তরুতলে ছিন্নবৃন্ত মালতীর ফুল—
            মুদিয়া আসিছে আঁখি তার,  চাহিয়া দেখিল চারি ধার ।।
                  শুষ্ক তৃণরাশি-মাঝে একেলা পড়িয়া,
            চারি দিকে কেহ নাই আর— নিরদয় অসীম সংসার ।।
                  কে আছে গো দিবে তার তৃষিত অধরে
            একবিন্দু শিশিরের কণা— কেহ না, কেহ না ।।
            মধুকর কাছে এসে বলে,  ‘মধু কই। মধু চাই, চাই ।’
            ধীরে ধীরে নিশ্বাস ফেলিয়া  ফুল বলে, ‘কিছু নাই, নাই।’
            ‘ফুলবালা, পরিমল দাও’ বায়ু আসি কহিতেছে কাছে ।
            মলিন বদন ফিরাইয়া  ফুল বলে, ‘আর কী বা আছে।’
            মধ্যাহ্নকিরণ চারি দিকে  খরদৃষ্টে চেয়ে অনিমিখে—
                   ফুলটির মৃদু প্রাণ হায়,
                          ধীরে ধীরে শুকাইয়া যায় ।।

আলো আমার, আলো ওগো, আলো ভুবন-ভরা।
আলো নয়ন-ধোওয়া আমার, আলো হৃদয়-হরা॥
        নাচে আলো নাচে, ও ভাই,    আমার প্রাণের কাছে--
        বাজে আলো বাজে, ও ভাই    হৃদয়বীণার মাঝে--
        জাগে আকাশ, ছোটে বাতাস, হাসে সকল ধরা॥
আলোর স্রোতে পাল তুলেছে হাজার প্রজাপতি।
আলোর ঢেউয়ে উঠল নেচে মল্লিকা মালতী।
        মেঘে মেঘে সোনা, ও ভাই,    যায় না মানিক গোনা--
        পাতায় পাতায় হাসি, ও ভাই,    পুলক রাশি রাশি--
        সুরনদীর কূল ডুবেছে সুধা-নিঝর-ঝরা॥

          হৃদয়বেদনা বহিয়া, প্রভু, এসেছি তব দ্বারে।
          তুমি অর্ন্তযামী হৃদয়স্বামী, সকলই জানিছ হে--
          যত দুঃখ লাজ দারিদ্র৻ সঙ্কট আর জানাইব কারে?।
          অপরাধ কত করেছি, নাথ, মোহপাশে প'ড়ে--
          তুমি ছাড়া, প্রভু, মার্জনা কেহ করিবে না সংসারে ॥
          সব বাসনা দিব বিসর্জন তোমার প্রেমপাথারে,
          সব বিরহ বিচ্ছেদ ভুলিব তব মিলন-অমৃতধারে।
আর    আপন ভাবনা পারি না ভাবিতে, তুমি লহো মোর ভার--
          পরিশ্রান্ত জনে, প্রভু, লয়ে যাও সংসারসাগরপারে ॥