স্মৃতি-প্রতিমা (smriti-pratimaa)
আজ কিছু করিব না আর,
সমুখেতে চেয়ে চেয়ে গুন গুন গেয়ে গেয়ে
বসে বসে ভাবি এক বার।
আজি বহু দিন পরে যেন সেই দ্বিপ্রহরে
সেদিনের বায়ু বহে যায়,
হা রে হা শৈশবমায়া, অতীত প্রাণের ছায়া,
এখনো কি আছিস হেথায়?
এখনো কি থেকে থেকে উঠিস রে ডেকে ডেকে,
সাড়া দিবে সে কি আর আছে?
যা ছিল তা আছে সেই, আমি যে সে আমি নেই,
কেন রে আসিস মোর কাছে?
কেন রে পুরানো স্নেহে পরানের শূন্য গেহে
দাঁড়ায়ে মুখের পানে চাস?
অভিমানে ছলছল নয়নে কী কথা বল,
কেঁদে ওঠে হৃদয় উদাস।
আছিল যে আপনার সে বুঝি রে নাই আর,
সে বুঝি রে হয়ে গেছে পর,
তবু সে কেমন আছে, শুধাতে আসিস কাছে,
দাঁড়ায়ে কাঁপিস থর্ থর্।
আয় রে আয় রে অয়ি, শৈশবের স্মৃতিময়ী,
আয় তোর আপনার দেশে,
যে প্রাণ আছিল তোরি তাহারি দুয়ার ধরি
কেন আজ ভিখারিনী, বেশে।
আগুসরি ধীরি ধীরি বার বার চাস ফিরি,
সংশয়েতে চলে না চরণ,
ভয়ে ভয়ে মুখপানে চাহিস আকুল প্রাণে,
ম্লান মুখে না সরে বচন।
দেহে যেন নাহি বল, চোখে পড়ে-পড়ে জল,
এলো চুলে, মলিন বসনে--
কথা কেহ বলে পাছে ভয়ে না আসিস কাছে,
চেয়ে রোস আকুল নয়নে।
সেই ঘর সেই দ্বার মনে পড়ে বার বার
কত যে করিলি খেলাধূলি,
খেলা ফেলে গেলি চলে, কথাটি না গেলি বলে,
অভিমানে নয়ন আকুলি।
যেথা যা গেছিলি রেখে ধুলায় গিয়েছে ঢেকে,
দেখ্ রে তেমনি আছে পড়ি,
সেই অশ্রু সেই গান সেই হাসি অভিমান,
ধুলায় যেতেছে গড়াগড়ি।
তবে রে বারেক আয় বোস হেথা পুনরায়,
ধুলিমাখা অতীতের মাঝে--
শূন্য গৃহ জনহীন পড়ে আছে কত দিন,
আর হেথা বাঁশি নাহি বাজে।
কেন তবে আসিবি নে কেন কাছে বসিবি নে
এখনো বাসিস যদি ভালো!
আয় রে ব্যাকুল প্রাণে চাই দুঁহু মুখপানে,
গোধূলিতে নিব-নিব আলো।
নিবিছে সাঁঝের ভাতি, আসিছে আঁধার রাতি
এখনি ছাইবে চারি ভিতে--
রজনীর অন্ধকারে মরণসাগর-পারে
কেহ কারে নারিব দেখিতে।
আকাশের পানে চাই-- চন্দ্র নাই, তারা নাই,
একটু না বহিছে বাতাস,
শুধু দীর্ঘ দীর্ঘ নিশি দুজনে আঁধারে মিশি
শুনিব দোঁহার দীর্ঘশ্বাস।
এক বার চেয়ে দেখি, কোন্খানে আছে যে কী,
কোন্খানে করেছিনু খেলা,
শুকানো এ মালাগুলি রাখি রে কণ্ঠেতে তুলি,
কখন চলিয়া যাবে বেলা।
আয় তবে আয় হেথা, কোলে তোর রাখি মাথা,
কেশপাশে মুখ দে রে ঢেকে
বিন্দু বিন্দু ধীরে ধীরে অশ্রু পড়ে অশ্রুনীরে,
নিশ্বাস উঠিছে থেকে থেকে।
সেই পুরাতন স্নেহে হাতটি বুলাও দেহে,
মাথাটি বুকেতে তুলে রাখি--
কথা কও নাহি কও, চোখে চোখে চেয়ে রও,
আঁখিতে ডুবিয়া যাক আঁখি।