৫৯
কুয়াশা যদি বা ফেলে পরাভবে ঘিরি
তবু নিজমহিমায় অবিচল গিরি॥  

বিদ্রূপবাণ উদ্যত করি
                     এসেছিল সংসার,
                     নাগাল পেল না তার।
           আপনার মাঝে আছে সে অনেক দূরে।
                     শান্ত মনের স্তব্ধ গহনে
                       ধ্যানের বীণার সুরে
                                 রেখেছে তাহারে ঘিরি।
           হৃদয়ে তাহার উচ্চ উদয়গিরি।
                       সেথা অন্তরলোকে
           সিন্ধুপারের প্রভাত-আলোক                
                       জ্বলিছে তাহার চোখে।
           সে আলোকে এই বিশ্বের রূপ
                       অপরূপ হয়ে জাগে।
                       তার দৃষ্টির আগে
                 বিরূপ বিকল খণ্ডিত যত-কিছু
                       বিদ্রোহ ছেড়ে বিরাটের পায়ে
                               করে এসে মাথা নিচু।
      সিন্ধুতীরের শৈলতটের 'পরে
           হিংসামুখর তরঙ্গদল
                 যতই আঘাত করে ,--
           কঠোর বিরোধ রচি তুলে তত
                 অতলের মহালীলা,
           ফেনিল নৃত্যে দামামা বাজায় শিলা।
                 হে শান্ত, তুমি অশান্তিরেই
                       মহিমা করিছ দান।
           গর্জন এসে তোমার মাঝারে
                       হল ভৈরব গান।
           তোমার চোখের গভীর আলোকে
                       অপমান হল গত
           সন্ধ্যামেঘের তিমিররন্ধ্রে
                       দীপ্ত রবির মতো।

অচিন্ত্য এ ব্রহ্মান্ডের লোকলোকান্তরে
অনন্ত শাসন যাঁর চিরকালতরে
প্রত্যেক অণুর মাঝে হতেছে প্রকাশ,
যুগে যুগে মানবের মহা ইতিহাস
বহিয়া চলেছে সদা ধরণীর 'পর
যাঁর তর্জনীর ছায়া, সেই মহেশ্বর
আমার চৈতন্যমাঝে প্রত্যেক পলকে
করিছেন অধিষ্ঠান; তাঁহারি আলোকে
চক্ষু মোর দৃষ্টিদীপ্ত, তাঁহারি পরশে
অঙ্গ মোর স্পর্শময় প্রাণের হরষে।
যেথা চলি, যেথা রহি, যেথা বাস করি
প্রত্যেক নিশ্বাসে মোর এই কথা স্মরি
আপন-মস্তক-'পরে সর্বদা সর্বথা
বহিব তাঁহার গর্ব, নিজের নম্রতা।