শুরু হতেই ও আমার সঙ্গ ধরেছে, ঐ একটা অনেক কালের বুড়ো, আমাতে মিশিয়ে আছে এক হয়ে। আজ আমি ওকে জানাচ্ছি-- পৃথক হব আমরা। ও এসেছে কতলক্ষ পূর্বপুরুষের রক্তের প্রবাহ বেয়ে; কত যুগের ক্ষুধা ওর, কত তৃষ্ণা; সে সব বেদনা বহু দিনরাত্রিকে মথিত করেছে সুদীর্ঘ ধারাবাহী অতীতকালে; তাই নিয়ে ও অধিকার ক'রে বসল নবজাত প্রাণের এই বাহনকে, ঐ প্রাচীন, ঐ কাঙাল। আকাশবাণী আসে ঊর্ধ্বলোক হতে, ওর কোলাহলে সে যায় আবিল হয়ে। নৈবেদ্য সাজাই পূজার থালায়, ও হাত বাড়িয়ে নেয় নিজে। জীর্ণ করে ওকে দিনে দিনে পলে পলে, বাসনার দহনে, ওর জরা দিয়ে আচ্ছন্ন করে আমাকে যে-আমি জরাহীন। মুহূর্তে মুহূর্তে ও জিতে নিয়েছে আমার মমতা, তাই ওকে যখন মরণে ধরে ভয় লাগে আমার যে-আমি মৃত্যুহীন। আমি আজ পৃথক হব। ও থাক্ ঐ খানে দ্বারের বাহিরে, ঐ বৃদ্ধ, ঐ বুভুক্ষু। ও ভিক্ষা করুক, ভোগ করুক, তালি দিক্ বসে বসে ওর ছেঁড়া চাদরখানাতে; জন্মমরণের মাঝখানটাতে যে আল-বাঁধা খেতটুকু আছে সেইখানে করুক উঞ্ছবৃত্তি। আমি দেখব ওকে জানলায় ব'সে, ঐ দূরপথের পথিককে, দীর্ঘকাল ধরে যে এসেছে বহু দেহমনের নানা পথের বাঁকে বাঁকে মৃত্যুর নানা খেয়া পার হয়ে। উপরের তলায় বসে দেখব ওকে ওর নানা খেয়ালের আবেশে, আশা-নৈরাশ্যের ওঠা-পড়ায় সুখদুঃখের আলো-আঁধারে। দেখব যেমন করে পুতুলনাচ দেখে; হাসব মনে মনে। মুক্ত আমি, স্বচ্ছ আমি, স্বতন্ত্র আমি, নিত্যকালের আলো আমি, সৃষ্টি-উৎসের আনন্দধারা আমি, অকিঞ্চন আমি, আমার কোনো কিছুই নেই অহংকারের প্রাচীরে ঘেরা।