প্রণাম আমি পাঠানু গানে উদয়গিরিশিখর-পানে অস্তমহাসাগরতট হতে-- নবজীবনযাত্রাকালে সেখান হতে লেগেছে ভালে আশিসখানি অরুণ-আলোস্রোতে। প্রথম সেই প্রভাত-দিনে পড়েছি বাঁধা ধরার ঋণে, কিছু কি তার দিয়েছি শোধ করি? চিররাতের তোরণে থেকে বিদায়বাণী গেলেম রেখে নানারঙের বাষ্পলিপি ভরি।
বেসেছি ভালো এই ধরারে, মুগ্ধ চোখে দেখেছি তারে ফুলের দিনে দিয়েছি রচি গান; সে গানে মোর জড়ানো প্রীতি, সে গানে মোর রহুক স্মৃতি, আর যা আছে হউক অবসান। রোদের বেলা ছায়ার বেলা করেছি সুখদুখের খেলা, সে খেলাঘর মিলাবে মায়াসম; অনেক তৃষা, অনেক ক্ষুধা, তাহারি মাঝে পেয়েছি সুধা-- উদয়গিরি, প্রণাম লহো মম। বরষ আসে বরষশেষে, প্রবাহে তারই যায় রে ভেসে বাঁধিতে যারে চেয়েছি চিরতরে। বারে বারেই ঋতুর ডালি পূর্ণ হয়ে হয়েছে খালি মমতাহীন সৃষ্টিলীলাভরে। এ মোর দেহ-পেয়ালাখানা উঠেছে ভরি কানায় কানা রঙিন রসধারায় অনুপম। একটুকুও দয়া না মানি ফেলায়ে দেবে, জানি তা জানি, উদয়গিরি তবুও নমোনম। কখনো তার গিয়েছে ছিঁড়ে, কখনো নানা সুরের ভিড়ে রাগিণী মোর পড়েছে আধো চাপা। ফাল্গুনের আমন্ত্রণে জেগেছে কুঁড়ি গভীর বনে, পড়েছে ঝরি চৈত্রবায়ে-কাঁপা। অনেক দিনে অনেক দিয়ে ভেঙেছে কত গড়িয়ে গিয়ে, ভাঙন হল চরম প্রিয়তম; সাজাতে পূজা করি নি ত্রুটি, ব্যর্থ হলে নিলেম ছুটি-- উদয়গিরি, প্রণাম লহ মম।
প্রভু, আজি তোমার দক্ষিণ হাত রেখো না ঢাকি। এসেছি তোমারে, হে নাথ, পরাতে রাখী। যদি বাঁধি তোমার হাতে পড়ব বাঁধা সবার সাথে, যেখানে যে আছে কেহই রবে না বাকি। আজি যেন ভেদ নাহি রয় আপনা পরে, তোমায় যেন এক দেখি হে বাহিরে ঘরে। তোমার সাথে যে বিচ্ছেদে ঘুরে বেড়াই কেঁদে কেঁদে, ক্ষণেক-তরে ঘুচাতে তাই তোমারে ডাকি।
ওদের কথায় ধাঁদা লাগে তোমার কথা আমি বুঝি। তোমার আকাশ তোমার বাতাস এই তো সবি সোজাসুজি। হৃদয়-কুসুম আপনি ফোটে, জীবন আমার ভরে ওঠে, দুয়ার খুলে চেয়ে দেখি হাতের কাছে সকল পুঁজি। সকাল-সাঁঝে সুর যে বাজে ভুবনজোড়া তোমার নাটে, আলের জোয়ার বেয়ে তোমার তরী আসে আমার ঘাটে। শুনব কী আর বুঝব কী বা, এই তো দেখি রাত্রিদিবা ঘরেই তোমার আনাগোনা, পথে কী আর তোমায় খুঁজি?