শান্তিনিকেতন, ২৩ এপ্রিল ১৯৩৭


 

সন্ধ্যা (sondhya)


চলেছিল সারাপ্রহর

                   আমায় নিয়ে দূরে

          যাত্রী-বোঝাই দিনের নৌকো

                             অনেক ঘাটে ঘুরে।

          দূর কেবলই বেড়ে ওঠে

                   সামনে যতই চাই|

                             অন্ত যে তার নাই

          দূর ছড়িয়ে রইল দিকে দিকে,

আকাশ থেকে দূর চেয়ে রয় নির্নিমিখে।

          দিনের রৌদ্রে বাজতে থাকে

                   যাত্রাপথের সুর,

অনেক দূর-যে অনেক অনেক দূর।

          ওগো সন্ধ্যা শেষপ্রহরের নেয়ে,

                   ভাসাও খেয়া ভাঁটার গঙ্গা বেয়ে।

                   পৌঁছিয়ে দাও কূলে

          যেথায় আছ অতি-কাছের

                   দুয়ারখানি খুলে।

ওই-যে তোমার সন্ধ্যাতারা

                   মনকে ছুঁয়ে আছে,

ছায়ায় ঢাকা আম্‌লকী-বন

                   এগিয়ে এল কাছে।

দিনের আলো সবার আলো

                   লাগিয়েছিল ধাঁদা--

অনেক সেথায় নিবিড় হয়ে

                   দিল অনেক বাধা।

নানান-কিছু ছুঁয়ে ছুঁয়ে

          হারানো আর পাওয়ায়

          নানান দিকে ধাওয়ায়।

সন্ধ্যা ওগো কাছের তুমি,

          ঘনিয়ে এসো প্রাণে--

আমার মধ্যে তারে জাগাও

          কেউ যারে না জানে।

ধীরে ধীরে দাও আঙিনায় আনি

          একলারই দীপখানি,

মুখোমুখি চাওয়ার সে দীপ,

          কাছাকাছি বসার,

          অতি-দেখার আবরণটি খসার।

সব-কিছুরে সরিয়ে করো

          একটু-কিছুর ঠাঁই--

          যার চেয়ে আর নাই।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •