এই অজানা সাগরজলে বিকেলবেলার আলো লাগল আমার ভালো। কেউ দেখে কেউ নাই-বা দেখে, রাখবে না কেউ মনে, এমনতরো ফেলাছড়ার হিসাব কি কেউ গোনে। এই দেখে মোর ভরল বুকের কোণ; কোথা থেকে নামল রে সেই খেপা দিনের মন, যেদিন অকারণ হঠাৎ হাওয়ায় যৌবনেরি ঢেউ ছল্ছলিয়ে উঠত প্রাণে জানত না তা কেউ। লাগত আমায় আপন গানের নেশা অনাগত ফাগুন দিনের বেদন দিয়ে মেশা। সে গান যারা শুনত তারা আড়াল থেকে এসে আড়ালেতে লুকিয়ে যেত হেসে। হয়তো তাদের দেবার ছিল কিছু, আভাসে কেউ জানায় নি তা নয়ন করে নিচু। হয়তো তাদের সারাদিনের মাঝে পড়ত বাধা একবেলাকার কাজে। চমক-লাগা নিমেষগুলি সেই হয়তো বা কার মনে আছে, হয়তো মনে নেই। জ্যোৎস্নারাতে একলা ছাদের 'পরে উদার অনাদরে কাটত প্রহর লক্ষ্যবিহীন প্রাণে, মূল্যবিহীন গানে। মোর জীবনে বিশ্বজনের অজানা সেই দিন, বাজত তাহার বুকের মাঝে খামখেয়ালী বীন,-- যেমনতরো এই সাগরে নিত্য সোনায় নীলে রূপ হারানো রাধাশ্যামের দোলন দোঁহায় মিলে, যেমনতরো ছুটির দিনে এমনি বিকেলবেলা দেওয়া নেওয়ার নাই কোনো দায়, শুধু হওয়ার খেলা, অজানাতে ভাসিয়ে দেওয়া আলোছায়ার ভেলা।
আমার নয়ন তব নয়নের নিবিড় ছায়ায় মনের কথার কুসুমকোরক খোঁজে। সেথায় কখন্ অগম গোপন গহন মায়ায় পথ হারাইল ও-যে। আতুর দিঠিতে শুধায় সে নীরবেরে, নিভৃত বাণীর সন্ধান নাই যে রে; অজানার মাঝে অবুঝের মতো ফেরে অশ্রুধারায় ম'জে। আমার হৃদয়ে যে কথা লুকানো, তার আভাষণ ফেলে কভু ছায়া তোমার হৃদয়তলে? দুয়ারে এঁকেছি রক্ত রেখায় পদ্ম-আসন, সে তোমারে কিছু বলে? তব কুঞ্জের পথ দিয়ে যেতে যেতে বাতাসে বাতাসে ব্যথা দিই মোর পেতে, বাঁশি কী আশায় ভাষা দেয় আকাশেতে সে কি কেহ নাহি বোঝে।