দুর্ভাগিনী (durbhagini)

তোমার সম্মুখে এসে, দুর্ভাগিনী, দাঁড়াই যখন

          নত হয় মন।

                   যেন ভয় লাগে

প্রলয়ের আরম্ভেতে স্তব্ধতার আগে।

          এ কী দুঃখভার,

কী বিপুল বিষাদের স্তম্ভিত নীরন্ধ্র অন্ধকার

     ব্যাপ্ত করে আছে তব সমস্ত জগৎ,

                   তব ভূত ভবিষ্যৎ!

     প্রকাণ্ড এ নিষ্ফলতা,

          অভ্রভেদী ব্যথা

        দাবদগ্ধ পর্বতের মতো

                   খররৌদ্রে রয়েছে উন্নত

                 লয়ে নগ্ন কালো কালো শিলাস্তূপ

                             ভীষণ বিরূপ।

                সব সান্ত্বনার শেষে সব পথ একেবারে

                   মিলেছে শূন্যের অন্ধকারে;

                 ফিরিছ বিশ্রামহারা ঘুরে ঘুরে,

          খুঁজিছ কাছের বিশ্ব মুহূর্তে যা চলে গেল দূরে;

                 খুঁজিছ বুকের ধন, সে আর তো নেই,

                   বুকের পাথর হল মুহূর্তেই।

               চিরচেনা ছিল চোখে চোখে,

             অকস্মাৎ মিলালো অপরিচিত লোকে।

          দেবতা যেখানে ছিল সেথা জ্বালাইতে গেলে ধূপ,

                   সেখানে বিদ্রূপ।

                      সর্বশূন্যতার ধারে

                  জীবনের পোড়ো ঘরে অবরুদ্ধ দ্বারে

                      দাও নাড়া;

                   ভিতরে কে দিবে সাড়া?

                  মূর্ছাতুর আঁধারের উঠিছে নিশ্বাস।

          ভাঙা বিশ্বে পড়ে আছে ভেঙে-পড়া বিপুল বিশ্বাস।

                   তার কাছে নত হয় শির

              চরম বেদনাশৈলে ঊর্ধ্বচূড় যাহার মন্দির।

                   মনে হয়, বেদনার মহেশ্বরী

                      তোমার জীবন ভরি

                   দুষ্করতপস্যামগ্ন, মহাবিরহিণী

                       মহাদুঃখে করিছেন ঋণী

                             চিরদয়িতরে।

তোমারে সরালো শত ফেরে

     বিশ্ব হতে বৈরাগ্যের অন্তরাল।

                             দেশকাল

                   রয়েছে বাহিরে।

          তুমি স্থির সীমাহীন নৈরাশ্যের তীরে

                 নির্বাক অপার নির্বাসনে।

                     অশ্রুহীন তোমার নয়নে

                      অবিশ্রাম প্রশ্ন জাগে যেন--

                          কেন, ওগো কেন!

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Rendition

Please Login first to submit a rendition. Click here for help.