আমি     আশায় আশায় থাকি।
আমার    তৃষিত-আকুল আঁখি॥
          ঘুমে-জাগরণে-মেশা    প্রাণে স্বপনের নেশা--
              দূর দিগন্তে চেয়ে কাহারে ডাকি॥
     বনে বনে করে কানাকানি    অশ্রুত বাণী,
          কী গাহে পাখি।
     কী কব না পাই ভাষা,    মোর    জীবন রঙিন কুয়াশা
              ফেলেছে ঢাকি।

     ওদের   বাঁধন যতই শক্ত হবে ততই বাঁধন টুটবে,
              মোদের ততই বাঁধন টুটবে।
     ওদের   যতই আঁখি রক্ত হবে মোদের আঁখি ফুটবে,
              ততই মোদের আঁখি ফুটবে ॥
আজকে যে তোর কাজ করা চাই,   স্বপ্ন দেখার সময় তো নাই--
     এখন    ওরা যতই গর্জাবে, ভাই তন্দ্রা ততই ছুটবে,
              মোদের      তন্দ্রা ততই ছুটবে ॥
ওরা          ভাঙতে যতই চাবে জোরে   গড়বে ততই দ্বিগুণ করে,
তোরা       ভরসা না ছাড়িস কভু,   জেগে আছেন জগৎ-প্রভু--
ওরা          ধর্ম যতই দলবে ততই ধুলায় ধ্বজা লুটবে,
              ওদের        ধুলায় ধ্বজা লুটবে ॥

ভোর থেকে আজ বাদল ছুটেছে-- আয় গো আয়।
কাঁচা রোদখানি পড়েছে বনের ভিজে পাতায়॥
     ঝিকি ঝিকি করি কাঁপিতেছে বট--
     ওগো ঘাটে আয়, নিয়ে আয় ঘট--
পথের দু ধারে শাখে শাখে আজি পাখিরা গায়॥
তপন-আতপে আতপ্ত হয়ে উঠেছে বেলা,
     কলস পাকড়ি আঁকড়িয়া বুকে
     ভরা জলে তোরা ভেসে যাবি সুখে
তিমিরনিবিড় ঘনঘোরে ঘুমে স্বপনপ্রায়-- আয় গো আয়॥
মেঘ ছুটে গেল, নাই গো বাদল-- আয় গো আয়।
আজিকে সকালে শিথিল কোমল বহিছে বায়-- আয় গো আয়।
          এ ঘাট হইতে ও ঘাটে তাহার
          কথা বলাবলি নাহি চলে আর,
একাকার হল তীরে আর নীরে তাল-তলায়--   আয় গো আয়॥