শান্তিনিকেতন, ১ পৌষ, ১৩৪৫


 

অটোগ্রাফ (otograph)


খুলে আজ বলি, ওগো নব্য,

নও তুমি পুরোপুরি সভ্য।

জগৎটা যত লও চিনে

ভদ্র হতেছ দিনে দিনে।

বলি তবু সত্য এ কথা--

বারো-আনা অভদ্রতা

কাপড়ে-চোপড়ে ঢাক' তারে,

ধরা তবু পড়ে বারে বারে,

কথা যেই বার হয় মুখে

সন্দেহ যায় সেই চুকে।

ডেস্কেতে দেখিলাম, মাতা

রেখেছেন অটোগ্রাফ-খাতা।

আধুনিক রীতিটার ভানে

যেন সে তোমারই দাবি আনে।

এ ঠকানো তোমার যে নয়

মনে মোর নাই সংশয়।

সংসারে যারে বলে নাম

তার যে একটু নেই দাম

সে কথা কি কিছু ঢাকা আছে

শিশু ফিলজফারের কাছে।

খোকা বলে, বোকা বলে কেউ--

তা নিয়ে কাঁদ না ভেউ-ভেউ।

নাম-ভোলা খুশি নিয়ে আছ,

নামের আদর নাহি যাচ।

খাতাখানা মন্দ এ না গো

পাতা-ছেঁড়া কাজে যদি লাগ।

আমার নামের অক্ষর

চোখে তব দেবে ঠোক্কর।

ভাববে, এ বুড়োটার খেলা,

আঁচড়-পাঁচড় কাটে মেলা।

লজঞ্জুসের যত মূল্য

নাম মোর নহে তার তুল্য।

তাই তো নিজেরে বলি, ধিক্‌,

তোমারই হিসাব-জ্ঞান ঠিক।

বস্তু-অবস্তুর সেন্স্‌

খাঁটি তব, তার ডিফারেন্স্‌

পষ্ট তোমার কাছে খুবই--

তাই, হে লজঞ্জুস-লুভি,

মতলব করি মনে মনে,

খাতা থাক্‌ টেবিলের কোণে।

বনমালী কো-অপেতে গেলে

টফি-চকোলেট যদি মেলে

কোনোমতে তবে অন্তত

মান রবে আজকের মতো।

ছ বছর পরে নিয়ো খাতা,

পোকায় না কাটে যদি পাতা।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •