১৩৪১


 

মোটকথা (motkotha -2)

গদ্যছন্দ


গদ্য বলতে বুঝি যে-ভাষা আলাপ করবার ভাষা; ছন্দোবদ্ধ পদে বিভক্ত যে ভাষা তাই পদ্য। আর, রসাত্মক বাক্যকেই আলংকারিক পণ্ডিত কাব্য সংজ্ঞা দিয়েছেন। এই রসাত্মক বাক্য পদ্যে বললে সেটা হবে পদ্যকাব্য আর গদ্যে বললে হবে গদ্যকাব্য। গদ্যেও অকাব্য ও কুকাব্য হতে পারে, পদ্যেও তথৈবচ। গদ্যে তার সম্ভাবনা বেশি, কেননা ছন্দেরই একটা স্বকীয় রস আছে-- সেই ছন্দকে ত্যাগ করে যে-কাব্য সুন্দরী বিধবার মতো তার অলংকার তার আপন বাণীদেহেই, বাইরে নয়। এ কথা বলা বাহুল্য যে, গদ্যকাব্যেও একটা আবাঁধা ছন্দ আছে। আন্তরিক প্রবর্তনা থেকে কাব্য সেই ছন্দ চলতে চলতে আপনি উদ্ভাবিত করে, তার ভাগগুলি অসম হয় কিন্তু সবসুদ্ধ জড়িয়ে ভারসামঞ্জস্য থেকে সে স্খলিত হয় না। বড়ো-ওজনের সংস্কৃত ছন্দে এই আপাতপ্রতীয়মান মুক্তগতি দেখতে পাওয়া যায়। যেমন--

 

          মেঘৈ র্মেদুর । মম্বরং বনভুবঃ । শ্যামস্তমা । লদ্রুমৈঃ।

 

 

এই ছন্দ সমান ভাগ মানে না, কিন্তু সমগ্রের ওজন মেনে চলে। মুখের কথায় আমরা যখন খবর দিই তখন সেটাতে নিশ্বাসের বেগে ঢেউ খেলায় না। যেমন--

 

                         তার চেহারাটা মন্দ নয়।

 

 

কিন্তু ভাবের আবেগ লাগবামাত্র আপনি ঝোঁক এসে পড়ে। যেমন--

 

                             কী সুন্দর তার চেহারাটি।

 

 

একে ভাগ করলে এই দাঁড়ায় --

 

                           কী সুন্‌ । দর তার । চেহারাটি।

 

 

মরে যাই তোমার বালাই নিয়ে।

 

          এত গুমর সইবে না গো, সইবে না-- এই বলে দিলুম।

                   কথা কয় নি তো কয়নি

                             চলে গেছে সামনে দিয়ে,

                                   বুক ফেটে মরব না তাই বলে।

 

 

এ-সমস্তই প্রতিদিনের চলতি কথার সহজ ছন্দ, গদ্যকাব্যের গতিবেগে আত্মরচিত। মনকে খবর দেবার সময় এর দরকার হয় না, ধাক্কা দেবার সময়ে আপনি দেখা দেয়, ছান্দসিকের দাগ-কাটা মাপকাঠির অপেক্ষা রাখে না।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •