যখন তুমি বাঁধছিলে তার সে যে বিষম ব্যথা--
বাজাও বীণা, ভুলাও ভুলাও সকল দুখের কথা ॥
          এতদিন যা সঙ্গোপনে    ছিল তোমার মনে মনে
          আজকে আমার তারে তারে শুনাও সে বারতা ॥
আর বিলম্ব কোরো না গো, ওই-যে নেবে বাতি।
দুয়ারে মোর নিশীথিনী রয়েছে কান পাতি।
          বাঁধলে যে সুর তারায় তারায়   অন্তবিহীন অগ্নিধারায়,
          সেই সুরে মোর বাজাও প্রাণে তোমার ব্যাকুলতা ॥

ঝড়ে   যায় উড়ে যায় গো   আমার   মুখের আঁচলখানি।
ঢাকা   থাকে না হায় গো,   তারে রাখতে নারি টানি॥
          আমার রইল না লাজলজ্জা,   আমার   ঘুচল গো সাজসজ্জা--
          তুমি   দেখলে আমারে   এমন   প্রলয়-মাঝে আনি
                             আমায়   এমন মরণ হানি॥
হঠাৎ    আকাশ উজলি   কারে   খুঁজে কে ওই চলে,
চমক    লাগায় বিজুলি   আমার   আঁধার ঘরের তলে।
          তবে   নিশীথগগন জুড়ে   আমার   যাক সকলই উড়ে,
          এই   দারুণ কল্লোলে   বাজুক   আমার প্রাণের বাণী
                             কোনো   বাঁধন নাহি মানি॥

আপন-মনে গোপন কোণে লেখাজোখার কারখানাতে
দুয়ার রুধে বচন কুঁদে খেলনা আমার হয় বানাতে॥
     এই জগতের সকাল সাঁজে   ছুটি আমার সকল কাজে,
     মিলে মিলে মিলিয়ে কথা রঙে রঙে হয় মানাতে॥
কে গো আছে ভুবন-মাঝে নিত্যশিশু আনন্দেতে,
ডাকে আমায় বিশ্বখেলায় খেলাঘরের জোগান দিতে।
     বনের হাওয়ায় সকাল-বেলা   ভাসায় সে যে গানের ভেলা,
     সেই তো কাঁপায় সুরের কাঁপন মৌমাছিদের নীল ডানাতে॥