জীবনের বিশেষ পর্বে কোনো বিশেষ প্রকৃতির কাব্য কোন্ উত্তেজনায় স্বাতন্ত্র৻ নিয়ে দেখা, এ প্রশ্ন কবিকে জিজ্ঞাসা করলে তাকে বিপন্ন করা হয়। কী করে সে জানবে। প্রাণের প্রবৃদ্ধিতে যে-সব পরিবর্তন ঘটতে থাকে তার ভিতরকার রহস্য সহজে ধরা পড়ে না। গাছের সব ডাল একই দিকে একই রকম করে ছড়ায় না, এ দিকে ও দিকে তারা বেঁকেচুরে পাশ ফেরে, তার বৈজ্ঞানিক কারণ লুকিয়ে আছে আকাশে বাতাসে আলোকে মাটিতে। গাছ যদি-বা চিন্তা করতে পারত তবু সৃষ্টিপ্রক্রিয়ার এই মন্ত্রণাসভায় সে জায়গা পেত না, তার ভোট থাকত না, সে কেবল স্বীকার করে নেয়-- এই তার স্বভাবসংগত কাজ। বাইরে বসে আছে যে প্রাণবিজ্ঞানী সে বরঞ্চ অনেক খবর দিতে পারে। কিন্তু বাইরের লোক যদি তাদের পাওনার মূল্য নিয়েই সন্তুষ্ট না থাকে, যদি জিজ্ঞাসা করে মালগুলো কেমন করে কোন্ ছাঁচে তৈরি হল, তা হলে কবির মধ্যে যে আত্মসন্ধানের হেড্-আপিস আছে সেখানে একবার তাগাদা করে দেখতে হয়। বস্তুত সোনার তরী তার নানা পণ্য নিয়ে কোন্ রপ্তানির ঘাট থেকে আমদানির ঘাটে এসে পৌঁছল ইতিপূর্বে কখনো এ প্রশ্ন নিজেকে করি নি, কেননা এর উত্তর দেওয়া আমার কর্তব্যের অঙ্গ নয়। মূলধন যার হাতে সেই মহাজনকে জিজ্ঞাসা করলে সে কথা কয় না, আমি তো মাঝি, হাতের কাছে যা জোটে তাই কুড়িয়ে নিয়ে এসে পৌঁছিয়ে দিই।
কোলাহল তো বারণ হল এবার কথা কানে কানে। এখন হবে প্রাণের আলাপ কেবলমাত্র গানে গানে। রাজার পথে লোক ছুটেছে, বেচাকেনার হাঁক উঠেছে, আমার ছুটি অবেলাতেই দিনদুপুরের মধ্যখানে, কাজের মাঝে ডাক পড়েছে কেন যে তা কেই বা জানে। মোর কাননে অকালে ফুল উঠুক তবে মুঞ্জরিয়া। মধ্যদিনে মৌমাছিরা বেড়াক মৃদু গুঞ্জরিয়া। মন্দ-ভালোর দ্বন্দ্বে খেটে গেছে তো দিন অনেক কেটে অলস-বেলার খেলার সাথি এবার আমার হৃদয় টানে। বিনা-কাজের ডাক পড়েছে কেন যে তা কেই বা জানে।