রম্ফিউস জাহাজ, ২৪ অগস্ট, ১৯২৭


 

     আরেক দিন (arek din)


  স্পষ্ট মনে জাগে,

                তিরিশ বছর আগে

তখন আমার বয়স পঁচিশ-- কিছুকালের তরে

এই দেশেতেই এসেছিলেম, এই বাগানের ঘরে।

            সূর্য যখন নেমে যেত নীচে

       দিনের শেষে ওই পাহাড়ে পাইনশাখার পিছে,

             নীল শিখরের আগায় মেঘে মেঘে

             আগুনবরন কিরণ রইত লেগে,

       দীর্ঘ ছায়া বনে বনে এলিয়ে যেত পর্বতে পর্বতে--

         সামনেতে ওই কাঁকর-ঢালা পথে

            দিনের পরে দিনে

ডাক-পিয়নের পায়ের ধ্বনি নিত্য নিতেম চিনে।

         মাসের পরে মাস গিয়েছে, তবু

         একবারো তার হয় নি কামাই কভু।

আজও তেমনি সূর্য ডোবে সেইখানেতেই এসে

      পাইন-বনের শেষে,

         সুদূর শৈলতলে

      সন্ধ্যাছায়ার ছন্দ বাজে ঝরনাধারার জলে,

      সেই সেকালের মতোই তেমনিধারা

         তারার পরে তারা

            আলোর মন্ত্র চুপি চুপি শুনায় কানে পর্বতে পর্বতে;

            শুধু আমার কাঁকর-ঢালা পথে

                 বহুকালের চেনা

        ডাক-পিয়নের পায়ের ধ্বনি একদিনও বাজবে না।

আজকে তবু কী প্রত্যাশা জাগল আমার মনে,--

          চলতে চলতে গেলেম অকারণে

ডাকঘরে সেই মাইল-তিনেক দূরে।

     দ্বিধা ভরে মিনিট কুড়িক এ-দিক ও-দিক ঘুরে

           ডাকবাবুদের কাছে

     শুধাই এসে, "আমার নামে চিঠিপত্তর আছে?'

           জবাব পেলেম,"কই, কিছু তো নেই।'

     শুনে তখন নতশিরে আপন-মনেতেই

           অন্ধকারে ধীরে ধীরে

     আসছি যখন শূন্য আমার ঘরের দিকে ফিরে,

           শুনতে পেলেম পিছন দিকে

     করুণ গলায় কে অজানা বললে হঠাৎ কোন্‌ পথিকে,--

           "মাথা খেয়ো, কাল কোরো না দেরি।'

     ইতিহাসের বাকিটুকু আঁধার দিল ঘেরি।

বক্ষে আমার বাজিয়ে দিল গভীর বেদনা সে

       পঁচিশ বছর-বয়স-কালের ভুবনখানির একটি দীর্ঘশ্বাসে,

       যে-ভুবনে সন্ধ্যাতারা শিউরে যেত ওই পাহাড়ের দূরে

কাঁকর-ঢালা পথের 'পরে ডাক-পিয়নের পদধ্বনির সুরে।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •