প্রথম ভাগ
Others
অ আ
ই ঈ
ছোট খোকা বলে অ আ
শেখেনি সে কথা কওয়া।
হ্রস্ব ই দীর্ঘ ঈ
বসে খায় ক্ষীর খই।
হ্রস্ব উ দীর্ঘ ঊ
ডাক ছাড়ে ঘেউ ঘেউ।
ঘন মেঘ বলে ঋ
দিন বড় বিশ্রী।
বাটি হাতে এ ঐ
হাঁক দেয় দে দৈ।
ডাক পাড়ে ও ঔ
ভাত আনো বড় বৌ।
ক খ গ ঘ গান গেয়ে
জেলে ডিঙি চলে বেয়ে।
চরে বসে রাঁধে ঙ
চোখে তার লাগে ধোঁয়া।
চ ছ জ ঝ দলে দলে
বোঝা নিয়ে হাটে চলে।
ক্ষিদে পায় খুকী ঞ
শুয়ে কাঁদে কিয়োঁ কিয়োঁ।
ট ঠ ড ঢ করে গোল
কাঁধে নিয়ে ঢাক ঢোল।
বলে মূর্দ্ধন্য ণ,
চুপ কর কথা শোন।
ত থ দ ধ বলে, ভাই
আম পাড়ি চল যাই।
রেগে বলে দন্ত্য ন
যাব না তো কক্ষনো।
প ফ ব ভ যায় মাঠে
সারাদিন ধান কাটে।
ম চালায় গোরু-গাড়ি
ধান নিয়ে যায় বাড়ি।
য র ল ব বসে ঘরে
এক মনে পড়া করে।
শ ষ স বাদল দিনে
ঘরে যায় ছাতা কিনে।
শাল মুড়ি দিয়ে হ ক্ষ
কোণে বসে কাশে খ ক্ষ।
বনে থাকে বাঘ।
গাছে থাকে পাখী।
জলে থাকে মাছ।
ডালে আছে ফল।
পাখী ফল খায়।
পাখা মেলে ওড়ে।
বাঘ আছে আম-বনে।
গায়ে চাকা চাকা দাগ।
পাখী বনে গান গায়।
মাছ জলে খেলা করে।
ডালে ডালে কাক ডাকে।
খালে বক মাছ ধরে।
বনে কত মাছি ওড়ে।
ওরা সব মৌ-মাছি।
ঐখানে মৌ-চাক।
তাতে আছে মধু ভরা।
আলো হয় , জয়লাল
গেল ভয় । ধরে হাল ।
চারি দিক অবিনাশ
ঝিকি মিক্ কাটে ঘাস ।
বায়ু বয় ঝাউডাল
বনময় । দেয় তাল ।
বাঁশ গাছ বুড়ি দাই
করে নাচ । জাগে নাই ।
দীঘিজল হরিহর
ঝল মল । বাঁধে ঘর ।
যত কাক পাতু পাল
দেয় ডাক । আনে চাল ।
খুদিরাম দীননাথ
পাড়ে জাম । রাঁধে ভাত ।
মধু রায় গুরুদাস
খেয়া বায় । করে চাষ ।
কালো রাতি গেল ঘুচে,
আলো তারে দিল মুছে।
পূব দিকে ঘুম-ভাঙা।
হাসে ঊষা চোখ-রাঙা।
নাহি জানি কোথা থেকে
ডাক দিল চাঁদেরে কে।
ভয়ে ভয়ে পথ খুঁজি
চাঁদ তাই যায় বুঝি।
তারাগুলি নিয়ে বাতি
জেগেছিল সারা রাতি,
নেমে এল পথ ভুলে
বেলফুলে জুঁইফুলে।
বায়ু দিকে দিকে ফেরে
ডেকে ডেকে সকলেরে।
বনে বনে পাখী জাগে,
মেঘে মেঘে রঙ লাগে।
জলে জলে ঢেউ ওঠে,
ডালে ডালে ফুল ফোটে।
নাম তার মোতিবিল, বহু দূর জল—
হাঁসগুলি ভেসে ভেসে করে কোলাহল।
পাঁকে চেয়ে থাকে বক, চিল উড়ে চলে,
মাছরাঙা ঝুপ ক’রে পড়ে এসে জলে।
হেথা হোথা ডাঙা জাগে ঘাস দিয়ে ঢাকা,
মাঝে মাঝে জলধারা চলে আঁকাবাঁকা।
কোথাও বা ধানক্ষেত জলে আধো ডোবা,
তারি ‘পরে রোদ পড়ে কিবা তার শোভা।
ডিঙি চ’ড়ে আসে চাষী, কেটে লয় ধান,
বেলা গেলে গাঁয়ে ফেরে গেয়ে সারিগান।
মোষ নিয়ে পার হয় রাখালের ছেলে,
বাঁশে বাঁধা জাল নিয়ে মাছ ধরে জেলে।
মেঘ চলে ভেসে ভেসে আকাশের গায়,
ঘন শেওলার দল জলে ভেসে যায়।
ছায়ার ঘোমটা মুখে টানি
আছে আমাদের পাড়াখানি।
দীঘি তার মাঝখানটিতে,
তালবন তারি চারিভিতে।
বাঁকা এক সরু গলি বেয়ে
জল নিতে আসে যত মেয়ে।
বাঁশগাছ ঝুঁকে ঝুঁকে পড়ে,
ঝুরু ঝুরু পাতাগুলি নড়ে।
পথের ধারেতে একখানে
হরিমুদী বসেছে দোকানে।
চাল ডাল বেচে তেল নুন,
খয়ের সুপারি বেচে চুন,
ঢেঁকি পেতে ধান ভানে বুড়ী,
খোলা পেতে ভাজে খই মুড়ি।
বিধু গয়লানী মায়ে পোয়
সকাল বেলায় গোরু দোয়।
আঙিনায় কানাই বলাই
রাশি করে সরিষা কলাই।
বড়বউ মেজবউ মিলে
ঘুঁটে দেয় ঘরের পাঁচিলে।
আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে,
বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।
পার হয়ে যায় গোরু,পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার,ঢালু তার পাড়ি।
চিক্চিক্ করে বালি,কোথা নাই কাদা,
এক ধারে কাশবন ফুলে ফুলে শাদা।
কিচিমিচি করে সেথা শালিখের ঝাঁক,
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।
আর-পারে আমবন তালবন চলে,
গাঁয়ের বামুনপাড়া তারি ছায়াতলে।
তীরে তীরে ছেলেমেয়ে নাহিবার কালে
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।
সকালে বিকালে কভু-নাওয়া হলে পরে
আঁচলে ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে।
বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে,
বধুরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে।
আষাঢ়ে বাদল নামে,নদী ভর-ভর—
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।
মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে,
ঘোলাজলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে।
দুই কূলে বনে বনে প’ড়ে যায় সাড়া,
বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।
এসেচে শরৎ, হিমের পরশ
লেগেচে হাওয়ার ‘পরে—
সকালবেলায় ঘাসের আগায়
শিশিরের রেখা ধরে।
আমলকী-বন কাঁপে,যেন তার
বুক করে দুরু দুরু—
পেয়েচে খবর পাতা-খসানোর
সময় হয়েচে শুরু।
শিউলির ডালে কুঁড়ি ভ’রে এল,
টগর ফুটিল মেলা,
মালতীলতায় খোঁজ নিয়ে যায়
মৌমাছি দুই বেলা।
গগনে গগনে বরষণ-শেষে
মেঘেরা পেয়েচে ছাড়া,
বাতাসে বাতাসে ফেরে ভেসে ভেসে,
নাই কোনো কাজে তাড়া।
দীঘিভরা জল করে ঢল-ঢল,
নানা ফুল ধারে ধারে,
কচি ধানগাছে ক্ষেত ভ’রে আছে—
হাওয়া দোলা দেয় তারে।
যে দিকে তাকাই সোনার আলোয়
দেখি যে ছুটির ছবি,
পূজার ফুলের বনে ওঠে ওই
পূজার দিনের রবি।
কাল ছিল ডাল খালি,
আজ ফুলে যায় ভ’রে।
বল্ দেখি তুই মালী,
হয় সে কেমন ক’রে।
গাছের ভিতর থেকে
করে ওরা যাওয়া -আসা।
কোথা থাকে মুখ ঢেকে,
কোথা যে ওদের বাসা।
থাকে ওরা কান পেতে
লুকানো ঘরের কোণে,
ডাক পড়ে বাতাসেতে
কী ক’রে সে ওরা শোনে।
দেরি আর সহে না-যে,
মুখ মেজে তাড়াতাড়ি
কত রঙে ওরা সাজে,
চ’লে আসে ছেড়ে বাড়ি।
ওদের সে-ঘরখানি
থাকে কি মাটির কাছে?
দাদা বলে,জানি জানি
সে-ঘর আকাশে আছে।
সেথা করে আসা যাওয়া
নানা রঙা মেঘগুলি—
আসে আলো, আসে হাওয়া
গোপন দুয়ার খুলি।
দুই মাত্রা,যথা —
কাল। ছিল। ডাল। খালি
আজ। ফুলে। যায়। ভ’রে।
কাল ছিল ডাল। খালি—।
আজ ফুলে যায়। ভ’রে—।
দিনে হই এক-মতো, রাতে হই আর।
রাতে-যে স্বপন দেখি মানে কী-যে তার।
আমাকে ধরিতে যেই এলো ছোটো কাকা
স্বপনে গেলাম উড়ে মেলে দিয়ে পাখা।
দুই হাত তুলে কাকা বলে, থামো থামো,
যেতে হবে ইসকুলে, এই বেলা নামো।
আমি বলি,কাকা, মিছে করো চেঁচামেচি,
আকাশেতে উঠে আমি মেঘ হয়ে গেচি।
ফিরিব বাতাস বেয়ে রামধনু খুঁজি,
আলোর অশোক-ফুল চুলে দেবো গুঁজি।
সাত-সাগরের পারে পারিজাত-বনে
জল দিতে চ’লে যাবো আপনার মনে।
যেমনি এ কথা বলা অমনি হঠাৎ
কড়কড় রবে বাজ মেলে দিল দাঁত।
ভয়ে কাঁপি, মা কোথাও নেই কাছাকাছি,
ঘুম ভেঙে চেয়ে দেখি বিছানায় আছি।
নদীর ঘাটের কাছে
নৌকো বাঁধা আছে,
নাইতে যখন যাই, দেখি সে
জলের ঢেউয়ে নাচে।
আজ গিয়ে সেইখানে
দেখি দূরের পানে
মাঝনদীতে নৌকো, কোথায়
চলে ভাঁটার টানে।
জানি না কোন্ দেশে
পৌঁচে যাবে শেষে,
সেখানেতে কেমন মানুষ
থাকে কেমন বেশে।
থাকি ঘরের কোণে,
সাধ জাগে মোর মনে,
অম্নি ক’রে যাই ভেসে, ভাই,
নতুন নগর বনে।
দূর সাগরের পারে,
জলের ধারে ধারে,
নারিকেলের বনগুলি সব
দাঁড়িয়ে সারে সারে।
পাহাড়-চুড়া সাজে
নীল আকাশের মাঝে,
বরফ ভেঙে ডিঙিয়ে যাওয়া
কেউ তা পারে না-যে।
কোন্ সে বনের তলে
নতুন ফুলে ফলে
নতুন নতুন পশু কত
বেড়ায় দলে দলে!
কত রাতের শেষে
নৌকো-যে যায় ভেসে;
বাবা কেন আপিসে যায়,
যায় না নতুন দেশে?
কত দিন ভাবে ফুল উড়ে যাবো কবে ,
যেথা খুসি সেথা যাবো ভারী মজা হবে ।
তাই ফুল একদিন মেলি দিল ডানা ,
প্রজাপতি হ ' লো , তারে কে করিবে মানা!
রোজ রোজ ভাবে ব ' সে প্রদীপের আলো
উড়িতে পেতাম যদি হ ত বড়ো ভালো ।
ভাবিতে ভাবিতে শেষে কবে পেলো পাখা ,
জোনাকি হ ' লো সে — ঘরে যায় না তো রাখা ।
পুকুরের জল ভাবে , চুপ ক ' রে থাকি ,
হায় হায় , কী মজায় উড়ে যায় পাখী ।
তাই একদিন বুঝি ধোঁয়া-ডানা মেলে
মেঘ হয়ে আকাশেতে গেল অবহেলে ।
আমি ভাবি ঘোড়া হয়ে মাঠ হবো পার ,
কভু ভাবি মাছ হয়ে কাটিব সাঁতার ।
কভু ভাবি পাখী হয়ে উড়িব গগনে ।
কখোনো হবে না সে কি ভাবি যাহা মনে ?
আরো দেখুন