আশ্বিন, ১৩৪৩


 

      ঘট ভরা (ghor bhora)


আমার এই ছোটো কলসখানি

সারা সকাল পেতে রাখি

ঝরনাধারার নিচে।

বসে থাকি একটি ধারে

শেওলাঢাকা পিছল কালো পাথরটাতে।

ঘট ভরে যায় বারে বারে--

ফেনিয়ে ওঠে, ছাপিয়ে পড়ে কেবলি।

সবুজ দিয়ে মিনে-করা

শৈলশ্রেণীর নীল আকাশে

ঝর্‌ঝরানির শব্দ ওঠে দিনে রাতে।

ভোরের ঘুমে ডাক শোনে তার

গাঁয়ের মেয়েরা।

জলের শব্দ যায় পেরিয়ে

বেগনি রঙের বনের সীমানা,

পাহাড়তলির রাস্তা ছেড়ে

যেখানে ঐ হাটের মানুষ

ধীরে ধীরে উঠছে চড়াইপথে,

বলদ দুটোর পিঠে বোঝাই

শুকনো কাঠের আঁটি;

রুনুঝুনু ঘণ্টা গলায় বাঁধা।

ঝর্‌ঝরানি আকাশ ছাপিয়ে

ভাবনা আমার ভাসিয়ে নিয়ে কোথায় চলে

পথহারানো দূর বিদেশে।

রাঙা ছিল সকালবেলার প্রথম রোদের রং

উঠল সাদা হয়ে।

বক  উড়ে যায় পাহাড় পেরিয়ে।

বেলা হল ডাক পড়েছে ঘরে।

ওরা আমায় রাগ ক'রে কয়

"দেরি করলি কেন?"

চুপ করে সব শুনি;

ঘট ভরতে হয় না দেরি সবাই জানে,

উপচে-পড়া জলের কথা

বুঝবে না তো কেউ।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •