বিদেশী ফুলের গুচ্ছ - ১ (bideshi phuler guchchho)

মধুর সূর্যের আলো, আকাশ বিমল,

সঘনে উঠিছে নাচি তরঙ্গ উজ্জ্বল।

         মধ্যাহ্নের স্বচ্ছ করে

         সাজিয়াছে থরে থরে

ক্ষুদ্র নীল দ্বীপগুলি, শুভ্র শৈলশির।

         কাননে কুঁড়িরে ঘিরি

         পড়িতেছে ধীরি ধীরি

পৃথিবীর অতি মৃদু নিশ্বাসসমীর।

একই আনন্দে যেন গায় শত প্রাণ--

বাতাসের গান আর পাখিদের গান।

         সাগরের জলরব

         পাখিদের কলরব

এসেছে কোমল হয়ে স্তব্ধতার সংগীত-সমান।

 

                  ২

আমি দেখিতেছি চেয়ে সমুদ্রের জলে

শৈবাল বিচিত্রবর্ণ ভাসে দলে দলে।

         আমি দেখিতেছি চেয়ে

         উপকূল-পানে ধেয়ে

মুঠি মুঠি তারাবৃষ্টি করে ঢেউগুলি।

         বিরলে বালুকাতীরে

         একা বসে রয়েছি রে,

চারি দিকে চমকিছে জলের বিজুলি।

তালে তালে ঢেউগুলি করিছে উত্থান--

তাই হতে উঠিতেছে কী একটি তান।

         মধুর ভাবের ভরে

         হৃদয় কেমন করে,

আমার সে ভাব আজি বুঝিবে কি আর কোনো প্রাণ।

 

                  ৩

হায় মোর নাই আশা, নাইকো আরাম--

ভিতরে নাইকো শান্তি, বাহিরে বিরাম।

         নাই সে সন্তোষধন

          জ্ঞানী ঋষি যোগীগণ।

ধ্যানসাধনায় যাহা পায় করতলে--

         আনন্দ-মগন-মন

         করে তারা বিচরণ,

বিমল মহিমালোক অন্তরেতে জ্বলে।

নাই যশ, নাই প্রেম, নাই অবসর--

পূর্ণ করে আছে এরা সকলেরি ঘর।

         সুখে তারা হাসে খেলে,

         সুখের জীবন বলে--

আমার কপালে বিধি লিখিয়াছে আরেক অক্ষর।

 

                  ৪

কিন্তু নিরাশাও শান্ত হয়েছে এমন

যেমন বাতাস এই, সলিল যেমন

         মনে হয় মাথা থুয়ে

         এইখানে থাকি শুয়ে

অতিশয় শ্রান্তকায় শিশুটির মতো।

         কাঁদিয়া দুঃখের প্রাণ

         করে দিই অবসান--

যে দুঃখ বহিতে হবে,বহিয়াছি কত।

আসিবে ঘুমের মতো মরণের কোল,

ধীরে ধীরে হিম হয়ে আসিবে কপোল।

         মুমূর্ষু শ্রবণতলে

         মিশাইবে পলে পলে

সাগরের অবিরাম একতান অন্তিম কল্লোল।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Rendition

Please Login first to submit a rendition. Click here for help.