রোগের চিকিৎসা (roger chikitsa)
জ্যৈষ্ঠ ১২৯২
প্রথম দৃশ্য
হাঁপাইতে হাঁপাইতে খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে হারাধনের প্রবেশ
হারাধন।
বাবা! ডাক্তার-সাহেবের আস্তাবল থেকে হাঁসের ডিম চুরি করতে গিয়ে আজ আচ্ছা নাকাল হয়েছি! সাহেব যেরকম তাড়া করে এসেছিল, মরেছিলেম আর-কি! ভয়ে পালাতে গিয়ে খানার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেম। পা ভেঙে গেছে-- তাতে দুঃখ নেই, প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি এই ঢের। রোগীগুলোকে হাতে পেলে ডাক্তার-সাহেব পট্ পট্ করে মেরে ফেলে; আমার কোনো ব্যামোস্যামো নেই, আমাকেই তো সেরে ফেলবার জো করেছিল। এবারে রোজ রোজ আর হাঁসের ডিম চুরি করব না; একেবারে আস্ত হাঁস চুরি করব, আমাদের বাড়িতে ডিম পাড়বে।
নেপথ্য হইতে।
হারু!
হারাধন।
(সভয়ে) ঐ রে, বাবা এসেছে। আমার একটা পা খোঁড়া দেখলে মারের চোটে বাবা আর-একটা পা খোঁড়া করে দেবে।
পিতার প্রবেশ
হারাধন।
(অগ্রসর হইয়া) আজ্ঞে!
পিতা।
তুই খোঁড়াচ্ছিস যে!
হারাধনের মাথা-চুলকন
পিতা।
(সরোষে) পা ভাঙলি কী করে!
হারাধন।
(সভয়ে ) আজ্ঞে, আমি ইচ্ছে করে ভাঙি নি।
পিতা।
তা তো জানি, কী করে ভাঙল সেইটে বল্-না।
হারাধন।
জানি নে বাবা!
পিতা।
তোর পা ভাঙল তুই জানিস নে তো কি ও পাড়ার গোবরা তেলি জানে?
হারাধন।
কখন ভাঙল টের পাই নি বাবা!
পিতা।
বটে! এই লাঠির বাড়ি তোর মাথাটা ভাঙলে তবে টের পাবি বুঝি!
হারাধন।
(তাড়াতাড়ি হাত দিয়া মাথা আড়াল করিয়া) না বাবা! ঐ মাথাটা বাঁচাতে গিয়েই পা'টা ভেঙেছি।
পিতা।
বুঝেছি। তবে বুঝি সেদিনকার মতো ডাক্তার-সাহেবের বাড়িতে হাঁসের ডিম চুরি করতে গিয়েছিলি, তাই তারা মেরে তোর পা ভেঙে দিয়েছে।
হারাধন।
(চোখ রগড়াইতে রগড়াইতে) হাঁ বাবা ! আমার কোনো দোষ নেই। পা আমি নিজে ভাঙি নি, পা তারাই ভেঙে দিয়েছে।
পিতা।
লক্ষ্মীছাড়া, তোর কি কিছুতেই চৈতন্য হবে না?
হারাধন।
চৈতন্য কাকে বলে বাবা?
পিতা।
চৈতন্য কাকে বলে দেখবি? (পিঠে কিল মারিয়া) চৈতন্য একে বলে।
হারাধন।
এ তো আমার রোজই হয়।
পিতা।
আমি দেখছি তুমি জেলে গিয়েই মরবে!
হারাধন।
না বাবা, রোজ চৈতন্য পেলে ঘরে মরব!
পিতা।
নাঃ, তোকে আর পেরে উঠলেম না।
হারাধন।
(চুপড়ির দিকে চাহিয়া ) বাবা, তাল এনেছ কার জন্যে? আমি খাব।
পিতা।
(পৃষ্ঠে কিল মারিয়া ) এই খাও।
হারাধন।
(পিঠে হাত বুলাইয়া ) এ তো ভালো লাগল না!
নেপথ্যে।
হারু!
হারাধন।
কী মা!
নেপথ্যে।
তোর জন্যে তালের বড়া করে রেখেছি-- খাবি আয়।
[ খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে হারাধনের প্রস্থান
দ্বিতীয় দৃশ্য
ডাক্তার-সাহেবের আস্তাবলে হারাধন হাঁস-চুরি-করণে প্রবৃত্ত
পিতা।
(দুর হইতে) হারু !
হারাধন।
ঐ রে, বাবা আসছে! কী করি?
হারাধনের গলা হইতে পেট পর্যন্ত থলি ঝুলিতেছিল, তাড়াতাড়ি থলির মধ্যে হাঁস পুরিয়া ফেলিল
পিতা।
হারু! (নিরুত্তর) হারা! (নিরুত্তর) হেরো!
হারাধন।
আজ্ঞে!
পিতা।
তোর পেট হঠাৎ অমন ফুলে উঠল কী করে?
হারাধন।
বাবা, কাল সেই তালের বড়া খেয়ে।
পিতা।
অমন ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ শব্দ হচ্ছে কেন?
হারাধন।
পেটের ভিতর নাড়ীগুলো ডাকছে।
পিতা।
দেখি, পেটে হাত দিয়ে দেখি।
হারাধন।
(শশব্যস্তে) ছুঁয়ো না, ছুঁয়ো না, বড্ড ব্যথা হয়েছে।
পেটের ভেতর ক্যাঁক্ ক্যাঁক্
পিতা।
(স্বগত) সব বোঝা গেছে। হতভাগাকে জব্দ করতে হবে। (প্রকাশ্যে ) তোমার রোগ সহজ নয়; এসো বাপু, তোমাকে হাঁসপাতালে নিয়ে যাই।
হারাধন।
না বাবা, এমন আমার মাঝে মাঝে হয়, আপনি সেরে যায়।
ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ ক্যাঁক্
পিতা।
কই রে, এ তো ক্রমেই বাড়ছে। চল্, আর দেরি নয়।
[ টানিয়া লইয়া প্রস্থান
তৃতীয় দৃশ্য
হারাধন। পিতা ও মাতা
মা।
(কাঁদিতে কাঁদিতে) বাছার আমার কী হল গা!
পিতা।
হাঁগো, তুমি বেশি গোল কোরো না। হাঁসপাতালে নিয়ে গেলেই এ ব্যামো সেরে যাবে।
মা।
আমি বেশি গোল করছি, না তোমার ছেলের পেট বেশি গোল করছে! (সভয়ে) এ যে হাঁসের মতো ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ করে। বাবা হারু, তোকে আর আমি হাঁসের ডিম খেতে দেব না-- তোর পেটের মধ্যে হাঁস ডাকছে-- কী হবে! [ ক্রন্দন
হারাধন।
(তাড়াতাড়ি) না মা, ও হাঁস নয়, ও তালের বড়া। হাঁস তোমাকে কে বললে? কক্খনো হাঁস নয়। হাঁস হতেই পারে না। আচ্ছ, বাজি রাখো, যদি তালের বড়া হয়!
মা।
তালের বড়া কি অমন করে ডাকে বাছা!
হারাধন।
তুমি একটু চুপ করো মা! তোমাদের গোলমাল শুনে পেটের ভিতর আরো বেশি করে ডাকছে।
পিতা।
বোসদের বাড়ি আমার একটু কাজ আছে, আমি কাজ সেরেই হারুকে নিয়ে হাঁসপাতালে যাচ্ছি।
[ প্রস্থান
ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ ক্যাঁক্
মা।
ওগো, এ যে ক্রমেই বাড়তে চলল! ওগো মুখুজ্যেমশাই!
মুখুজ্যেমশাইয়ের প্রবেশ
মুখুজ্যে।
কী গো বাছা?
মা।
বাছার আমার ক্রমেই বাড়তে লাগল। একে শিগগির-- ঐ-যে কী বলে ঐ-- তোমাদের হাঁচপাতালে নিয়ে চলো।
মুখুজ্যে।
আমি তো তাই প্রথম থেকেই বলছি, হারুর বাবাই তো এতক্ষণ দেরি করিয়ে রাখলে। (হারার প্রতি) তবে চল্, ওঠ্।
হারাধন।
না দাদামশায়, আমি হাঁসপাতালে যাব না, আমার কিছু হয় নি।
মুখুজ্যে।
কিছু হয় নি বটে! তোর পেটের ডাকের চোটে পাড়াসুদ্ধ অস্থির হয়ে উঠল। পেটের মধ্যে বাত শ্লেষ্মা পিত্ত তিনটিতে মিলে যেন দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধিয়ে দিয়েছে।
[ বলপূর্বক লইয়া যাওন
চতুর্থ দৃশ্য
হাঁসপাতালে ডাক্তার-সাহেব ও হারাধন
ডাক্তার।
টোমার পেটে কী হইয়াছে?
হারাধন।
কিছু হয় নি সাহেব। এবার আমাকে মাপ করো সাহেব, আমার কিছু হয় নি।
ডাক্তার।
কিছু হয় নি টো এ কী?
পেটে খোঁচা দেওন ও দ্বিগুন ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ শব্দ
(হাসিয়া) টোমার ব্যামো আমি সমষ্ট বুঝিয়াছি।
হারাধন।
তোমার গা ছুঁয়ে বলছি সাহেব, আমার কোনো ব্যামো হয় নি। এমন কাজ আর কখনো করব না।
ডাক্তার।
টোমার ভয়ানক ব্যামো হইয়াছে।
হারাধন।
সাহেব, আমার ব্যামো আমি জানি নে, তুমি জান!
ক্যাঁক্ ক্যাঁক্
(সরোষে থলিতে চাপড় মারিয়া ) আ মোলো যা, এর যে ডাক কিছুতেই থামে না।
ডাক্তার।
(বৃহৎ ছুরি লইয়া) টোমার চুরি ব্যামো হইয়াছে, ছুরি না ডিলে সারিবে না।
পেট চিরিতে উদ্যত
হারাধন।
(কাঁদিয়া হাঁস বাহির করিয়া) সাহেব, এই নাও তোমার হাঁস। তোমার এ হাঁস কোনোমতেই আমার পেটে সইল না। এর চেয়ে ডিমগুলো ছিলো ভালো।
হারাধনকে ধরিয়া সাহেবের প্রহার
সাহেব, আর আবশ্যক নেই, আমার ব্যামো একেবারেই সেরে গেছে।
প্রথম দৃশ্য
হাঁপাইতে হাঁপাইতে খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে হারাধনের প্রবেশ
হারাধন।
বাবা! ডাক্তার-সাহেবের আস্তাবল থেকে হাঁসের ডিম চুরি করতে গিয়ে আজ আচ্ছা নাকাল হয়েছি! সাহেব যেরকম তাড়া করে এসেছিল, মরেছিলেম আর-কি! ভয়ে পালাতে গিয়ে খানার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেম। পা ভেঙে গেছে-- তাতে দুঃখ নেই, প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি এই ঢের। রোগীগুলোকে হাতে পেলে ডাক্তার-সাহেব পট্ পট্ করে মেরে ফেলে; আমার কোনো ব্যামোস্যামো নেই, আমাকেই তো সেরে ফেলবার জো করেছিল। এবারে রোজ রোজ আর হাঁসের ডিম চুরি করব না; একেবারে আস্ত হাঁস চুরি করব, আমাদের বাড়িতে ডিম পাড়বে।
নেপথ্য হইতে।
হারু!
হারাধন।
(সভয়ে) ঐ রে, বাবা এসেছে। আমার একটা পা খোঁড়া দেখলে মারের চোটে বাবা আর-একটা পা খোঁড়া করে দেবে।
পিতার প্রবেশ
হারাধন।
(অগ্রসর হইয়া) আজ্ঞে!
পিতা।
তুই খোঁড়াচ্ছিস যে!
হারাধনের মাথা-চুলকন
পিতা।
(সরোষে) পা ভাঙলি কী করে!
হারাধন।
(সভয়ে ) আজ্ঞে, আমি ইচ্ছে করে ভাঙি নি।
পিতা।
তা তো জানি, কী করে ভাঙল সেইটে বল্-না।
হারাধন।
জানি নে বাবা!
পিতা।
তোর পা ভাঙল তুই জানিস নে তো কি ও পাড়ার গোবরা তেলি জানে?
হারাধন।
কখন ভাঙল টের পাই নি বাবা!
পিতা।
বটে! এই লাঠির বাড়ি তোর মাথাটা ভাঙলে তবে টের পাবি বুঝি!
হারাধন।
(তাড়াতাড়ি হাত দিয়া মাথা আড়াল করিয়া) না বাবা! ঐ মাথাটা বাঁচাতে গিয়েই পা'টা ভেঙেছি।
পিতা।
বুঝেছি। তবে বুঝি সেদিনকার মতো ডাক্তার-সাহেবের বাড়িতে হাঁসের ডিম চুরি করতে গিয়েছিলি, তাই তারা মেরে তোর পা ভেঙে দিয়েছে।
হারাধন।
(চোখ রগড়াইতে রগড়াইতে) হাঁ বাবা ! আমার কোনো দোষ নেই। পা আমি নিজে ভাঙি নি, পা তারাই ভেঙে দিয়েছে।
পিতা।
লক্ষ্মীছাড়া, তোর কি কিছুতেই চৈতন্য হবে না?
হারাধন।
চৈতন্য কাকে বলে বাবা?
পিতা।
চৈতন্য কাকে বলে দেখবি? (পিঠে কিল মারিয়া) চৈতন্য একে বলে।
হারাধন।
এ তো আমার রোজই হয়।
পিতা।
আমি দেখছি তুমি জেলে গিয়েই মরবে!
হারাধন।
না বাবা, রোজ চৈতন্য পেলে ঘরে মরব!
পিতা।
নাঃ, তোকে আর পেরে উঠলেম না।
হারাধন।
(চুপড়ির দিকে চাহিয়া ) বাবা, তাল এনেছ কার জন্যে? আমি খাব।
পিতা।
(পৃষ্ঠে কিল মারিয়া ) এই খাও।
হারাধন।
(পিঠে হাত বুলাইয়া ) এ তো ভালো লাগল না!
নেপথ্যে।
হারু!
হারাধন।
কী মা!
নেপথ্যে।
তোর জন্যে তালের বড়া করে রেখেছি-- খাবি আয়।
[ খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে হারাধনের প্রস্থান
দ্বিতীয় দৃশ্য
ডাক্তার-সাহেবের আস্তাবলে হারাধন হাঁস-চুরি-করণে প্রবৃত্ত
পিতা।
(দুর হইতে) হারু !
হারাধন।
ঐ রে, বাবা আসছে! কী করি?
হারাধনের গলা হইতে পেট পর্যন্ত থলি ঝুলিতেছিল, তাড়াতাড়ি থলির মধ্যে হাঁস পুরিয়া ফেলিল
পিতা।
হারু! (নিরুত্তর) হারা! (নিরুত্তর) হেরো!
হারাধন।
আজ্ঞে!
পিতা।
তোর পেট হঠাৎ অমন ফুলে উঠল কী করে?
হারাধন।
বাবা, কাল সেই তালের বড়া খেয়ে।
পিতা।
অমন ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ শব্দ হচ্ছে কেন?
হারাধন।
পেটের ভিতর নাড়ীগুলো ডাকছে।
পিতা।
দেখি, পেটে হাত দিয়ে দেখি।
হারাধন।
(শশব্যস্তে) ছুঁয়ো না, ছুঁয়ো না, বড্ড ব্যথা হয়েছে।
পেটের ভেতর ক্যাঁক্ ক্যাঁক্
পিতা।
(স্বগত) সব বোঝা গেছে। হতভাগাকে জব্দ করতে হবে। (প্রকাশ্যে ) তোমার রোগ সহজ নয়; এসো বাপু, তোমাকে হাঁসপাতালে নিয়ে যাই।
হারাধন।
না বাবা, এমন আমার মাঝে মাঝে হয়, আপনি সেরে যায়।
ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ ক্যাঁক্
পিতা।
কই রে, এ তো ক্রমেই বাড়ছে। চল্, আর দেরি নয়।
[ টানিয়া লইয়া প্রস্থান
তৃতীয় দৃশ্য
হারাধন। পিতা ও মাতা
মা।
(কাঁদিতে কাঁদিতে) বাছার আমার কী হল গা!
পিতা।
হাঁগো, তুমি বেশি গোল কোরো না। হাঁসপাতালে নিয়ে গেলেই এ ব্যামো সেরে যাবে।
মা।
আমি বেশি গোল করছি, না তোমার ছেলের পেট বেশি গোল করছে! (সভয়ে) এ যে হাঁসের মতো ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ করে। বাবা হারু, তোকে আর আমি হাঁসের ডিম খেতে দেব না-- তোর পেটের মধ্যে হাঁস ডাকছে-- কী হবে! [ ক্রন্দন
হারাধন।
(তাড়াতাড়ি) না মা, ও হাঁস নয়, ও তালের বড়া। হাঁস তোমাকে কে বললে? কক্খনো হাঁস নয়। হাঁস হতেই পারে না। আচ্ছ, বাজি রাখো, যদি তালের বড়া হয়!
মা।
তালের বড়া কি অমন করে ডাকে বাছা!
হারাধন।
তুমি একটু চুপ করো মা! তোমাদের গোলমাল শুনে পেটের ভিতর আরো বেশি করে ডাকছে।
পিতা।
বোসদের বাড়ি আমার একটু কাজ আছে, আমি কাজ সেরেই হারুকে নিয়ে হাঁসপাতালে যাচ্ছি।
[ প্রস্থান
ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ ক্যাঁক্
মা।
ওগো, এ যে ক্রমেই বাড়তে চলল! ওগো মুখুজ্যেমশাই!
মুখুজ্যেমশাইয়ের প্রবেশ
মুখুজ্যে।
কী গো বাছা?
মা।
বাছার আমার ক্রমেই বাড়তে লাগল। একে শিগগির-- ঐ-যে কী বলে ঐ-- তোমাদের হাঁচপাতালে নিয়ে চলো।
মুখুজ্যে।
আমি তো তাই প্রথম থেকেই বলছি, হারুর বাবাই তো এতক্ষণ দেরি করিয়ে রাখলে। (হারার প্রতি) তবে চল্, ওঠ্।
হারাধন।
না দাদামশায়, আমি হাঁসপাতালে যাব না, আমার কিছু হয় নি।
মুখুজ্যে।
কিছু হয় নি বটে! তোর পেটের ডাকের চোটে পাড়াসুদ্ধ অস্থির হয়ে উঠল। পেটের মধ্যে বাত শ্লেষ্মা পিত্ত তিনটিতে মিলে যেন দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধিয়ে দিয়েছে।
[ বলপূর্বক লইয়া যাওন
চতুর্থ দৃশ্য
হাঁসপাতালে ডাক্তার-সাহেব ও হারাধন
ডাক্তার।
টোমার পেটে কী হইয়াছে?
হারাধন।
কিছু হয় নি সাহেব। এবার আমাকে মাপ করো সাহেব, আমার কিছু হয় নি।
ডাক্তার।
কিছু হয় নি টো এ কী?
পেটে খোঁচা দেওন ও দ্বিগুন ক্যাঁক্ ক্যাঁক্ শব্দ
(হাসিয়া) টোমার ব্যামো আমি সমষ্ট বুঝিয়াছি।
হারাধন।
তোমার গা ছুঁয়ে বলছি সাহেব, আমার কোনো ব্যামো হয় নি। এমন কাজ আর কখনো করব না।
ডাক্তার।
টোমার ভয়ানক ব্যামো হইয়াছে।
হারাধন।
সাহেব, আমার ব্যামো আমি জানি নে, তুমি জান!
ক্যাঁক্ ক্যাঁক্
(সরোষে থলিতে চাপড় মারিয়া ) আ মোলো যা, এর যে ডাক কিছুতেই থামে না।
ডাক্তার।
(বৃহৎ ছুরি লইয়া) টোমার চুরি ব্যামো হইয়াছে, ছুরি না ডিলে সারিবে না।
পেট চিরিতে উদ্যত
হারাধন।
(কাঁদিয়া হাঁস বাহির করিয়া) সাহেব, এই নাও তোমার হাঁস। তোমার এ হাঁস কোনোমতেই আমার পেটে সইল না। এর চেয়ে ডিমগুলো ছিলো ভালো।
হারাধনকে ধরিয়া সাহেবের প্রহার
সাহেব, আর আবশ্যক নেই, আমার ব্যামো একেবারেই সেরে গেছে।