আমি শুধু বলেছিলেম -- "কদম গাছের ডালে পূর্ণিমা-চাঁদ আটকা পড়ে যখন সন্ধেকালে তখন কি কেউ তারে ধরে আনতে পারে।' শুনে দাদা হেসে কেন বললে আমায়, "খোকা, তোর মতো আর দেখি নাইকো বোকা। চাঁদ যে থাকে অনেক দূরে কেমন করে ছুঁই; আমি বলি, "দাদা, তুমি জান না কিচ্ছুই। মা আমাদের হাসে যখন ওই জানলার ফাঁকে তখন তুমি বলবে কি, মা অনেক দূরে থাকে।' তবু দাদা বলে আমায়, "খোকা, তোর মতো আর দেখি নাই তো বোকা।' দাদা বলে, "পাবি কোথায় অত বড়ো ফাঁদ।' আমি বলি, "কেন দাদা, ওই তো ছোটো চাঁদ, দুটি মুঠোয় ওরে আনতে পারি ধরে।' শুনে দাদা হেসে কেন বললে আমায়, "খোকা, তোর মতো আর দেখি নাই তো বোকা। চাঁদ যদি এই কাছে আসত দেখতে কত বড়ো।' আমি বলি, "কী তুমি ছাই ইস্কুলে যে পড়। মা আমাদের চুমো খেতে মাথা করে নিচু, তখন কি আর মুখটি দেখায় মস্ত বড়ো কিছু।' তবু দাদা বলে আমায়, "খোকা, তোর মতো আর দেখি নাই তো বোকা।'
শেষের মধ্যে অশেষ আছে, এই কথাটি মনে আজকে আমার গানের শেষে জাগছে ক্ষণে ক্ষণে। সুর গিয়েছে থেমে তবু থামতে যেন চায় না কভু, নীরবতায় বাজছে বীণা বিনা প্রয়োজনে। তারে যখন আঘাত লাগে, বাজে যখন সুরে-- সবার চেয়ে বড়ো যে গান সে রয় বহুদূরে। সকল আলাপ গেলে থেমে শান্ত বীণায় আসে নেমে, সন্ধ্যা যেমন দিনের শেষে বাজে গভীর স্বনে।
শুনিয়াছি নিম্নে তব, হে বিশ্বপাথার, নাহি অন্ত মহামূল্য মণিমুকুতার। নিশিদিন দেশে দেশে পন্ডিত ডুবারি রত রহিয়াছে কত অন্বেষণে তারি। তাহে মোর নাহি লোভ মহাপারাবার! যে আলোক জ্বলিতেছে উপরে তোমার, যে রহস্য দুলিতেছে তব বক্ষতলে, যে মহিমা প্রসারিত তব নীল জলে, যে সংগীত উঠে তব নিয়ত আঘাতে, যে বিচিত্র লীলা তব মহানৃত্যে মাতে, এ জগতে কভু তার অন্ত যদি জানি, চিরদিনে কভু তাহে শ্রান্তি যদি মানি, তোমার অতলমাঝে ডুবিব তখন যেথায় রতন আছে অথবা মরণ।