এই তো ভালো লেগেছিল আলোর নাচন পাতায় পাতায়। শালের বনে খ্যাপা হাওয়া, এই তো আমার মনকে মাতায়। রাঙা মাটির রাস্তা বেয়ে হাটের পথিক চলে ধেয়ে, ছোটো মেয়ে ধুলায় বসে খেলার ডালি একলা সাজায়-- সামনে চেয়ে এই যা দেখি চোখে আমার বীণা বাজায়॥
আমার এ যে বাঁশের বাঁশি, মাঠের সুরে আমার সাধন। আমার মনকে বেঁধেছে রে এই ধরণীর মাটির বাঁধন। নীল আকাশের আলোর ধারা পান করেছে নতুন যারা সেই ছেলেদের চোখের চাওয়া নিয়েছি মোর দু চোখ পুরে-- আমার বীণায় সুর বেঁধেছি ওদের কচি গলার সুরে॥
দূরে যাবার খেয়াল হলে সবাই মোরে ঘিরে থামায়-- গাঁয়ের আকাশ সজনে ফুলের হাতছানিতে ডাকে আমায়। ফুরায় নি, ভাই, কাছের সুধা, নাই যে রে তাই দূরের ক্ষুধা-- এই-যে এ-সব ছোটোখাটো পাই নি এদের কূলকিনারা। তুচ্ছ দিনের গানের পালা আজও আমার হয় নি সারা ॥
লাগল ভালো, মন ভোলালো, এই কথাটাই গেয়ে বেড়াই-- দিনে রাতে সময় কোথা, কাজের কথা তাই তো এড়াই। মজেছে মন, মজল আঁখি-- মিথ্যে আমায় ডাকাডাকি-- ওদের আছে অনেক আশা, ওরা করুক অনেক জড়ো-- আমি কেবল গেয়ে বেড়াই, চাই নে হতে আরো বড়ো ॥
আরো কিছুখন নাহয় বসিয়ো পাশে, আরো যদি কিছু কথা থাকে তাই বলো। শরত-আকাশ হেরো ম্লান হয়ে আসে, বাষ্প-আভাসে দিগন্ত ছলোছলো ॥ জানি তুমি কিছু চেয়েছিলে দেখিবারে, তাই তো প্রভাতে এসেছিলে মোর দ্বারে, দিন না ফুরাতে দেখিতে পেলে কি তারে হে পথিক, বলো বলো-- সে মোর অগম অন্তরপারাবারে রক্তকমল তরঙ্গে টলোমলো ॥ দ্বিধাভরে আজও প্রবেশ কর নি ঘরে, বাহির আঙনে করিলে সুরের খেলা। জানি না কী নিয়ে যাবে যে দেশান্তরে, হে অতিথি, আজি শেষ বিদায়ের বেলা। প্রথম প্রভাতে সব কাজ তব ফেলে যে গভীর বাণী শুনিবারে কাছে এলে কোনোখানে কিছু ইশারা কি তার পেলে, হে পথিক, বলো বলো-- সে বাণী আপন গোপন প্রদীপ জ্বেলে রক্ত আগুনে প্রাণে মোর জ্বলোজ্বলো ॥