আমার দিন ফুরালো ব্যাকুল বাদলসাঁঝে গহন মেঘের নিবিড় ধারার মাঝে॥ বনের ছায়ায় জলছলছল সুরে হৃদয় আমার কানায় কানায় পূরে। খনে খনে ওই গুরুগুরু তালে তালে গগনে গগনে গভীর মৃদঙ বাজে॥ কোন্ দূরের মানুষ যেন এল আজ কাছে, তিমির-আড়ালে নীরবে দাঁড়ায়ে আছে। বুকে দোলে তার বিরহব্যথার মালা গোপন-মিলন-অমৃতগন্ধ-ঢালা। মনে হয় তার চরণের ধ্বনি জানি-- হার মানি তার অজানা জনের সাজে॥
কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে ছিল অচেতন, ও তার ঘুম ভাঙাইনু রে। লক্ষ যুগের অন্ধকারে ছিল সঙ্গোপন, ওগো, তায় জাগাইনু রে॥ পোষ মেনেছে হাতের তলে যা বলাই সে তেমনি বলে-- দীর্ঘ দিনের মৌন তাহার আজ ভাগাইনু রে॥ অচল ছিল, সচল হয়ে ছুটেছে ওই জগৎ-জয়ে-- নির্ভয়ে আজ দুই হাতে তার রাশ বাগাইনু রে॥
মনে রয়ে গেল মনের কথা-- শুধু চোখের জল, প্রাণের ব্যথা ॥ মনে করি দুটি কথা ব'লে যাই, কেন মুখের পানে চেয়ে চলে যাই। সে যদি চাহে মরি যে তাহে, কেন মুদে আসে আঁখির পাতা ॥ ম্লানমুখে, সখী, সে যে চলে যায়-- ও তারে ফিরায়ে ডেকে নিয়ে আয় বুঝিল না সে যে কেঁদে গেল-- ধুলায় লুটাইল হৃদয়লতা।