২৭ জুলাই, ১৯৩২


 

সান্ত্বনা (swantona 2)


সকালের আলো এই বাদলবাতাসে

                 মেঘে রুদ্ধ হয়ে আসে

           ভাঙা কণ্ঠে কথার মতন।

                    মোর মন

           এ অস্ফুট প্রভাতের মতো

      কী কথা বলিতে চায়, থাকে বাক্যহত।

              মানুষের জীবনের মজ্জায় মজ্জায়

      যে-দুঃখ নিহিত আছে অপমানে শঙ্কায় লজ্জায়,

                কোনো কালে যার অস্ত নাই,

                      আজি তাই

      নির্যাতন করে মোরে। আপনার দুর্গমের মাঝে

           সান্ত্বনার চির-উৎস কোথায় বিরাজে,

      যে উৎসের গূঢ় ধারা বিশ্বচিত্ত-অন্তঃস্তরে

                 উন্মুক্ত পথের তরে

                       নিত্য ফিরে যুঝে

               আমি তারে মরি খুঁজে।

                       আপন বাণীতে

               কী পুণ্যে বা পারিব আনিতে

      সেই সুগম্ভীর শান্তি, নৈরাশ্যের তীব্র বেদনারে

           স্তব্ধ যা করিতে পারে।

                 হায় রে ব্যথিত,

      নিখিল-আত্মার কেন্দ্রে বাজে অকথিত

      আরোগ্যের মহামন্ত্র, যার গুণে

                 সৃজনের হোমের আগুনে

      নিজেরে আহুতি দিয়া নিত্য সে নবীন হয়ে উঠে, --

      প্রাণেরে ভরিয়া তুলে নিত্যই মৃত্যুর করপুটে।

           সেই মন্ত্র শান্ত মৌনতলে

      শুনা যায় আত্মহারা তপস্যার বলে।

           মাঝে-মাঝে পরম বৈরাগী

      সে-মন্ত্র চেয়েছে দিতে সর্বজন লাগি।

              কে পারে তা করিতে বহন,

           মুক্ত হয়ে কে পারে তা করিতে গ্রহণ।

              গতিহীন আর্ত অক্ষমের তরে

      কোন্‌ করুণার স্বর্গে মন মোর দয়া ভিক্ষা করে

                     ঊর্ধ্বে বাহু তুলি।

      কে বন্ধু রয়েছ কোথা, দাও দাও খুলি

                       পাষাণকারার দ্বার --

           যেথায় পুঞ্জিত হল নিষ্ঠুরের অত্যাচার,

                    বঞ্চনা লোভীর,

                 যেথায় গভীর

      মর্মে উঠে বিষাইয়া সত্যের বিকার

                 আমিত্ববিমুগ্ধ মন যে দুর্বহ ভার

      আপনার আসক্তিতে জমায়েছে আপনার 'পরে,

      নির্মম বর্জনশক্তি দাও তার অন্তরে অন্তরে।

                 আমার বাণীতে দাও সেই সুধা

      যাহাতে মিটিতে পারে আত্মার গভীরতম ক্ষুধা।

           হেনকালে সহসা আসিল কানে

      কোন্‌ দূর তরুশাখে শ্রান্তিহীন গানে

                       অদৃশ্য কে পাখি

           বার বার উঠিতেছে ডাকি।

      কহিলাম তারে, "ওগো, তোমার কণ্ঠেতে আছে আলো,

                       অবসাদ-আঁধার ঘুচাল।

                     তোমার সহজ এই প্রাণের প্রোল্লাস

                       সহজেই পেতেছে প্রকাশ।

         আদিম আনন্দ যাহা এ বিশ্বের মাঝে,

           যে আনন্দ অন্তিমে বিরাজে,

           যে পরম আনন্দলহরী

      যত দুঃখ যত সুখ নিয়েছে আপনা-মাঝে হরি,

          আমারে দেখালে পথ তুমি তারি পানে

                 এই তব অকারণ গানে।'

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •