আজ প্রভাতের আকাশটি এই শিশির-ছলছল, নদীর ধারের ঝাউগুলি ওই রৌদ্রে ঝলমল, এমনি নিবিড় করে এরা দাঁড়ায় হৃদয় ভরে তাই তো আমি জানি বিপুল বিশ্বভুবনখনি অকূল মানস-সাগরজলে কমল টলমল। তাই তো আমি জানি আমি বাণীর সাথে বাণী, আমি গানের সাথে গান, আমি প্রাণের সাথে প্রাণ, আমি অন্ধকারের হৃদয়-ফাটা আলোক জ্বলজ্বল।
বন্ধ হয়ে এল স্রোতের ধারা, শৈবালেতে আটক প'ল তরী। নৌকা-বাওয়া এবার করো সারা-- নাই রে হাওয়া, পাল নিয়ে কী করি। এখন তবে চলো নদীর তটে, গোধূলিতে আকাশ হল রাঙা। পশ্চিমেতে আঁকা আগুন-পটে বাব্লাবনে ওই দেখা যায় ডাঙা। ভেসো না আর, যেয়ো না আর ভেসে-- চলো এখন, যাবে যে দূরদেশে। এখন তোমায় তারার ক্ষীণালোকে চলতে হবে মাঠের পথে একা। গিরি কানন পড়বে কি আর চোখে, কুটিরগুলি যাবে কি আর দেখা। পিছন হতে দখিন-সমীরণে ফুলের গন্ধ আসবে আঁধার বেয়ে, অসময়ে হঠাৎ ক্ষণে ক্ষণে আবেশেতে দিবে হৃদয় ছেয়ে। চলো এবার, কোরো না আর দেরি-- মেঘের আভাস আকাশ-কোণে হেরি। হাটের সাথে ঘাটের সাথে আজি ব্যাবসা তোর বন্ধ হয়ে গেল। এখন ঘরে আয় রে ফিরে মাঝি, আঙিনাতে আসনখানি মেলো। ভুলে যা রে দিনের আনাগোনা, জ্বালতে হবে সারা রাতের আলো। শ্রান্ত ওরে, রেখে দে জাল-বোনা, গুটিয়ে ফেলো সকল মন্দ ভালো। ফিরিয়ে আনো ছড়িয়ে-পড়া মন-- সফল হোক সকল সমাপন।