এই তো ভালো লেগেছিল আলোর নাচন পাতায় পাতায়। শালের বনে খ্যাপা হাওয়া, এই তো আমার মনকে মাতায়। রাঙা মাটির রাস্তা বেয়ে হাটের পথিক চলে ধেয়ে, ছোটো মেয়ে ধুলায় বসে খেলার ডালি একলা সাজায়-- সামনে চেয়ে এই যা দেখি চোখে আমার বীণা বাজায়॥
আমার এ যে বাঁশের বাঁশি, মাঠের সুরে আমার সাধন। আমার মনকে বেঁধেছে রে এই ধরণীর মাটির বাঁধন। নীল আকাশের আলোর ধারা পান করেছে নতুন যারা সেই ছেলেদের চোখের চাওয়া নিয়েছি মোর দু চোখ পুরে-- আমার বীণায় সুর বেঁধেছি ওদের কচি গলার সুরে॥
দূরে যাবার খেয়াল হলে সবাই মোরে ঘিরে থামায়-- গাঁয়ের আকাশ সজনে ফুলের হাতছানিতে ডাকে আমায়। ফুরায় নি, ভাই, কাছের সুধা, নাই যে রে তাই দূরের ক্ষুধা-- এই-যে এ-সব ছোটোখাটো পাই নি এদের কূলকিনারা। তুচ্ছ দিনের গানের পালা আজও আমার হয় নি সারা ॥
লাগল ভালো, মন ভোলালো, এই কথাটাই গেয়ে বেড়াই-- দিনে রাতে সময় কোথা, কাজের কথা তাই তো এড়াই। মজেছে মন, মজল আঁখি-- মিথ্যে আমায় ডাকাডাকি-- ওদের আছে অনেক আশা, ওরা করুক অনেক জড়ো-- আমি কেবল গেয়ে বেড়াই, চাই নে হতে আরো বড়ো ॥
গিয়াছে সে দিন যে দিন হৃদয় রূপেরই মোহনে আছিল মাতি, প্রাণের স্বপন আছিল যখন-- 'প্রেম' 'প্রেম' শুধু দিবস-রাতি। শান্তিময়ী আশা ফুটেছে এখন হৃদয়-আকাশপটে, জীবন আমার কোমল বিভায় বিমল হয়েছে বটে, বালককালের প্রেমের স্বপন মধুর যেমন উজল যেমন তেমন কিছুই আসিবে না -- তেমন কিছুই আসিবে না॥
সে দেবীপ্রতিমা নারিব ভুলিতে প্রথম প্রণয় আঁকিল যাহা, স্মৃতিমরু মোর শ্যামল করিয়া এখনো হৃদয়ে বিরাজে তাহা। সে প্রতিমা সেই পরিমলসম পলকে যা লয় পায়, প্রভাতকালের স্বপন যেমন পলকে মিশায়ে যায় অলসপ্রবাহ জীবনে আমার সে কিরণ কভু ভাসিবে না আর -- সে কিরণ কভু ভাসিবে না -- সে কিরণ কভু ভাসিবে না॥