লাঙল কাঁদিয়া বলে ছাড়ি দিয়ে গলা, তুই কোথা হতে এলি ওরে ভাই ফলা? যেদিন আমার সাথে তোরে দিল জুড়ি সেই দিন হতে মোর মাথা-খোঁড়াখুঁড়ি। ফলা কহে, ভালো ভাই, আমি যাই খ'সে, দেখি তুমি কী আরামে থাক ঘরে ব'সে। ফলাখানা টুটে গেল, হল্খানা তাই খুশি হয়ে পড়ে থাকে, কোনো কর্ম নাই। চাষা বলে, এ আপদ আর কেন রাখা, এরে আজ চালা করে ধরাইব আখা। হল্ বলে, ওরে ফলা, আয় ভাই ধেয়ে-- খাটুনি যে ভালো ছিল জ্বলুনির চেয়ে।
শেষের অবগাহন সাঙ্গ করো কবি, প্রদোষের নির্মলতিমিরতলে। ভৃতি তব সেবার শ্রমের সংসার যা দিয়েছিল আঁকড়িয়া রাখিয়ো না বুকে; এক প্রহরের মূল্য আরেক প্রহরে ফিরে নিতে কুণ্ঠা কভু নাহি তার; বাহির-দ্বারের যে দক্ষিণা অন্তরে নিয়ো না টেনে; এ মুদ্রার স্বর্ণলেপটুকু দিনে দিনে হাতে হাতে ক্ষয় হয়ে লুপ্ত হয়ে যাবে, উঠিবে কলঙ্কলেখা ফুটি। ফল যদি ফলায়েছ বনে, মাটিতে ফেলিয়া তার হোক অবসান। সাঙ্গ হল ফুল ফোটাবার ঋতু, সেই সঙ্গে সাঙ্গ হয়ে যাক লোকমুখবচনের নিশ্বাসপবনে দোল খাওয়া। পুরস্কারপ্রত্যাশায় পিছু ফিরে বাড়ায়ো না হাত যেতে যেতে; জীবনে যা-কিছু তব সত্য ছিল দান মূল্য চেয়ে অপমান করিয়ো না তারে; এ জনমে শেষ ত্যাগ হোক তব ভিক্ষাঝুলি, নববসন্তের আগমনে অরণ্যের শেষ শুষ্ক পত্রগুচ্ছ যথা। যার লাগি আশাপথ চেয়ে আছ সে নহে সম্মান, সে যে নবজীবনের অরুণের আহ্বান-ইঙ্গিত, নবজাগ্রতের ভালে প্রভাতের জ্যোতির তিলক।