যে ভাবে রমণীরূপে আপন মাধুরী আপনি বিশ্বের নাথ করিছেন চুরি যে ভাবে সুন্দর তিনি সর্ব চরাচরে, যে ভাবে আনন্দ তাঁর প্রেমে খেলা করে, যে ভাবে লতার ফুল, নদীতে লহরী, যে ভাবে বিরাজে লক্ষ্মী বিশ্বের ঈশ্বরী, যে ভাবে নবীন মেঘ বৃষ্টি করে দান, তটিনী ধরারে স্তন্য করাইছে পান, যে ভাবে পরম-এক আনন্দে উৎসুক আপনারে দুই করি লভিছেন সুখ, দুইয়ের মিলনাঘাতে বিচিত্র বেদনা নিত্য বর্ণ গন্ধ গীত করিছে রচনা, হে রমণী, ক্ষণকাল আসি মোর পাশে চিত্ত ভরি দিলে সেই রহস্য আভাসে।
কলছন্দে পূর্ণ তার প্রাণ-- নিত্য বহমান ভাষার কল্লোলে জাগাইয়া তোলে চারি ধারে প্রত্যহের জড়তারে; সংগীতে তরঙ্গ তুলি হাসিতে ফেনিল তার ছোটো দিনগুলি। আঁখি তার কথা কয়, বাহুভঙ্গি কত কথা বলে, চরণ যখন চলে কথা কয়ে যায়-- যে কথাটি অরণ্যের পাতায় পাতায়; যে কথাটি ঢেউ তোলে আশ্বিনে ধানের খেতে, প্রান্ত হতে প্রান্তে যায় চলে; যে কথাটি নিশীথতিমিরে, তারায় তারায় কাঁপে অধীর মির্মিরে; যে কথাটি মহুয়ার বনে মধুপগুঞ্জনে সারাবেলা উঠিছে চঞ্চলি-- নাম কি কাকলী।
ও কথা বোলো না সখি -- প্রাণে লাগে ব্যথা -- আমি ভালোবাসি নাকো এ কিরূপ কথা! কী জানি কী মোর দশা কহিব কেমনে প্রকাশ করিতে নারি রয়েছে যা মনে -- পৃথিবী আমারে সখি চিনিল না তাই -- পৃথিবী না চিনে মোরে তাহে ক্ষতি নাই -- তুমিও কি বুঝিলে না এ মর্মকাহিনী তুমিও কি চিনিলে না আমারে স্বজনি?