বিরহীর পত্র (birohir parto)
হয় কি না হয় দেখা, ফিরি কি না ফিরি,
দূরে গেলে এই মনে হয়;
দুজনার মাঝখানে অন্ধকারে ঘিরি
জেগে থাকে সতত সংশয়।
এত লোক, এত জন, এত পথ, গলি,
এমন বিপুল এ সংসার--
ভয়ে ভয়ে হাতে হাতে বেঁধে বেঁধে চলি
ছাড়া পেলে কে আর কাহার।
তারায় তারায় সদা থাকে চোখে চোখে
অন্ধকারে অসীম গগনে।
ভয়ে ভয়ে অনিমেষে কম্পিত আলোকে
বাঁধা থাকে নয়নে নয়নে।
চৌদিকে অটল স্তব্ধ সুগভীর রাত্রি,
তরুহীন মরুময় ব্যোম--
মুখে মুখে চেয়ে তাই চলে যত যাত্রী
চলে গ্রহ রবি তারা সোম।
নিমেষের অন্তরালে কী আছে কে জানে,
নিমেষে অসীম পড়ে ঢাকা--
অন্ধ কাল তুরঙ্গম রাশ নাহি মানে
বেগে ধায় অদৃষ্টের চাকা।
কাছে কাছে পাছে পাছে চলিবারে চাই,
জেগে জেগে দিতেছি পাহারা,
একটু এসেছে ঘুম--চমকি তাকাই
গেছে চলে কোথায় কাহারা!
ছাড়িয়ে চলিয়া গেলে কাঁদি তাই একা
বিরহের সমুদ্রের তীরে।
অনন্তের মাঝখানে দুদন্ডের দেখা
তাও কেন রাহু এসে ঘিরে।
মৃত্যু যেন মাঝে মাঝে দেখা দিয়ে যায়,
পাঠায় সে বিরহের চর।
সকলেই চলে যাবে, পড়ে রবে হায়
ধরণীর শূন্য খেলাঘর।
গ্রহ তারা ধূমকেতু কত রবি শশী,
শূন্য ঘেরি জগতের ভিড়,
তারি মাঝে যদি ভাঙে, যদি যায় খসি
আমাদের দুদন্ডের নীড়--
কোথায় কে হারাইব--কোন্ রাত্রিবেলা
কে কোথায় হইব অতিথি।
তখন কি মনে রবে দুদিনের খেলা,
দরশের পরশের স্মৃতি!
তাই মনে ক'রে কি রে চোখে জল আসে
একটুকু চোখের আড়ালে!
প্রাণ যারে প্রাণের অধিক ভালোবাসে
সেও কি রবে না এক কালে!
আশা নিয়ে এ কি শুধু খেলাই কেবল--
সুখ দুঃখ মনের বিকার!
ভালোবাসা কাঁদে, হাসে, মোছে অশ্রুজল,
চায়, পায়, হারায় আবার।