কেমন করে তড়িৎ-আলোয় দেখতে পেলেম মনে তোমার বিপুল সৃষ্টি চলে আমার এই জীবনে। সে সৃষ্টি যে কালের পটে লোকে লোকান্তরে রটে, একটু তারি আভাস কেবল দেখি ক্ষণে ক্ষণে। মনে ভাবি, কান্নাহাসি আদর অবহেলা সবই যেন আমায় নিয়ে আমারি ঢেউ-খেলা। সেই আমি তো বাহনমাত্র, যায় সে ভেঙে মাটির পাত্র-- যা রেখে যায় তোমার সে ধন রয় তা তোমার সনে। তোমার বিশ্বে জড়িয়ে থাকে আমার চাওয়া পাওয়া। ভরিয়ে তোলে নিত্যকালের ফাল্গুনেরই হাওয়া। জীবন আমার দুঃখে সুখে দোলে ত্রিভুবনের বুকে, আমার দিবানিশির মালা জড়ায় শ্রীচরণে। আপন-মাঝে আপন জীবন দেখে যে মন কাঁদে। নিমেষগুলি শিকল হয়ে আমায় তখন বাঁধে। মিটল দুঃখ, টুটল বন্ধ-- আমার মাঝে হে আনন্দ, তোমার প্রকাশ দেখে মোহ ঘুচল এ নয়নে।
ভেবেছিনু মনে যা হবার তারি শেষে যাত্রা আমার বুঝি থেমে গেছে এসে। নাই বুঝি পথ, নাই বুঝি আর কাজ, পাথেয় যা ছিল ফুরায়েছে বুঝি আজ, যেতে হবে সরে নীরব অন্তরালে জীর্ণ জীবনে ছিন্ন মলিন বেশে। কী নিরখি আজি, এ কী অফুরান লীলা, এ কী নবীনতা বহে অন্তঃশীলা। পুরাতন ভাষা মরে এল যবে মুখে, নবগান হয়ে গুমরি উঠিল বুকে, পুরাতন পথ শেষ হয়ে গেল যেথা সেথায় আমারে আনিলে নূতন দেশে।
না গণি মনের ক্ষতি ধনের ক্ষতিতে হে বরেণ্য, এই বর দেহো মোর চিতে। যে ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ তোমার ভুবন এই তৃণভূমি হতে সুদূর গগন যে আলোকে, যে সংগীতে, যে সৌন্দর্যধনে, তার মূল্য নিত্য যেন থাকে মোর মনে স্বাধীন সবল শান্ত সরল সন্তোষ। অদৃষ্টেরে কভু যেন নাহি দিই দোষ কোনো দুঃখ কোনো ক্ষতি অভাবের তরে। বিস্বাদ না জন্মে যেন বিশ্বচরাচরে ক্ষুদ্র খন্ড হারাইয়া। ধনীর সমাজে না হয় না হোক স্থান, জগতের মাঝে আমার আসন যেন রহে সর্ব ঠাঁই, হে দেব, একান্তচিত্তে এই বর চাই।