কলিকাতা, ১৯ আষাঢ়, ১৩১৩


 

সার্থক নৈরাশ্য (sarthok noirashyo)


  তখন ছিল যে গভীর রাত্রিবেলা,

              নিদ্রা    ছিল না চোখের কোণে;

  আষাঢ়-আঁধারে আকাশে মেঘের মেলা,

              কোথাও   বাতাস ছিল না বনে।

  বিরাম ছিল না তপ্ত শয়নতলে,

              কাঙাল  ছিল বসে মোর প্রাণে;

  দু হাত বাড়ায়ে কী জানি কী কথা বলে,

              কাঙাল  চায় যে কারে কে জানে।

 

  দিল আঁধারের সকল র#ধ্র ভরি

              তাহার  ক্ষুব্ধ ক্ষুধিত ভাষা;

  মনে হল যেন বর্ষার বিভাবরী

              আজি   হারালো রে সব আশা।

  অনাথ জগতে যেন এক সুখ আছে,

              তাও    জগৎ খুঁজে না মেলে;

  আঁধারে কখন সে এসে যায় গো পাছে

              বুকে    রেখেছে আগুন জ্বেলে।

  'দাও দাও' বলে হাঁকিনু সুদূরে চেয়ে,

              আমি    ফুকারি ডাকিনু কারে।

  এমন সময়ে অরুণতরণী বেয়ে

              প্রভাত  নামিল গগনপারে।

 

পেয়েছি পেয়েছি, নিবাও নিশার বাতি,

              আমি    কিছুই চাহি নে আর।

  ওগো নিষ্ঠুর শূন্য নীরব রাতি,

              তোমায়    করি গো নমস্কার।

  বাঁচালে বাঁচালে-- বধির আঁধার তব

              আমায়  পৌঁছিয়া দিল কূলে।

  বঞ্চিত করি যা দিয়েছ কারে কব,

              আমায়  জগতে দিয়েছ তুলে।

 

              ধন্য প্রভাতরবি,

         আমার    লহো গো নম#কার।

              ধন্য মধুর বায়ু,

         তোমায়   নমি হে বারম্বার।

              ওগো প্রভাতের পাখি,

         তোমার   কলনির্মল স্বরে

              আমার প্রণাম লয়ে

         বিছাও     দূর গগনের 'পরে।

              ধন্য ধরার মাটি,

         জগতে    ধন্য জীবের মেলা।

              ধুলায় নমিয়া মাথা

         ধন্য          আমি এ প্রভাতবেলা।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •