ঘরেতে ভ্রমর এল গুন্গুনিয়ে। আমারে কার কথা সে যায় শুনিয়ে॥ আলোতে কোন্ গগনে মাধবী জাগল বনে, এল সেই ফুল-জাগানোর খবর নিয়ে। সারাদিন সেই কথা সে যায় শুনিয়ে। কেমনে রহি ঘরে, মন যে কেমন করে, কেমনে কাটে যে দিন দিন গুনিয়ে। কী মায়া দেয় বুলায়ে, দিল সব কাজ ভুলায়ে, বেলা যায় গানের সুরে জাল বুনিয়ে। আমারে কার কথা সে যায় শুনিয়ে॥
সোনার পিঞ্জর ভাঙিয়ে আমার প্রাণের পাখিটি উড়িয়ে যাক। সে যে হেথা গান গাহে না! সে যে মোরে আর চাহে না! সুদূর কানন হইতে সে যে শুনেছে কাহার ডাক-- পাখিটি উড়িয়ে যাক॥ মুদিত নয়ন খুলিয়ে আমার সাধের স্বপন যায় রে যায়। হাসিতে অশ্রুতে গাঁথিয়া গাঁথিয়া দিয়েছিনু তার বাহুতে বাঁধিয়া আপনার মনে কাঁদিয়া কাঁদিয়া ছিঁড়িয়া ফেলেছে হায় রে হায়, সাধের স্বপন যায় রে যায়॥ যে যায় সে যায়, ফিরিয়ে না চায়, যে থাকে সে শুধু করে হায়-হায়-- নয়নের জল নয়নে শুকায়-- মরমে লুকায় আশা। বাঁধিতে পারে না আদরে সোহাগে-- রজনী পোহায়, ঘুম হতে জাগে, যায় যদি তবে যাক। একবার তবু ডাক্। কী জানি যদি রে প্রাণ কাঁদে তার তবে থাক্, তবে থাক্॥
আমাকে যে বাঁধবে ধরে এই হবে যার সাধন, সে কি অমনি হবে। আপনাকে সে বাঁধা দিয়ে আমায় দেবে বাঁধন, সে কি অমনি হবে॥ আমাকে যে দুঃখ দিয়ে আনবে আপন বশে, সে কি অমনি হবে। তার আগে তার পাষাণ হিয়া গলবে করুণ রসে, সে কি অমনি হবে। আমাকে যে কাঁদাবে তার ভাগ্যে আছে কাঁদন, সে কি অমনি হবে॥