তুমি উষার সোনার বিন্দু প্রাণের সিন্ধুকূলে,
শরৎ-প্রাতের প্রথম শিশির প্রথম শিউলিফুলে॥
     আকাশপারের ইন্দ্রধনু ধরার পারে নোওয়া,
     নন্দনেরই নন্দিনী গো চন্দ্রলেখায় ছোঁওয়া,
     প্রতিপদে চাঁদের স্বপন শুভ্র মেঘে ছোঁওয়া--
     স্বর্গলোকের গোপন কথা মর্তে এলে ভুলে॥
তুমি কবির ধেয়ান-ছবি পূর্বজনম-স্মৃতি,
তুমি আমার কুড়িয়ে পাওয়া হারিয়ে-যাওয়া গীতি।
     যে কথাটি যায় না বলা কইলে চুপে চুপে,
     তুমি আমার মুক্তি হয়ে এলে বাঁধনরূপে--
     অমল আলোর কমলবনে ডাকলে দুয়ার খুলে।

এ তো খেলা নয়, খেলা নয়।
এ যে হৃদয়-দহন-জ্বালা, সখী।
এ যে, প্রাণভরা ব্যাকুলতা,
গোপন মর্মের ব্যথা,
এ যে, কাহার চরণোদ্দেশে জীবন মরণ ঢালা।
কে যেন সতত মোরে
ডাকিয়ে আকুল করে,
যাই যাই করে প্রাণ, যেতে পারি নে।
যে কথা বলিতে চাহি,
তা বুঝি বলিতে নাহি,
কোথায় নামায়ে রাখি, সখী, এ প্রেমের ডালা।
যতনে গাঁথিয়ে শেষে, পরাতে পারি নে মালা।

তোর   ভিতরে জাগিয়া কে যে,
তারে   বাঁধনে রাখিলি বাঁধি।
হায়     আলোর পিয়াসি সে যে
তাই    গুমরি উঠিছে কাঁদি ॥
যদি     বাতাসে বহিল প্রাণ
কেন    বীণায় বাজে না গান,
যদি     গগনে জাগিল আলো
কেন    নয়নে লাগিল আঁধি?।
পাখি    নবপ্রভাতের বাণী
দিল     কাননে কাননে আনি,
ফুলে   নবজীবনের আশা
কত     রঙে রঙে পায় ভাষা।
হোথা   ফুরায়ে গিয়েছে রাতি,
হেথা    জ্বলে নিশীথের বাতি--
তোর   ভবনে ভুবনে কেন
হেন     হয়ে গেল আধা-আধি?।