ভগ্নহৃদয় (bhagno hriday)

     

    কাব্যের পাত্রগণ

    কবি; অনিল; মুরলা (অনিলের ভগ্নী ও কবির বাল্যসহচরী); ললিতা (অনিলের প্রণয়িনী); নলিনী (এক চপলস্বভাবা কুমারী; চপলা (মুরলার সখী)


    লীলা; সুরুচি মাধবী প্রভৃতি (নলিনীর সখীগণ)


    সুরেশ, বিজয়, বিনোদ প্রভৃতি (নলিনীর বিবাহ বা প্রণয়াকাঙ্ক্ষী)


    ভূমিকা

     
    এই কাব্যটিকে কেহ যেন নাটক মনে না করেন। নাটক ফুলের গাছ। তাহাতে ফুল ফুটে বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে মূল, কাণ্ড, শাখা, পত্র, এমন কি কাঁটাটি পর্য্যন্ত থাকা চাই। বর্ত্তমান কাব্যটি ফুলের মালা, ইহাতে কেবল ফুলগুলি মাত্র সংগ্রহ করা হইয়াছে। বলা বাহুল্য, যে, দৃষ্টান্তস্বরূপেই ফুলের উল্লেখ করা হইল।

    উপহার

     
    শ্রীমতী হে ..........,


     
    হৃদয়ের বনে বনে সূর্য্যমুখী শত শত
    ওই মুখপানে চেয়ে ফুটিয়া উঠেছে যত।
    বেঁচে থাকে বেঁচে থাক্‌,   শুকায়ে শুকায়ে যাক্‌,
    ওই মুখপানে তারা চাহিয়া থাকিতে চায়।
    বেলা অবসান হবে,  মুদিয়া আসিবে যবে
    ওই মুখ চেয়ে যেন নীরবে ঝরিয়া যায়!


     
    জীবনসমূদ্রে তব জীবনতটিনী মোর
    মিশায়েছি একেবারে আনন্দে হইয়ে ভোর।
    সন্ধ্যার বাতাস লাগি   ঊর্ম্মি যত উঠে জাগি
    অথবা তরঙ্গ উঠে ঝটিকায় আকুলিয়া--
    জানে বা না জানে কেউ   জীবনের প্রতি ঢেউ
    মিশিবে-- বিরাম পাবে-- তোমার চরণে গিয়া।


     
    হয়ত জান না, দেবি, অদৃশ্য বাঁধন দিয়া
    নিয়মিত পথে এক ফিরাইছ মোর হিয়া।
    গেছি দূরে, গেছি কাছে,   সেই আকর্ষণ আছে,
    পথভ্রষ্ট হই নাক তাহারি অটল বলে।
    নহিলে হৃদয় মম   ছিন্নধূমকেতু-সম
    দিশাহারা হইত সে অনন্ত আকাশতলে!


     
    আজ সাগরের তীরে দাঁড়ায়ে তোমার কাছে;
    পরপারে মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকার দেশ আছে।
    দিবস ফুরাবে যবে  সে দেশে যাইতে হবে,
    এ পারে ফেলিয়া যাব আমার তপন শশী--
    ফুরাইবে গীত গান,   অবসাদে ম্রিয়মাণ,
    সুখ শান্তি অবসান-- কাঁদিব আঁধারে বসি!


     
    স্নেহের অরুণালোকে খুলিয়া হৃদয় প্রাণ
    এ পারে দাঁড়ায়ে, দেবি, গাহিনু যে শেষ গান
    তোমারি মনের ছায়   সে গান আশ্রয় চায়--
    একটি নয়নজল তাহারে করিও দান।
    আজিকে বিদায় তবে,  আবার কি দেখা হবে--
    পাইয়া স্নেহের আলো হৃদয় গাহিবে গান?
    •  
    •  

    Rendition

    Please Login first to submit a rendition. Click here for help.