হাজারিবাগ, ১১ চৈত্র, ১৩০৯


 

১ (bhorer pakhi dake kothay)


ভোরের পাখি ডাকে কোথায়

      ভোরের পাখি ডাকে।

ভোর না হতে ভোরের খবর

      কেমন করে রাখে।

এখনো যে আঁধার নিশি

জড়িয়ে আছে সকল দিশি

কালীবরন পুচ্ছ ডোরের

      হাজার লক্ষ পাকে।

ঘুমিয়ে-পড়া বনের কোণে

      পাখি কোথায় ডাকে।

 

ওগো তুমি ভোরের পাখি,

      ভোরের ছোটো পাখি,

কোন্‌ অরুণের আভাস পেয়ে

      মেল' তোমার আঁখি।

কোমল তোমার পাখার 'পরে

সোনার রেখা স্তরে স্তরে,

বাঁধা আছে ডানায় তোমার

      উষার রাঙা রাখি।

ওগো তুমি ভোরের পাখি,

      ভোরের ছোটো পাখি।

 

রয়েছে বট, শতেক জটা

      ঝুলছে মাটি ব্যেপে,

পাতার উপর পাতার ঘটা

      উঠছে ফুলে ফেঁপে।

তাহারি কোন্‌ কোণের শাখে

নিদ্রাহারা ঝিঁঝির ডাকে

বাঁকিয়ে গ্রীবা ঘুমিয়েছিলে

      পাখাতে মুখ ঝেঁপে,

যেখানে বট দাঁড়িয়ে একা

      জটায় মাটি ব্যেপে।

 

ওগো ভোরের সরল পাখি,

      কহো আমায় কহো--

ছায়ায় ঢাকা দ্বিগুণ রাতে

      ঘুমিয়ে যখন রহ,

হঠাৎ তোমার কুলায়-'পরে

কেমন ক'রে প্রবেশ করে

আকাশ হতে আঁধার-পথে

      আলোর বার্তাবহ।

ওগো ভোরের সরল পাখি

      কহো আমায় কহো!

 

কোমল তোমার বুকের তলে

      রক্ত নেচে উঠে,

উড়বে ব'লে পুলক জাগে

      তোমার পক্ষপুটে।

চক্ষু মেলি পুবের পানে

নিদ্রা-ভাঙা নবীন গানে

অকুণ্ঠিত কণ্ঠ তোমার

      উৎস-সমান ছুটে।

কোমল তোমার বুকের তলে

      রক্ত নেচে উঠে।

 

এত আঁধার-মাঝে তোমার

      এতই অসংশয়!

বিশ্বজনে কেহই তোরে

      করে না প্রত্যয়।

তুমি ডাক,"দাঁড়াও পথে,

সূর্য আসেন স্বর্ণরথে--

রাত্রি নয়, রাত্রি নয়,

      রাত্রি নয় নয়।'

এত আঁধার-মাঝে তোমার

      এতই অসংশয়!

 

আনন্দেতে জাগো আজি

      আনন্দেতে জাগো।

ভোরের পাখি ডাকে যে ওই

      তন্দ্রা এখন না গো।

প্রথম আলো পড়ুক মাথায়,

নিদ্রা-ভাঙা আঁখির পাতায়,

জ্যোতির্ময়ী উদয়-দেবীর

      আশীর্বচন মাগো।

ভোরের পাখি গাহিছে ওই,

      আনন্দেতে জাগো।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •