পঞ্চাশোর্ধ্বে বনে যাবে এমন কথা শাস্ত্রে বলে, আমরা বলি বানপ্রস্থ যৌবনেতেই ভালো চলে। বনে এত বকুল ফোটে, গেয়ে মরে কোকিল পাখি, লতাপাতার অন্তরালে বড়ো সরস ঢাকাঢাকি। চাঁপার শাখে চাঁদের আলো, সে সৃষ্টি কি কেবল মিছে? এ-সব যারা বোঝে তারা পঞ্চাশতের অনেক নীচে। পঞ্চাশোর্ধ্বে বনে যাবে এমন কথা শাস্ত্রে বলে, আমরা বলি বানপ্রস্থ যৌবনেতেই ভালো চলে। ঘরের মধ্যে বকাবকি, নানান মুখে নানা কথা। হাজার লোকে নজর পাড়ে, একটুকু নাই বিরলতা। সময় অল্প, ফুরায় তাও অরসিকের আনাগোনায়-- ঘণ্টা ধরে থাকেন তিনি সৎপ্রসঙ্গ-আলোচনায়। হতভাগ্য নবীন যুবা কাছেই থাকে বনের খোঁজে, ঘরের মধ্যে মুক্তি যে নেই এ কথা সে বিশেষ বোঝে। পঞ্চাশোর্ধ্বে বনে যাবে এমন কথা শাস্ত্রে বলে, আমরা বলি বানপ্রস্থ যৌবনেতেই ভালো চলে। আমরা সবাই নব্যকালের সভ্য যুবা অনাচারী, মনুর শাস্ত্র শুধরে দিয়ে নতুন বিধি করব জারি-- বুড়ো থাকুন ঘরের কোণে, পয়সাকড়ি করুন জমা, দেখুন বসে বিষয়-পত্র, চালান মামলা-মকদ্দমা, ফাগুন-মাসে লগ্ন দেখে যুবারা যাক বনের পথে, রাত্রি জেগে সাধ্যসাধন থাকুক রত কঠিন ব্রতে । পঞ্চাশোর্ধ্বে বনে যাবে এমন কথা শাস্ত্রে বলে, আমরা বলি বানপ্রস্থ যৌবনেতেই ভালো চলে।
যখন দিনের শেষে চেয়ে দেখি সমুখপানে সূর্য ডোবার দেশে মনের মধ্যে ভাবি অস্তসাগর-তলায় গেছে নাবি অনেক সূর্য-ডোবার সঙ্গে অনেক আনাগোনা, অনেক দেখাশোনা, অনেক কীর্তি, অনেক মূর্তি, অনেক দেবালয়, শক্তিমানের অনেক পরিচয়। তাদের হারিয়ে-যাওয়ার ব্যাথায় টান লাগে না মনে, কিন্তু যখন চেয়ে দেখি সামনে সবুজ বনে ছায়ায় চরছে গোরু, মাঝ দিয়ে তার পথ গিয়েছে সরু, ছেয়ে আছে শুক্নো বাঁশের পাতায়, হাট করতে চলে মেয়ে ঘাসের আঁঠি মাথায়, তখন মনে হঠাৎ এসে এই বেদনাই বাজে-- ঠাঁই রবে না কোনোকালেই ঐ যা-কিছুর মাঝে। ঐ যা-কিছুর ছবির ছায়া দুলেছে কোন্কালে শিশুর-চিত্ত-নাচিয়ে-তোলা ছড়াগুলির তালে-- তিরপূর্নির চরে বালি ঝুর্ঝুর্ করে, কোন্ মেয়ে সে চিকন-চিকন চুল দিচ্ছে ঝাড়ি, পরনে তার ঘুরে-পড়া ডুরে একটি শাড়ি। ঐ যা-কিছু ছবির আভাস দেখি সাঁঝের মুখে মর্ত্যধরার পিছু-ডাকা দোলা লাগায় বুকে।