ভাদ্র ১৩১২


 

ঘাটের পথে (ghater pothe)


ওরা          চলেছে দিঘির ধারে।

           ওই শোনা যায় বেণুবনছায়

                 কঙ্কণঝংকারে।

           আমার চুকেছে দিবসের কাজ,

           শেষ হয়ে গেছে জল ভরা আজ,

                দাঁড়ায়ে রয়েছি দ্বারে।

       ওরা          চলেছে দিঘির ধারে।

 

        আমি     কোন্‌ ছলে যাব ঘাটে--

               শাখা-থরথর পাতা-মরমর

                    ছায়া সুশীতল বাটে?

               বেলা বেশি নাই, দিন হল শোধ--

               ছায়া বেড়ে যায়, পড়ে আসে রোদ--

                   এ বেলা কেমনে কাটে।

        আমি     কোন্‌ ছলে যাব ঘাটে।

    

 

    ওগো,   কী আমি কহিব আর।

            ভাবিস নে কেহ ভয় করি আমি

               ভরা-কলসের ভার।

            যা হোক তা হোক এই ভালোবাসি--

            বহে নিয়ে যাই, ভরে নিয়ে আসি,

               কতদিন কতবার।

    ওগো,    আমি কী কহিব আর।

 

    এ কি         শুধু জল নিয়ে আসা।

           এই আনাগোনা কিসের লাগি যে

               কী কব, কী আছে ভাষা!

           কত-না দিনের আঁধারে আলোতে

           বহিয়া এনেছি এই বাঁকা পথে

               কত কাঁদা কত হাসা।

    এ কি         শুধু জল নিয়ে আসা।

 

    আমি     ডরি নাই ঝড়জল,

           উড়েছে আকাশে উতলা বাতাসে

               উদ্দাম অঞ্চল।

           বেণুশাখা'পরে বারি ঝরঝরে,

           এ কূলে ও কূলে কালো ছায়া পড়ে,

               পথঘাট পিচ্ছল।

    আমি     ডরি নাই ঝড়জল।

 

    আমি     গিয়েছি আঁধার সাঁজে।

           শিহরি শিহরি উঠে পল্লব

               নির্জন বনমাঝে।

           বাতাস থমকে, জোনাকি চমকে

           ঝিল্লির সাথে ঝমকে ঝমকে

               চরণে ভূষণ বাজে।

    আমি     গিয়েছি আঁধার সাঁজে।

 

        যবে         বুকে ভরি উঠে ব্যথা,

               ঘরের ভিতরে না দেয় থাকিতে

                   অকারণ আকুলতা।

               আপনার মনে একা পথে চলি,

               কাঁখের কলসী বলে ছলছলি

                   জলভরা কলকথা--

        যবে           বুকে ভরি উঠে ব্যথা।

 

        ওগো  দিনে কতবার করে

               ঘর-বাহিরের মাঝখানে রহি

                   ওই পথ ডাকে মোরে।

               কুসুমের বাস ধেয়ে ধেয়ে আসে,

               কপোতকূজন-করুণ আকাশে

                   উদাসীন মেঘ ঘোরে--

        ওগো,    দিনে কতবার করে।

 

        আমি     বাহির হইব বলে

               যেন সারাদিন কে বসিয়া থাকে

                   নীল আকাশের কোলে!

               তাই কানাকানি পাতায় পাতায়,

               কালো লহরীর মাথায় মাথায়

                   চঞ্চল আলো দোলে--

        আমি     বাহির হইব বলে।

 

        আজ     ভরা হয়ে গেছে বারি।

               আঙিনার দ্বারে চাহি পথপানে

                   ঘর ছেড়ে যেতে নারি।

               দিনের আলোক ম্লান হয়ে আসে,

               বধূগণ ঘাটে যায় কলহাসে

                   কক্ষে লইয়া ঝারি--

        মোর      ভরা হয়ে গেছে বারি।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •