কাঁকনজোড়া এনে দিলেম যবে ভেবেছিলেম হয়তো খুশি হবে। তুলে তুমি নিলে হাতের 'পরে, ঘুরিয়ে তুমি দেখলে ক্ষণেক-তরে, পরেছিলে হয়তো গিয়ে ঘরে, হয়তো বা তা রেখেছিলে খুলে। এলে যেদিন বিদায় নেবার রাতে কাঁকন-দুটি দেখি নাই তো হাতে, হয়তো এলে ভুলে। দেয় যে জনা কী দশা পায় তাকে। দেওয়ার কথা কেনই মনে রাখে। পাকা যে ফল পড়ল মাটির টানে শাখা আবার চায় কি তাহার পানে। বাতাসেতে উড়িয়ে-দেওয়া গানে তারে কি আর স্মরণ করে পাখি। দিতে যারা জানে এ সংসারে এমন করেই তারা দিতে পারে কিছু না রয় বাকি। নিতে যারা জানে তারাই জানে, বোঝে তারা মূল্যটি কোন্খানে। তারাই জানে বুকের রত্নহারে সেই মণিটি কজন দিতে পারে হৃদয় দিয়ে দেখিতে হয় যারে -- যে পায় তারে পায় সে অবহেলে। পাওয়ার মতন পাওয়া যারে কহে সহজ বলেই সহজ তাহা নহে, দৈবে তারে মেলে। ভাবি যখন ভেবে না পাই তবে দেবার মতো কী আছে এই ভবে। কোন্ খনিতে কোন্ ধনভাণ্ডারে সাগরতলে কিম্বা সাগরপারে যক্ষরাজের লক্ষমণির হারে যা আছে তা কিছুই তো নয় প্রিয়ে! তাই তো বলি যা কিছু মোর দান গ্রহণ করেই করবে মূল্যবান আপন হৃদয় দিয়ে।
তুমি এ মনের সৃষ্টি, তাই মনোমাঝে এমন সহজে তব প্রতিমা বিরাজে। যখন তোমারে হেরি জগতের তীরে মনে হয় মন হতে এসেছ বাহিরে। যখন তোমারে দেখি মনোমাঝখানে মনে হয় জন্ম-জন্ম আছ এ পরানে। মানসীরূপিণী তুমি, তাই দিশে দিশে সকল সৌন্দর্যসাথে যাও মিলে মিশে। চন্দ্রে তব মুখশোভা, মুখে চন্দ্রোদয়, নিখিলের সাথে তব নিত্য বিনিময়। মনের অনন্ত তৃষ্ণা মরে বিশ্ব ঘুরি, মিশায় তোমার সাথে নিখিল মাধুরী। তার পরে মনগড়া দেবতারে মন ইহকাল পরকাল করে সমর্পণ।