আবার যদি ইচ্ছা কর আবার আসি ফিরে দুঃখসুখের-ঢেউ-খেলানো এই সাগরের তীরে। আবার জলে ভাসাই ভেলা, ধুলার 'পরে করি খেলা, হাসির মায়ামৃগীর পিছে ভাসি নয়ন-নীরে। কাঁটার পথে আঁধার রাতে আবার যাত্রা করি-- আঘাত খেয়ে বাঁচি কিম্বা আঘাত খেয়ে মরি। আবার তুমি ছদ্মবেশে আমার সাথে খেলাও হেসে, নূতন প্রেমে ভালোবাসি আবার ধরণীরে।
হে সুন্দরী, হে শিখা মহতী, তোমার অরূপ জ্যোতি রূপ লবে আমার জীবনে, তারি লাগি একমনে রচিলাম এই দীপখানি, মূর্তিমতী এই মোর অভ্যর্থনাবাণী। এসো এসো করো অধিষ্ঠান মোর দীর্ঘ জীবনের করো গো চরম বরদান। হয় নাই যোগ্য তব, কতবার ভাঙিয়াছি আবার গড়েছি অভিনব -- মোর শক্তি আপনারে দিয়েছে ধিক্কার। সময় নাহি যে আর, নিদ্রাহারা প্রহর-যে একে একে হয় অপগত, তাই আজ সমাপিনু ব্রত। গ্রহণ করো এ মোর চিরজীবনের রচনারে ক্ষণকাল স্পর্শ করো তারে। তার পরে রেখে যাব এ জন্মের এক সার্থকতা, চিরন্তন সুখ মোর, এই মোর চিরন্তন ব্যথা।
জানি আমি সুখে দুঃখে হাসি ও ক্রন্দনে পরিপূর্ণ এ জীবন, কঠোর বন্ধনে ক্ষতচিহ্ন পড়ে যায় গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে, জানি আমি, সংসারের সমুদ্র মন্থিতে কারো ভাগ্যে সুধা ওঠে, কারো হলাহল। জানি না কেন এ সব, কোন্ ফলাফল আছে এই বিশ্বব্যাপী কর্মশৃঙ্খলার। জানি না কী হবে পরে, সবি অন্ধকার আদি অন্ত এ সংসারে-- নিখিল দুঃখের অন্ত আছে কি না আছে, সুখ-বুভুক্ষের মিটে কি না চির-আশা। পণ্ডিতের দ্বারে চাহি না এ জনমরহস্য জানিবারে। চাহি না ছিঁড়িতে একা বিশ্বব্যাপী ডোর, লক্ষ কোটি প্রাণী-সাথে এক গতি মোর।