতন।'
"কভু ভাবি কোনো ঝরনার
উপলে বন্ধুর যার ধার--
প্রচণ্ড প্রপাতধ্বনি
বায়ুবেগে প্রতিধ্বনি
চতুর্দিকে হতেছে বিস্তার--
গিয়ে তার তীরতরুতলে
পুরু পুরু নধর শাদ্বলে
ডুবাইয়ে এ শরীর
শবসম রব স্থির
কান দিয়ে জলকলকলে।
যে-সময় কুরঙ্গিণীগণ
সবিস্ময়ে ফেলিয়ে নয়ন
আমার সে দশা দেখে
কাছে এসে চেয়ে থেকে
অশ্রুজল করিবে মোচন--
সে-সময়ে আমি উঠে গিয়ে,
তাহাদের গলা জড়াইয়ে,
মৃত্যুকালে মিত্র এলে
লোকে যেম্নি চক্ষু মেলে
তেম্নিতর থাকিব চাহিয়ে।'
কভু ভাবি পল্লীগ্রামে যাই,
নামধাম সকল লুকাই।
চাষীদের মাঝে রয়ে
চাষীদের মতো হয়ে
চাষীদের সঙ্গেতে বেড়াই।
প্রাতঃকালে মাঠের উপর,
শুদ্ধ বায়ু বহে ঝর ঝর,
চারি দিক মনোরম,
আমোদে করিব শ্রম;
সুস্থ স্ফূর্ত হবে কলেবর।
বাজাইয়ে বাঁশের বাঁশরি
সাদা সোজা গ্রাম্য গান ধরি
সরল চাষার সনে
প্রমোদ-প্রফুল্ল মনে
কাটাইব আনন্দে শর্বরী।
বরষার যে ঘোরা নিশায়
সৌদামিনী মাতিয়ে বেড়ায়--
ভীষণ বজ্রের নাদ,
ভেঙে যেন পড়ে ছাদ,
বায়ু সব কাঁপেন কোঠায়--
সে নিশায় আমি ক্ষেত্রতীরে
নড়বোড়ে পাতার কুটিরে
স্বচ্ছন্দে রাজার মতো
ভূমে আছি নিদ্রাগত,
প্রাতে উঠে দেখিব মিহিরে।'
"কী কল বানিয়েছে সাহেব কোম্পানি!
কলেতে ধোঁয়া ওঠে আপনি, সজনি!'
"কভু ভাবি ত্যেজে এই দেশ
যাই কোনো এ হেন প্রদেশ
যথায় নগর গ্রাম
নহে মানুষের ধাম,
পড়ে আছে ভগ্ন-অবশেষ।
গর্বভরা অট্টালিকা যায়
এবে সব গড়াগড়ি যায়_
বৃক্ষলতা অগণন
ঘোর করে আছে বন,
উপরে বিষাদবায়ু বায়।
প্রবেশিতে যাহার ভিতরে
ক্ষীণপ্রার্থী নরে ত্রাসে মরে,
যথায় শ্বাপদদল,
করে ঘোর কোলাহল
ঝিল্লি সব ঝিঁ ঝিঁ রব করে।
তথা তার মাঝে বাস করি
ঘুমাইব দিবা বিভাবরী_
আর কারে করি ভয়,
ব্যাঘ্রে সর্পে তত নয়,
মানুষজন্তুকে যত ডরি।'
"কভু ভাবি সমুদ্রের ধারে।
যথা যেন গর্জে একেবারে
প্রলয়ের মেঘসংঘ,
প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড ভঙ্গ
আক্রমিছে গর্জিয়া বেলারে--
সম্মুখেতে অসীম অপার
জলরাশি রয়েছে বিস্তার;
উত্তাল তরঙ্গ সব
ফেনপুঞ্জে ধব্ ধব্,
গণ্ডগোলে ছোটে অনিবার--
মহাবেগে বহিছে পবন,
যেন সিন্ধুসঙ্গে করে রণ--
উভে উভ প্রতি ধায়,
শব্দে ব্যোম ফেটে যায়,
পরস্পরে তুমুল তাড়ন--
সেই মহা রণরঙ্গস্থলে
স্তব্ধ হয়ে বসিয়ে বিরলে
(বাতাসের হুহু রবে
কান বেশ ঠাণ্ডা রবে)
দেখিগে শুনিগে সে সকলে।
যে সময়ে পূর্ণ সুধাকর
ভূষিবেন নির্মল অম্বর,
চন্দ্রিকা উজলি বেলা
বেড়াবেন করে খেলা
তরঙ্গের দোলার উপর--
নিবেদিব তাঁহাদের কাছে
মনে মোর যত খেদ আছে।
শুনি না কি মিত্রবরে
দুখের যে অংশী করে
হাঁপ ছেড়ে প্রাণ তার বাঁচে।'
"সুঠাম শরীর পেলব লতিকা
আনত সুষমা কুসুম ভরে,
চাঁচর চিকুর নীরদ মালিকা
লুটায়ে পড়েছে ধরণী-'পরে।'
"হে সারদে দাও দেখা।
বাঁচিতে পারি নে একা,
কাতর হয়েছে প্রাণ, কাতর হৃদয়।
কী বলেছি অভিমানে
শুনো না শুনো না কানে,
বেদনা দিয়ো না প্রাণে ব্যথার সময়।'
"পদে পৃথ্বী, শিরে ব্যোম,
তুচ্ছ তারা সূর্য সোম,
নক্ষত্র নখাগ্রে যেন গনিবারে পারে,
সম্মুখে সাগরাম্বরা
ছড়িয়ে রয়েছে ধরা,
কটাক্ষে কখন যেন দেখিছে তাহারে।'
"একদিন দেব তরুণ তপন
হেরিলেন সুরনদীর জলে
অপরূপ এক কুমারী রতন
খেলা করে নীল নলিনীদলে।'
"অপ্সরী কিন্নরী দাঁড়াইয়ে তীরে
ধীরয়ে ললিত করুণাতান
বাজায়ে বাজায়ে বীণা ধীরে ধীরে
গাহিছে আদরে স্নেহের গান।'
Slirit of Beauty, that dost consecrate
With thine own hues all thou dost shine ulon
Of human thought or form.
Thou messenger of symlathies,
That wax and wane in lovers' eyes.
"নাহি চন্দ্র সূর্য তারা
অনল-হিল্লোল-ধারা
বিচিত্র-বিদ্যুৎ-দাম-দ্যুতি ঝলমল।
তিমিরে নিমগ্ন ভব,
নীরব নিস্তব্ধ সব,
কেবল মরুতরাশি কবে কোলাহল।'
"হিমাদ্রিশিখর-'পরে
আচম্বিতে আলো করে
অপরূপ জ্যেতি ওই পুণ্য-তপোবন।
বিকচ নয়নে চেয়ে
হাসিছে দুধের মেয়ে--
তামসী-তরুণ-উষা কুমারীরতন।
কিরণে ভুবন ভরা,
হাসিয়ে জাগিল ধরা,
হাসিয়ে জাগিল শূন্যে দিগঙ্গনাগণ।
হাসিল অম্বরতলে
পারিজাত দলে দলে,
হাসিল মানসসরে কমলকানন।'
"অম্বরে অরুণোদয়,
তলে দুলে দুলে বয়
তমসা তটিনী-রানী কুলুকুলুস্বনে;
নিরখি লোচনলোভা
পুলিনবিপিনশোভা
ভ্রমণে বাল্মীকি মুনি ভাব-ভোলা মনে।
শাখিশাখে রসসুখে
ক্রৌঞ্চ ক্রৌঞ্চী মুখে মুখে
কতই সোহাগ করে বসি দুজনায়।
হানিল শবরে বাণ--
নাশিল ক্রৌঞ্চের প্রাণ--
রুধিরে- আপ্লুত পাখা ধরণী লুটায়।
ক্রৌঞ্চি প্রিয় সহচরে
ঘেরে ঘেরে শোক করে--
অরণ্য পূরিল তার কাতর ক্রন্দনে।
চক্ষে করি দরশন
জড়িমা-জড়িত মন,
করুণহৃদয় মুনি বিহ্বলের প্রায়।
সহসা ললাটভাগে
জ্যোতির্ময়ী কন্যা জাগে,
জাগিল বিজলী যেন নীল নবঘনে।
কিরণে কিরণময়
বিচিত্র আলোকোদয়,
ম্রিয়মাণ রবিচ্ছবি, ভুবন উজলে।
চন্দ্র নয়, সূর্য নয়,
সমুজ্জ্বল শান্তিময়
ঋষির ললাটে আজি না জানি কী জ্বলে
কিরণমণ্ডলে বসি
জ্যোতির্ময়ী সুরূপসী
যোগীর ধ্যানের ধন ললাটিকা মেয়ে
নামিলেন ধীর ধীর,
দাঁড়ালেন হয়ে স্থির,
মুগ্ধনেত্রে বাল্মীকির মুখপানে চেয়ে।
করে ইন্দ্রধনু-বালা,
গলায় তারার মালা,
সীমন্তে নক্ষত্র জ্বলে, ঝল্মলে কানন--
কর্ণে কিরণের ফুল,
দোদুল চাঁচর চুল
উড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে ঢাকিয়ে আনন। ...
করুণ ক্রন্দন রোল
উত উত উতরোল,
চমকি বিহ্বলা বালা চাহিলেন ফিরে--
হেরিলেন রক্তমাখা
মৃত ক্রৌঞ্চ ভগ্নপাখা,
কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে ক্রৌঞ্চী ওড়ে ঘিরে ঘিরে।
একবার সে ক্রৌঞ্চীরে
আরবার বাল্মীকিরে
নেহারেন ফিরে ফিরে, যেন উন্মাদিনী--
কাতরা করুণাভরে
গান সকরুণ স্বরে,
ধীরে ধীরে বাজে করে বীণা বিষাদিনী।
সে শোকসংগীতকথা
শুনে কাঁদে তরুলতা,
তমসা আকুল হয়ে কাঁদে উভরায়।
নিরখি নন্দিনীছবি
গদগদ আদিকবি
অন্তরে করুণাসিন্ধু উথলিয়া ধায়।'
"ব্রহ্মার মানসসরে
ফুটে ঢল ঢল করে
নীল জলে মনোহর সুবর্ণনলিনী,
পাদপদ্ম রাখি তায়
হাসি হাসি ভাসি যায়
ষোড়শী রূপসী বামা পূর্ণিমাযামিনী।
কোটি শশী উপহাসি
উথলে লাবণ্যরাশি,
তরল দর্পণে যেন দিগন্তে আবরে;
আচম্বিতে অপরূপ
রূপসীর প্রতিরূপ
হাসি হাসি ভাসি ভাসি উদয় অম্বরে।'
"তোমারে হৃদয়ে রাখি
সদানন্দ মনে থাকি,
শ্মশান অমরাবতী দু'ই ভালো লাগে।--
গিরিমালা, কুঞ্জবন,
গৃহ, নাট-নিকেতন,
যখন যেখানে যাই, যাও আগে আগে। ...
যত মনে অভিলাষ
তত তুমি ভালোবাসো,
তত মনপ্রাণ ভরে আমি ভালোবাসি।
ভক্তিভরে একতানে
মজেছি তোমার ধ্যানে,
কমলার ধনে মানে নহি অভিলাষী।'
"অয়ি, এ কী, কেন কেন,
বিষণ্ণ হইলে হেন--
আনত আনন-শশী, আনত নয়ন,
অধরে মন্থরে আসি
কপোলে মিলায় হাসি
থরথর ওষ্ঠাধর, স্ফোরে না বচন!
তেমন অরুণ-রেখা
কেন কুহেলিকা-ঢাকা,
প্রভাত-প্রতিমা আজি কেন গা মলিন?
বলো বলো চন্দ্রাননে,
কে ব্যথা দিয়েছে মনে,
কে এমন-- এক এমন হৃদয়বিহীন!
বুঝিলাম অনুমানে,
করুণা-কটাক্ষ দানে
চাবে না আমার পানে, কবেও না কথা।
কেন যে কবে না হায়
হৃদয় জানিতে চায়,
শরমে কি বাধে বাণী, মরমে বা বাজে ব্যথা।
যদি মর্মব্যথা নয়,
কেন অশ্রুধারা বয়।
দেববালা ছলাকলা জানে না কখন--
সরল মধুর প্রাণ,
সতত মুখেতে গান,
আপন বীণার তানে আপনি মগন।
অয়ি, হা, সরলা সতী
সত্যরূপা সরস্বতী,
চির-অনুরক্ত ভক্ত হয়ে কৃতাঞ্জলি
পদপদ্মাসন-কাছে
নীরবে দাঁড়ায়ে আছে,
কী করিবে, কোথা যাবে, দাও অনুমতি।
স্বরগকুসুম মালা,
নরক-জ্বলন-জ্বালা,
ধরিবে প্রফুল্লমুখে মস্তক সকলি।
তব আজ্ঞা সুমঙ্গল,
যাই যাব রসাতল,
চাই নে এ বরমালা, এ অমরাবতী।'
"আজি এ বিষণ্ণ বেশে
কেন দেখা দিলে এসে,
কাঁদিলে কাঁদালে, দেবি, জন্মের মতন!
পূর্ণিমাপ্রমোদ-আলো,
নয়নে লেগেছে ভালো,
মাঝেতে উথলে নদী, দু পারে দুজন--
চক্রবাক্ চক্রবাকী দু পারে দুজন।
নয়নে নয়নে মেলা,
মানসে মানসে-খেলা,
অধরে প্রেমের হাসি বিষাদে মলিন।
হৃদয়বীণার মাঝে
ললিত রাগিণী বাজে,
মনের মধুর গান মনেই বিলীন।
সেই আমি সেই তুমি,
সেই এ স্বরগভূমি,
সেই-সব কল্পতরু সেই কুঞ্জবন,
সেই প্রেম সেই স্নেহ,
সেই প্রাণ সেই দেহ--
কেন মন্দাকিনী-তীরে দু পারে দুজন!'
"তবে কি সকলি ভুল?
নাই কি প্রেমের মূল--
বিচিত্র গগনফুল কল্পনালতার?
মন কেন রসে ভাসে,
প্রাণ কেন ভালোবাসে
আদরে পরিতে গলে সেই ফুলহার?
শত শত নরনারী
দাঁড়ায়েছে সারি সারি--
নয়ন খুঁজিছে কেন সেই মুখখানি!
হেরে হারানিধি পায়,
না হেরিলে প্রাণ যায়--
এমন সরল সত্য কী আছে না জানি!'
নন্দননিকুঞ্জবনে
বসি শ্বেতশিলাসনে
খোলা প্রাণে রতি-কাম বিহরে কেমন!
আননে উদার হাসি,
নয়নে অমৃতরাশি,
অপরূপ আলো এক উজলে ভুবন।...
কী এক ভাবেতে ভোর;
কী যেন নেশার ঘোর,
টলিয়ে ঢলিয়ে পড়ে নয়নে নয়ন--
গলে গলে বাহুলতা,
জড়িমা-জড়িত কথা,
সোহাগে সোহাগে রাগে গলগল মন।
করে কর থরথর,
টলমল কলেবর,
গুরুগুরু দুরুদুরু বুকের ভিতর--
তরুণ অরুণ ঘটা
আননে আরক্ত ছটা,
অধর-কমলদলে কাঁপে থরথর।
প্রণয় পবিত্র কাম
সুখস্বর্গ মোক্ষধাম।
আজি কেন হেরি হেন মাতোয়ারা বেশ!
ফুলধনু ছড়াছড়ি
দূরে যায় গড়াগড়ি,
রতির খুলিয়ে খোঁপা আলুথালু কেশ!
বিহ্বল পাগলপ্রাণে
চেয়ে সতী পতিপানে,
গলিয়ে গড়িয়ে কোথা চলে গেছে মন!
মুগ্ধ মত্ত নেত্র দুটি,
আধ ইন্দিবর ফুটি,
দুলুদুলু ঢুলুঢুলু করিছে কেমন!
আলসে উঠিছে হাই,
ঘুম আছে, ঘুম নাই,
কী যেন স্বপনমত চলিয়াছে মনে!
সুখের সাগরে ভাসি
কিবে প্রাণ-খোলা হাসি
কী এক লহরী খেলে নয়নে নয়নে!
উথুলে উথুলে প্রাণ
উঠিছে ললিত তান,
ঘুমায়ে ঘুমায়ে গান গায় দুই জন।
সুরে সুরে সম্ রাখি
ডেকে ডেকে ওঠে পাখি,
তালে তালে ঢ'লে ঢ'লে চলে সমীরণ।
কুঞ্জের আড়ালে থেকে
চন্দ্রমা লুকায়ে দেখে,
প্রণয়ীর সুখে সদা সুখী সুধাকর।
সাজিয়ে মুকুলে ফুলে
আহ্লাদেতে হেলে দুলে
চৌদিকে নিকুঞ্জলতা নাচে মনোহর।
সে আনন্দে আনন্দিনী,
উথলিয়ে মন্দাকিনী,
করি করি কলধ্বনি বহে কুতুহলে।'
উদার উদারতর
দাঁড়ায়ে শিখর- 'পর
এই-যে হৃদয়রানী ত্রিদিব-সুষমা।
এ নিসর্গ-রঙ্গভূমি,
মনোরমা নটী তুমি,
শোভার সাগরে এক শোভা নিরুপমা।
আননে বচন নাই,
নয়নে পলক নাই,
কান নাই মন নাই আমার কথায়--
মুখখানি হাস-হাস,
আলুথালু বেশবাস,
আলুথালু কেশপাশ বাতাসে লুটায়।
না জানি কী অভিনব
খুলিয়ে গিয়েছে ভব
আজি ও বিহ্বল মত্ত প্রফুল্ল নয়নে!
আদরিণী, পাগলিনী,
এ নহে শশি-যামিনী--
ঘুমাইয়ে একাকিনী কী দেখ স্বপনে!
আহা কী ফুটিল হাসি!
বড়ো আমি ভালোবাসি
ওই হাসিমুখখানি প্রেয়সী তোমার--
বিষাদের আবরণে
বিমুক্ত ও চন্দ্রাননে
দেখিবার আশা আর ছিল না আমার।
দরিদ্র ইন্দ্রত্বলাভে
কতটুকু সুখ পাবে,
আমার সুখের সিন্ধু অনন্ত উদার। ...
এসো বোন, এসো ভাই,
হেসে খেলে চলে যাই,
আনন্দে আনন্দ করি আনন্দকাননে।
এমন আনন্দ আর নাই ত্রিভুবনে।
হে প্রশান্ত গিরিভূমি,
জীবন জুড়ালে তুমি
জীবন্ত করিয়ে মম জীবনের ধনে।
এমন আনন্দ আর নাই ত্রিভুবনে।
প্রিয়ে সঞ্জীবনী লতা,
কত যে পেয়েছি ব্যথা
হেরে সে বিষাদময়ী মুরতি তোমার।
হেরে কত দুঃস্বপন
পাগল হয়েছে মন--
কতই কেঁদেছি আমি ক'রে হাহাকার।
আজি সে সকলি মম
মায়ার লহরী সম
আনন্দসাগর-মাঝে খেলিয়া বেড়ায়।
দাঁড়াও হৃদয়েশ্বরী,
ত্রিভুবন আলো করি,
দু-নয়ন ভরি ভরি দেখিব তোমায়।
দেখিয়ে মেটে না সাধ,
কী জানি কী আছে স্বাদ,
কী জানি কী মাখা আছে ও শুভ-আননে!
কী এক বিমল ভাতি
প্রভাত করেছে রাতি,
হাসিছে অমরাবতী নয়নকিরণে।
এমন সাধের ধনে
প্রতিবাদী জনে জনে--
দয়া মায়া নাই মনে, কেমন কঠোর!
আদরে গেঁথেছে বালা
হৃদয়কুসুমমালা,
কৃপাণে কাটিবে কে রে সেই ফুলডোর!
পুন কেন অশ্রুজল,
বহ তুমি অবিরল,
চরণকমল আহা ধুয়াও দেবীর!
মানসসরসী কোলে
সোনার নলিনী দোলে,
আনিয়ে পরাও গলে সমীর সুধীর।
বিহঙ্গম, খুলে প্রাণ
ধরো রে পঞ্চম তান,
সারদামঙ্গলগান গাও কুতুহলে।'
আরো দেখুন