খ্যাপা তুই আছিস আপন খেয়াল ধরে। যে আসে তোরই পাশে, সবাই হাসে দেখে তোরে ॥ জগতে যে যার আছে আপন কাজে দিবানিশি। তারা পায় না বুঝে তুই কী খুঁজে ক্ষেপে-বেড়াস জনম ভ'রে ॥ তোর নাই অবসর, নাইকো দোসর ভবের মাঝে। তোরে চিনতে যে চাই, সময় না পাই নানান কাজে। ওরে, তুই কী শুনাতে এত প্রাতে মরিস ডেকে? এ যে বিষম জ্বালা ঝালাপালা, দিবি সবায় পাগল করে। ওরে, তুই কী এনেছিস, কী টেনেছিস ভাবের জালে? তার কি মূল্য আছে কারো কাছে কোনো কালে?। আমরা লাভের কাজে হাটের মাঝে ডাকি তোরে! তুই কি সৃষ্টিছাড়া, নাইকো সাড়া, রয়েছিস কোন্ নেশায় ঘোরে? এ জগৎ আপন মতে আপন পথে চলে যাবে-- বসে তুই আর-এক কোণে নিজের মনে নিজের ভাবে ॥ ওরে ভাই, ভাবের সাথে ভবের মিলন হবে কবে-- মিছে তুই তারি লাগি আছিস জাগি না জানি কোন্ আশার জোরে ॥
আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলায় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন! তারি গলার মালা হতে পাপড়ি হোথা লুটায় ছিন্ন ॥ এল যখন সাড়াটি নাই, গেল চলে জানালো তাই-- এমন ক'রে আমারে হায় কে বা কাঁদায় সে জন ভিন্ন ॥ তখন তরুণ ছিল অরুণ আলো, পথটি ছিল কুসুমকীর্ণ। বসন্ত যে রঙিন বেশে ধরায় সে দিন অবতীর্ণ। সে দিন খবর মিলল না যে, রইনু বসে ঘরের মাঝে-- আজকে পথে বাহির হব বহি আমার জীবন জীর্ণ ॥
আমারে বাঁধবি তোরা সেই বাঁধন কি তোদের আছে। আমি যে বন্দী হতে সন্ধি করি সবার কাছে॥ সন্ধ্যা আকাশ বিনা ডোরে বাঁধল মোরে গো, নিশিদিন বন্ধহারা নদীর ধারা আমায় যাচে। যে কুসুম আপনি ফোটে, আপনি ঝরে, রয় না ঘরে গো-- তারা যে সঙ্গী আমার, বন্ধু আমার, চায় না পাছে॥ আমারে ধরবি ব'লে মিথ্যে সাধা। আমি যে নিজের কাছে নিজের গানের সুরে বাঁধা। আপনি যাহার প্রাণ দুলিল, মন ভুলিল গো-- সে মানুষ আগুন-ভরা, পড়লে ধরা সে কি বাঁচে। সে যে ভাই, হাওয়ার সখা, ঢেউয়ের সাথি, দিবারাতি গো কেবলই এড়িয়ে চলার ছন্দে তাহার রক্ত নাচে॥